বিভিন্ন পুরাণে যৌনতা - ৪/১৪

সৃষ্টির শুরু থেকেই ‘ক্ষুধা’ বোধটির সাথে মানুষের পরিচয়। এ ক্ষুধা প্রাণ বাঁচানোর এবং প্রাণ সৃষ্টির। এ দুইয়ের মাঝে প্রাণ বাঁচানোর ক্ষুধাবোধ একেবারেই স্বাভাবিক ও সবার জন্য সমান। একই খাবার সবাই ভাগ করে নিয়ে খেতেও সেখানে কোন অসুবিধা নেই। তাই এ বোধকে নিয়ে কোন রূপক, উপমা কিংবা ভনিতার আশ্রয়ের প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু যৌন ক্ষুধাটির রকমসকম আলাদা – সবাই মিলে ভাগ করে সেটা খাওয়া যায় না; বাছবিচার, পছন্দ-অপছন্দ, আড়াল ইত্যাদি অনেক কিছুই জড়িত এর সাথে। ফলে এ বোধের সাথে লজ্জা-দ্বিধা, আবার সময়ে শক্তি-ছলনা প্রভৃতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এর কারণে সূর্যের আলোর রাতের আঁধারকে ভেদ করা, কিংবা আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানিতে মাটির উর্বর ও ফলবতী হওয়া – এরকম আপাতসাধারণ ব্যাপার স্যাপারগুলোও লিঙ্গ বিভাজনের আওতায় এসে যায়। ফলে সূর্যের আলোর রাতের আঁধারকে ভেদ করার ক্ষমতা এবং আকাশের বৃষ্টিতে ভুমিকে সিক্ত করার ক্ষমতা বীর্যবান পুংলিঙ্গের সম্মান পায় ; পক্ষান্তরে আলোর কিরণবিদ্ধ রাত এবং বৃষ্টিসিক্ত ফলবতী ভূমি স্...



বিভিন্ন পুরাণে যৌনতা - ৩/১৪

পৃথিবীর আদিমতম ধর্মগুলোকে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তবে সবচে’ প্রাচীন যে দেবতা আর পূজার অস্তিত্ব সকল ধর্মেই পাওয়া যায়, তা হল সূর্য দেবতা এবং যৌনপূজা। দেবতাদের নাম ছিল ভিন্ন, স্বভাবে এক। যেমনঃ হিন্দুশাস্ত্রে সূর্যদেব (Surya) হলেন আর্যদের উপাস্য দেবতা, গ্রিকদের সূর্য দেবতা হেলিওস (Helios) যিনি কিনা আরেক সূর্যদেবতা এপোলোর বহু আগে থেকেই ছিলেন, মিশরীয়দের সূর্যদেব রা (Ra / Re), ইনকাদের ইন্টি (Inti), অ্যাজটেকদের টোনাতিউ (Tonatiuh), মেসোপটেমিয়ায় উতু বা শামাস (Utu / Shamash), পার্শিয়ান বা ইরানীদের ছিলেন মিথরাস(Mithras) ইত্যাদি। নর্স, আফ্রিকান ইত্যাদি পৌরাণিক ইতিহাস আগেরগুলোর তুলনায় বেশ পরের বলে কথা এখানে আপাতত উল্লেখ করলাম না। অন্যান্য দেবদেবী বা পূজায় জাতি-দেশ-পরিবেশ-সংস্কৃতি ভেদে ভিন্নতা থাকলেও যেহেতু একই সুর্য আর তার তেজ সবার মাথার উপরে ছিল, তাই সূর্যের পূজা সব ধর্মেই পাওয়া যায় আদি পূজা হিসেবে। যৌনতার ক্ষেত্রেও একই ব্যাখ্যা কার্যকর। মরুভূমির বা বরফাচ্ছাদিত এলাকার মানুষ কৃষিকে আশ্রয় করে বেঁ...



বিভিন্ন পুরাণে যৌনতা - ২/১৪

বেদজ্ঞ মহামুনি উতথ্যের (মতান্তরে উশিজ) স্ত্রী অপরূপ সুন্দরী মমতা আর ছোটভাই দেব-পুরোহিত বৃহস্পতি। একদিন বড় ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে বৃহস্পতি কামাতুর হয়ে গর্ভবতী বৌদির সঙ্গ কামনা করে বসলেন। মমতা তাঁর দেবরকে সাধ্যমত বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বৃহস্পতির কামচেতনা তখন তুঙ্গে। মমতা যখন পরাজিত এবং বৃহস্পতির চরম মূহুর্ত সমাগত, তখন বাধা দিল গর্ভস্থ সন্তান। বলে উঠল, ”হে পিতৃব্য, আপনি পৃথিবীতে ক্ষমতাবান হতে পারেন, কিন্তু এই জঠরে আমি পূর্ব হতেই উপস্থিত। এখানে আপনার বীর্য ধারণের স্থান নেই। অতএব, আপনার বীর্য সংবরণ করুন।“ এই বলে সে নিজের পা দ্বারা ভেতর থেকে বীর্য প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়। ছোট মুখে বড় কথা এমনিতেই সহ্য হয় না, আর এতো না-হওয়া মুখ। তার উপর বৃহস্পতির তখন চরম অবস্থা! এ অবস্থায় সংযম পালন? ক্ষেপে গিয়ে বৃহস্পতি শাপ দিলেন অনাগত সন্তানকে, ” আমাকে তুই বাধা দিলি? যা তুই দীর্ঘ তমোরাশির মধ্যে প্রবেশ করবি।“ যথাসময়ে সে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় এবং ‘দীর্ঘ তমোরাশি’ অর্থাৎ চি...



বিভিন্ন পুরাণে যৌনতা - ১/১৪

প্রাচীন সভ্যতা ও ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাঁদের অধিকাংশের মতে খ্রিষ্টের জন্মের হাজার বছরেরও আগে থেকে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করেছিল। ঐ প্রাচীন সময় থেকেই এ সংস্কৃতিতে মানুষের জীবনের মূল চারটি লক্ষ্যকে নির্ধারণ করে দেয়া হয় – ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। আর এ চারটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য জীবনের চারটি অবস্থানও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল – ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। ব্রহ্মচর্য আশ্রমে গুরুর আশ্রয়ে থেকে ধর্ম ও চরিত্র গঠনের ছাত্রজীবন অধ্যায় শেষ করার পরপরই একজনকে গার্হস্থ্য বা দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে হোত। অর্থাৎ, যৌবনে কাম-শিক্ষালাভ ছিল বাধ্যতামূলক। কাম বলতে আমরা যদিও আজ যৌনতাকেই বুঝিয়ে থাকি। কিন্তু তখন কাম ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এমনকি ধর্মের ব্যাখ্যাতেও। মূলত কামই সৃষ্টি, আর সৃষ্টির জন্যই কাম প্রয়োজন। মৎস্যপুরাণে আছে, ব্রহ্মা যখন বেদাভ্যাসে রত ছিলেন, তখন তাঁর দশজন মানস পুত্র জন্মায়। মানসপুত্র বলেই এরা সবাই অযোনিজ এবং মাতৃহীন। ফলে কামের উদ্ভব ত...



পদ্মাপুরাণ বা মনসামঙ্গল পর্ব (৩য় ও শেষ অংশ)

চৌদ্দ ডিঙ্গা আর মনপবনের নাও ‘মধুকর’ নিয়ে লঙ্কার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন চাঁদ সওদাগর। যাত্রাপথে সাগরের এক কূলে দেখা গেল হরগৌরীর বাসর। সাধারণ মাঝিমাল্লার কাছে হরগৌরী ততটা আরাধ্য নয় যে নৌবহর থামিয়ে পূজা নিবেদন করতে হবে। কিন্তু শিব-ভক্ত চাঁদের কাছে সে মন্দির পরমাশ্রয়। তাই ডিঙ্গা ভিড়িয়ে চাঁদ সেখানে পূজা দিলেন। আবার আরেকদিন দেখা দিল মনসার জাগ্রত মন্দির। জলেজংগলে বাসকারী শুদ্রজাত মাঝিদের কাছে ‘মনসা দেবী’ ভক্তির নাম। চাঁদ সেখানেও ডিঙ্গা ভেড়ালেন, কিন্তু পূজার জন্য নয় ; বরং সে মন্দির ভেঙ্গে দিয়ে এলেন। মাঝিমাল্লারা ব্যাপারটাকে ভালভাবে নিল না। কিন্তু চাঁদ নির্বিকার! এভাবে কূলহীন সাগরে ভাসতে ভাসতে ডিঙ্গি ভিড়ল একদিন সিংহল কূলে। লঙ্কারাজ চন্দ্রকেতু চাঁদ বণিকের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে রাজকোষের অর্ধেক ধনরত্ন তাঁকে উপহার দিয়ে দিলেন। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চাঁদ বণিক আবার সাগরে ভাসলেন। এভাবে একদিন পৌঁছে গেলেন লঙ্কাপুরীতে। রাক্ষসরাজ্য লঙ্কাপুরীতে সাড়া পড়ে গেল। অশান্ত সাগরপথের বাধা পেরিয়ে সহজে...



পদ্মাপুরাণ বা মনসামঙ্গল পর্ব (২য় অংশ)

পদ্মশংঙ্খ নামে এক অতি তেজস্বী মুনি ছিলেন। একদিন ঝড়ে তাঁর আশ্রমের কাছে এক গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ল। সে ডালের কোটরে ছিল দুটো পাখির ডিম। মুনি ডিমদুটো অক্ষত দেখতে পেয়ে তার যত্ন নিতে লাগলেন। কিছুদিন পরে সে ডিম দুটি থেকে দুটো খুব সুন্দর পাখির বাচ্চা বের হল। মুনি পরম মমতায় তাদের বড় করতে লাগলেন। এভাবে ধীরে ধীরে সে আশ্রমে পাখি দুটি থেকে বংশ বৃদ্ধি পেল। পুরো আশ্রম সবসময় কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকত। মুনিও সন্তানস্নেহে তাদেরকে পালন করতেন। একদিন মুনি কোন এক কাজে গেছেন বাইরে। রাতে আর আশ্রমে ফিরতে পারলেন না। সন্তানতুল্য পাখিগুলোর চিন্তায় কোনমতে রাতটা পার করেই সকালে এসে দেখেন পুরো আশ্রমে পাখির কোন চিহ্ন নেই, আওয়াজ নেই! ধ্যানে বসে জানতে পারলেন একদল সাপ এসে রাতে সবপাখিগুলোকে খেয়ে গেছে। সন্তান হারানোর শোক বুকে নিয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন,”এজন্মে আমার পাখিগুলোকে রক্ষা করতে পারলাম না। পরজন্মে আমি যেন নাগহন্তা হয়ে জন্মগ্রহণ করি। সকল সাপ যেন হয় আমার শত্রু”। এই বলে তিনি দেহত্যাগ করলেন। সেই মুনিই পরজন্মে...



মায়ান মিথোলজিঃ কিভাবে উদ্ভব হলো মানুষের

মানুষের উদ্ভব হলো কোত্থেকে বা কিভাবে? ধর্মগ্রন্থ থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞান- সবখানেই এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ কারণেই পৃথিবীর প্রতিটা বিশ্বাসেই সৃষ্টিতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে আলাদাভাবে এবং বিশেষ গুরুত্ব সহকারে। আজ আমরা জানবো আদিম পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধশালী ও সভ্য জাতি মায়ানদের এ ব্যাপারে বিশ্বাস কি ছিলো সেই সম্পর্কে। খ্রিষ্টের জন্মেরও ২ হাজার বছর আগে উদ্ভব হয়েছিলো মায়ান সভ্যতার। বর্তমান ইয়ুচাতান উপদ্বীপে (মেক্সিকোর তিনটি প্রদেশ আর গুয়াতেমালা ও বেলিজের কিছু অংশ) ছিলো এদের বসবাস। যদিও ঐ এলাকায় উদ্ভূত অন্যান্য সভ্যতার সাথে এটার অনেক কিছুই মিলে যায়, তবুও মায়ানদের আছে বেশ কিছু স্বতন্ত্র কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। চিত্রাঙ্কন, বাসা নির্মাণ, জ্যোতির্বিদ্যা এমনকি লিখিত ভাষাতেও দখল ছিলো তাদের। বিখ্যাত মায়ান ক্যালেন্ডারের নাম সবারই শুনে থাকার কথা। যদিও বলা হয় ভাষা আর ক্যালেন্ডার মায়ানদের নিজস্ব উদ্ভাবন নয়! সে যাই হোক! মায়ানদের যাবতীয় মিথ আর ঐতিহাসিক তথ্য যে বইতে একত্রে সংকলন করা হয়েছে, তার ...



পদ্মাপুরাণ বা মনসামঙ্গল পর্ব (১ম অংশ)

পুরাণের এই সংক্ষিপ্ত পরিচিতির আসরে শুরু থেকেই বারবার ধারণা দেয়ার চেষ্টা চলছে যে, ভারতীয় পুরাণগুলো গল্পকাহিনির ভাণ্ডার। এই ‘গল্পকাহিনি’ শব্দটা কিন্তু ব্যবহার করছি প্রচলিত এবং পাঠকের কাছে আদরণীয় শব্দ হিসেবেই। মূলত পুরাণের কাহিনিগুলো হল আখ্যান আর উপাখ্যান। এখন আমাদের একটু সাধারণ ধারণা থাকা দরকার আখ্যান-উপাখ্যান-উপকথা ইত্যাদি বিষয়ে। কারণ, প্রায়ই এগুলোকে এক কাতারের বলে মনে হয়। ব্যাকরণসম্মত ও ভারভারিক্কী তাবত সংজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে মোটামুটি সরলভাবে আমরা এটা বলতে পারি যে, আখ্যান মানে হল দুই কিংবা তার চেয়ে বেশি শ্রুত (ঋষিদের মুখ থেকে শোনা) মূল বিষয়ের বর্ণনা। আর এই আখ্যানের ছোটছোট অংশ থেকে যখন আরো ডালপালা ছড়িয়ে নতুন নতুন কাহিনির সৃষ্টি হয়, সেগুলো হল উপাখ্যান। অর্থাৎ, একটি আখ্যান থেকে অসংখ্য উপাখ্যানের সৃষ্টি হতে পারে। এই উপাখ্যান আবার দুই রকমের – লৌকিক ও অলৌকিক। যেটা পৃথিবীতে ঘটে বা ঘটার মতন, সেটা লৌকিক ; আর যেটা স্বর্গলোকে ঘটে বা ঘটার মত, সেটাই অলৌকিক। কখনো কখনো উপাখ্যানে...



বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে পুরাণের প্রভাব (শেষ অংশ)

বাংলা বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষর ধরে ধরে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পৌরাণিক শব্দগুলোর কোনটি সরাসরি পুরাণ থেকে এসেছে; কোনটি রামায়ন-মহাভারত হয়ে, কোনটি আবার বেদ-উপনিষদের ব্যাখ্যাদানের প্রসঙ্গ থেকে এসব ছোট ছোট ব্যবহারিক শব্দের বিশাল পৌরাণিক ভিত প্রস্তুত করেছে।  অকালকুষ্মাণ্ডঃ  ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারী দু’বছর ধরে গর্ভবতী, অথচ সন্তানের জন্ম হচ্ছে না। ওদিকে পাণ্ডু একেএকে পাঁচ পুত্রের পিতা হয়ে গেছেন। অপুত্রক ধৃতরাষ্ট্রের সিংহাসন হাতছাড়া হয় অবস্থা। দুঃখে ক্ষোভে গান্ধারী নিজেই নিজের গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেললেন। গর্ভপাতের ফলে একটি কুষ্মাণ্ড বা কুমড়া আকৃতির মাংসপিণ্ড বের হয়ে এল। আর মুখে মুখে প্রচার হয়ে গেল গান্ধারী অকালে এক কুষ্মাণ্ড অর্থাৎ কুমড়া প্রসব করেছেন। সেখান থেকেই এসেছে ‘অকালকুষ্মাণ্ড’ শব্দটি। অগস্ত্য যাত্রাঃ  বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি অগস্ত্যের নামে এই ‘অগস্ত্য যাত্রা’। দেবলোকের অপ্সরা যজ্ঞমিত্রকে দেখে সুর্যের এবং উর্বশীকে দেখে বরুণের ...



বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে পুরাণের প্রভাব (১ম অংশ)

প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে, পুরাণ রচয়িতা বলে যিনি কথিত, সেই ব্যাসদেবের পুরাণের ভাষা কিন্তু বাংলা নয়। এক সহস্র শতাব্দী ধরে লোকমুখে প্রচারিত এবং পরবর্তীতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সমসাময়িক (খ্রিস্টীয় ৩য় - ৫ম শতাব্দী) সময়ে সঙ্কলিত হতে থাকা এ পুরাণের ভাষাও বাংলা ছিল না। এমনকি কোন কোন পুরাণের জন্মস্থান বঙ্গদেশ বলে প্রমাণিত হলেও সে রচনার ভাষাও আমাদের এখনকার বাংলা নয়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেই যায় যে, আমাদের বাংলা শব্দভাণ্ডারে পৌরাণিক শব্দমালা এলো কী করে ? উত্তরটা ঐতিহাসিক। আমাদের বর্তমান বাংলার আদি রূপ খুঁজতে ধীরে ধীরে পিছুতে লাগলে গৌড় অপভ্রংশ, মাগধি অপভ্রংশ, মাগধি প্রাকৃত ইত্যাদির পথ বেয়ে শেষ পর্যন্ত যে আাদি মাথায় গিয়ে শেষ হয়, তা বৈদিক সংস্কৃত ভাষা। অতএব, পৌরাণিক শব্দের আগমন না থাকাটাই ছিল অস্বাভাবিক। কাজেই সোজা কথায়, আমাদের ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, অর্ধতৎসম শব্দের অবস্থানের কারণে এবং ঐতিহ্যগতভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বলয়ে থাকার কারণে এ পৌরাণিক শব্দগুলো জায়গা করে নিয়েছে আমাদের অজান্তেই (উৎস ...