ভাষার বংশগতিবিদ্যা - লাইল জেনকিন্স (১)


সারসংক্ষেপ: [ভাষার বংশগতিবিদ্যা অধ্যয়নের আওতায় ব্যাকরণের চমস্কীয় নিয়মাদিকে, যেমন কাঠামো-নির্ভরতার শর্ত ও এ-ওভার-এ শর্ত-কে, ধ্রুপদী বংশগতিবিদ্যার মেন্ডেলীয় নীতির সমতুল হিসেবে দেখা যেতে পারে। চমস্কির নিয়মাদি ও মেন্ডেলের সূত্রাদি, উভয়ের ক্ষেত্রে রীতিসিদ্ধ বংশগতিবিদ্যক নীতিমালাকে স্বীকৃতসত্য হিসেবে ধরা যেতে পারে যা সেখানে কার্যকর ভৌত কার্যপদ্ধতির বিমূর্তায়ন করে এবং উভয় ক্ষেত্রে প্রাপ্ত আপাত-বিরুদ্ধ উদাহরণ অন্তর্নিহিত আরো জটিল বংশগতিবিদ্যক সংগঠনকে প্রতিবিম্বিত করে।]

১. ভূমিকা

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কিছু বংশগতিবিজ্ঞানী ও আণবিক-জীববিজ্ঞানী বংশগতিবিদ্যার কাঠামোর আওতায় আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্বকে দেখার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। জে. মনোড  চমস্কীয় ধারার সঞ্জননী ব্যাকরণ সম্পর্কিত আলোচনায় মন্তব্য করেন- যুক্তিসঙ্গত জীববৈজ্ঞানিক অনুমানগুলিকে আমলে নিলে এটা বলা আশ্চর্যকর মনে হবে না যে,

“... মস্তিষ্কের এপিজেনেটিক বিকাশের সময়ে যে ভাষিক সক্ষমতা প্রকাশিত হয়, সেটি বর্তমানে ‘মানব প্রকৃতি’-র অংশ, যা বংশগতীয় সংকেতের (জেনেটিক কোডের) বিশেষায়িত ভাষায় বংশাণুসমগ্রের (জিনোমের) মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।”

মনোডের সহকর্মী এফ. জ্যাকব আরো একটি ধারণাকে বাস্তবভিত্তিক মনে করেন:

“আধুনিক ভাষাতত্ত্বের আলোকে মনে করা হয় যে, সব ভাষার জন্য সাধারণ, এমন এক ভিত্তি ব্যাকরণের অস্তিত্ব আছে; এই সমরূপতা মস্তিষ্কের সংগঠনের উপর বংশগতির দ্বারা আরোপিত এক কাঠামোকে উম্মোচিত করে... মানব প্রকৃতির বহু বৈশিষ্ট্যকে এই কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, যেটি ২৩ জোড়া ক্রোমোজমের মাধ্যমে সূচিত হয়ে থাকে এবং মানব প্রজাতির এজমালি উত্তরাধিকারের বুনিয়াদ সৃষ্টি করে থাকে।”

“আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ” বিষয়ে আলোচনার সময়ে এস. ই. লুইরা বলেন:

“জীববিজ্ঞানীরা যখন দেখেন যে ভাষার কাঠামো, ও সেই সাথে লজিকাল স্ট্রাকচারের জন্যও মানব মস্তিষ্কের নেটওয়ার্কে কিছু সংযোগের বিন্যাস কাজ করে যা বংশগতীয়ভাবে নির্ধারিত হয়, তখন তাদের কাছে বিষয়টি বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হয়। এই সংযোগ-বিন্যাসগুলি জীবন নির্বাহের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়।”

সর্বশেষ, এম. এইজেন ও আর. উয়িঙ্কলার  MolekuZargenetik und generative Grammatik (আণবিক বংশগতিবিজ্ঞান ও সঞ্জননী ব্যাকরণ) শিরোনামযুক্ত পরিচ্ছেদে জিন-এর স্তরে সঞ্জননী ব্যাকরণ ও অন্যান্য তথ্য পদ্ধতির মধ্যে মিল দেখতে পান। ইতোপূর্বে ভাষাতাত্ত্বিক আর. জ্যাকবসন  ও র‌্যাটনার  সহ আরো কিছু সোভিয়েত জীববিজ্ঞানী এই ধারণাটি উপস্থাপন করেছেন। তারা চমস্কির সংবর্তনী সঞ্জননী ব্যাকরণ ও বংশগতীয় সংকেতের মধ্যে বিস্তারিত তুলনা করে দেখিয়েছেন।

এই নিবন্ধে আমরা যা আলোচনা করব সেটি হলো- সঞ্জননী বৈয়াকরণদের প্রস্তুতকৃত সার্বজনীন ব্যাকরণকে ধ্রুপদী বংশগতিবিদ্যার নিয়মাদির সাথে তুলনা করার মাধ্যমে (ভাষার জন্য) মানব মনের মেন্ডেলীয় সূত্রাদির ব্যাখ্যা করা। বিষয়টি এমন, চমস্কির নিয়মাদি (পরিচ্ছেদ ২ বা ‘চমস্কির নিয়মাদি’ দেখুন) ও সঞ্জননী ব্যাকরণকে অধ্যয়ন করা মূলত প্রথাগতভাবে বিভিন্ন প্রাণসত্তার বংশগতিবিদ্যা অধ্যয়ন করার মতো- মেন্ডেলের সূত্রাদি যেমন উদ্ভিদের অধ্যয়নে অথবা যেমন প্রাণির আচরণের অধ্যয়নে লরেঞ্জের স্বভাবজ ছক (angeborenes Schema ev innate schematism) ব্যবহৃত হয়, বিষয়টি অনেকটা তেমন।

২. চমস্কির নিয়মাদি 

এই অংশে আমরা ইংরেজি ব্যাকরণ থেকে কিছু উদাহরণ দেখব, যেখানে প্রতিভাত হয় যে (১) মানবভাষার বাক্যতত্ত্বের মৌলিক জেনেটিক একক হচ্ছে শব্দবর্গ (কাঠামো-নির্ভরতার শর্ত), (২) বাক্যতত্ত্ব ও লজিকাল কাঠামোর বিভিন্ন নিয়ম পালন করতে গিয়ে কিছু শব্দবর্গকে অন্য শব্দবর্গের উপর আধিপত্য করতে দেখা যায় (এ-ওভার-এ শর্ত), এবং (৩) প্রাকৃতিক ভাষায় শব্দবর্গের কেবল কিছু নির্দিষ্ট মিশ্রণ ও বিন্যাস অনুমোদিত (অধঃস্থনতা বা ইংরেজিতে সাবজেসেন্সি এবং প্রতিজ্ঞা দ্বীপ-নির্দিষ্ট কর্তার শর্ত (বা ইংরেজিতে প্রোপোজিশন আইল্যান্ড-স্পেসিফিক সাবজেক্ট কনডিশন)। বরাত দেওয়ার সুবিধার জন্য আমরা শর্তগুলিকে চমস্কির নিয়মাদি হিসেবে উল্লেখ করব। একই সাথে, আমরা যুক্তি দেখাবো যে মানব প্রজাতি এগুলিকে শেখার মাধ্যমে অর্জন করে, এমনটা নয়; এবং সে কারণে বলা যায়, মানব শিশু প্রাকৃতিক ভাষা শেখার সময়ে এগুলিকে তার ভেতরে কর্মরত জেনেটিক প্রোগ্রামের মতো ব্যবহার করে। পরিচ্ছেদ ৩ (বা মেন্ডেলের সূত্রাদি)-তে আমরা দেখব যে চমস্কির নিয়মাদি (এবং সার্বজনীন ব্যাকরণের অন্যান্য নীতিসমূহ) মূলত ধ্রুপদী বংশগতিবিদ্যায় ব্যবহৃত মেন্ডেলের সূত্রাদির প্রতিরূপ। 

একজন মানব শিশু কিভাবে সাধারণ বাক্যকে প্রশ্নে রূপান্তরিত করে, সে বিষয়টি যদি কোনো মঙ্গলগ্রহবাসী বিজ্ঞানী (এখানে আমরা কোনো বংশগতিবিজ্ঞানীর কথা ধরি) পরখ করে দেখেন, তাহলে তিনি বিষয়টি কিভাবে সমাধান করবেন সে বিষয়ে চমস্কি  নীচের বাক্যের মতো কিছু উদাহরণ উপস্থাপন করেছেন-

(1) The man is talI./Is the man tall?
(2) The book is on the table./Is the book on the table?

উপরের বাক্যদুটিকে নীচে উপস্থাপিত উপপ্রমেয় ১ এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়।

উপপ্রমেয় ১

শিশুরা একটি সাধারণ বাক্যকে প্রশ্নে রূপান্তরিত করার সময় বাক্যটিকে শুরু থেকে প্রক্রিয়া করা শুরু করে। শিশুটি বাক্যের প্রথম “is” (“will”  ইত্যাদি)-এর কাছে পৌঁছলে, সেই ক্রিয়াটিকে প্রশ্নবোধক বাক্যের শুরুতে বসায়। এই নিয়ম অনুযায়ী শিশুটি সঠিকভাবে বাক্য (১) ও (২) রূপান্তরিত করতে পারে।

উপপ্রমেয় ১ বেশ সরল এবং এর মাধ্যমে বহু সঠিক অনুমান করা সম্ভব হয়; কিন্তু এটি কখনো কখনো ভুলও হয়, যা নীচের বাক্যগুলি থেকে বোঝা যাবে-

(3) The man who is tall is in the room.
*Is the man who tall is in the room?
(4) The man who is tall is in the room.
Is the man who is tall in the room?

উপপ্রমেয় ১ এর সাহায্যে আমাদের মঙ্গলগ্রহবাসী বন্ধু বা বংশগতিবিজ্ঞানীর অনুমান করা (৩) নং বাক্যটি ব্যকরণসম্মত হচ্ছে না। তবে শিশুদেরকে মূল ঘোষণাসূচক বাক্যটি দিলে তারা কোনো ভুল না করে (৪) নং প্রশ্নবোধক বাক্যটি তৈরি করে। মজার বিষয় হলো, ইংরেজিভাষী শিশুরা সাধারণত (৩) নং প্রশ্নসূচক বাক্যটি কখনো বলে না। এখন মঙ্গলগ্রহবাসী বিজ্ঞানী এই সমস্যার সমাধান করার উদ্দেশ্যে উপপ্রমেয় ১-কে পরিবর্তন করে বেশ জটিল উপপ্রমেয় ২ তৈরি করবেন।

উপপ্রমেয় ২

শিশুরা বিবৃতিবাচক বাক্যকে প্রথমে বিমূর্তায়িত শব্দবর্গে ভেঙে ফেলে; এরপর প্রথম বিশেষ্যবর্গকে অনুসরণকারী প্রথম “is” (ইত্যাদি)-কে চিহ্নিত করে এবং এই “is” (ইত্যাদি)-কে বাক্যের শুরুতে বসায়।

উপপ্রমেয় ১-এ ধরা হয় যে শিশুরা বাক্যকে কেবল শব্দে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করে; অর্থাৎ তারা “কাঠামো-অনির্ভর” অপারেশন ব্যবহার করে। উপপ্রমেয় ২-এ ধরা হয় যে, শিশুরা বাক্যকে শব্দ ও বিমূর্তায়িত শব্দবর্গে (উপরের উদাহরণে বিশেষ্যবর্গটি) ভেঙে নেয়; অর্থাৎ তারা “কাঠামো-নির্ভর” অপারেশন ব্যবহার করে। বংশগতিবিজ্ঞানীকে ভাবতে হবে, শিশুরা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, অপেক্ষাকৃত জটিল কাঠামো-নির্ভর অপারেশন ব্যবহার করা সঠিক হবে। এটা তো ঠিক, শিশুদের (সবাই) কাঠামো-নির্ভর নিয়ম ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ পায় না। এছাড়া, শিশুরা বিভিন্ন ধরনের ভুল করে থাকলেও তারা এমন ধরনের ভুল করে না, তারা কেন এমন ভুল করে না, এটি অবশ্যই ভাববার বিষয়। একজন ইংরেজিভাষী হয়ত সারাজীবনে (৩) ও (৪) নং এর মতো অদ্ভুত বাক্যের মুখোমুখি হয় না, কিন্তু তাকে যদি এমন বাক্য দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, তাহলে সাথে সাথেই সে ভুল বাক্য নির্বাচন না করে সঠিকটি চিনে নেয়। মঙ্গলগ্রহবাসী বংশগতিবিজ্ঞানী এমন অনুমানই করবেন যে, শিশুদের মধ্যে এমন কোনো জেনেটিক প্রোগ্রাম করা আছে যে কারণে তারা কাঠামো-অনির্ভর নিয়মের বদলে কাঠামো-নির্ভর নিয়মকে বেছে নেয়। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে ইংরেজির জন্য এমন আরো নিয়ম আছে যেখানে কাঠামো-অনির্ভর নিয়মের বদলে কাঠামো-নির্ভর নিয়মের প্রাধান্য থাকবে। এমন তো না যে, আমরা জন্মের পূর্বে জাপানি ভাষার পরিবর্তে সুনির্দিষ্টভাবে ইংরেজি শেখার জন্য প্রোগ্রামড হয়ে থাকি। ওলন্দাজ থেকে জাপানি, বাস্ক থেকে ভারতীয় ভাষা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সঞ্জননী ব্যাকরণের বিশ্লেষণ থেকে একই ধরনের নিয়মের অনুমান করা যায়।

এবার নীচের বাক্যগুলি খেয়াল করুন-

(5) John saw Mary.
(6) Mary was seen by John.

ধরা যায় যে, একটি কাঠামো-নির্ভর অপারেশন (৫) কে (৬) এ রুপান্তরিত করে। এখানে যে NP (বিশেষ্যবর্গ) এর পরে V (ক্রিয়া) ও তারপরে আরেকটি NP (বিশেষ্যবর্গ) থাকে, সেটি (৬) এ কর্মবাচ্যের কাঠামোয় রুপান্তরিত হওয়ার সময় বিশেষ্যবর্গদুটি স্থান পরিবর্তন করে, এবং একটি অতিরিক্ত ক্রিয়া “was” ও প্রিপোজিশন “by” যুক্ত হয়। লক্ষ করুন যে, কর্মবাচ্যের এই নিয়মটি যেমন (৭)-কে (৮)-এ রূপান্তরিত করে, সেই সাথে অব্যাকরণিক বাক্য (৯)-এও রূপান্তরিত করে।

(7) The picture of Dracula frightened John.
( 8 ) John was frightened by the picture of Dracula.
(9) *The picture of John was frightened by Dracula.

এমন হওয়ার কারণ হলো, বাক্য (৭)-কে দুইভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে: [the picture of Dracula]NP-[frightened]V-[John]NP অথবা the picture of [Dracula]NP-[frightened]V-[John]NP, এই দুভাবে। অর্থাৎ, এখানে একটি বিশেষ্যবর্গ (the picture of Dracula) অন্য বিশেষ্যবর্গের (Dracula) সাথে Òপ্রভাববিস্তারী” সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এর ফলে, কর্মবাচ্যের সাধারণ নিয়মটি ক্রিয়ার পূর্বে অবস্থিত যেকোনো একটি বিশেষ্যবর্গের জন্য প্রয়োগ করার মাধ্যমে অব্যাকরণিক বাক্য (৯) তৈরি করছে।

ধরি, আমরা একটি নীতিকে সিদ্ধ বলে গ্রহণ করছি যেখানে নিয়মটি হলো, কর্মবাচ্যে রূপান্তরের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা থাকলে এবং একটি শব্দবর্গ অন্য শব্দবর্গের উপর প্রভাববিস্তার করলে (বা একটি শব্দবর্গের মধ্যে আরেকটি শব্দবর্গ অবস্থিত হলে), রূপান্তরের জন্য প্রভাববিস্তারী শব্দবর্গটিকে নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ, নীচে (১০) এর মতো শব্দবর্গ A (একই ধরনের শব্দবর্গ যেমন, এখানে বিশেষ্যবর্গ) শব্দবর্গ a এর  উপর প্রভাববিস্তারী হলে, কর্মবাচ্যে রূপান্তরের নিয়মটি শব্দবর্গ A এর উপর কার্যকরী হবে।

(10) . . .[A.. . a.. .]. . .

এই নিয়মটিকে এ-ওভার-এ শর্ত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এই শর্তের ফলে (৮) অনুমোদিত হচ্ছে, কিন্তু (৯) অনুমোদন পাচ্ছে না। এছাড়াও, এ-ওভার-এ শর্তকে সার্বজনীন ব্যাকরণ (অর্থাৎ, ভাষার জেনেটিক প্রোগ্রামের অংশ) এর নীতি হিসেবে কাঠামো-নির্ভরতার শর্তের মতো সিদ্ধ বলা ধরা হচ্ছে। 
এ-ওভার-এ শর্তটি বিভিন্ন ব্যাকরণিক নিয়মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এবং এমনকি বাগর্থতত্ত্বের লজিকাল স্ট্রাকচারের ক্ষেত্রেও কার্যকরী বলে যুক্তি দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষ করা যেতে পারে যে (১২) ও (১৩) এর পাশাপাশি দেখলে (১১) নং বাক্যটি বিভ্রান্তিসূচক। 

(11) Some people are boring in every city.
(12) Some people are such that they are boring in every city.
(13) Every city has some boring people in it.

তবে, এখন নীচের বাক্য (১৪) লক্ষ করা যেতে পারে:

(14) Some people in every city are boring.

এই বাক্যটি কেবল (১৩) এর মতো ভাব প্রকাশ করে, (১২) এর মতো নয়। আমরা এটি আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি? লক্ষ করুন যে, বাক্য (১৪) এ some people in every city বিশেষ্যবর্গটি every city বিশেষ্যবর্গের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। একথা বলা যায় যে, (১১) ও (১৪) এর মতো বাক্যগুলির ক্ষেত্রে লজিকাল স্ট্রাকচার এ-ওভার-এ শর্ত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে এ-ওভার-এ শর্ত (১৪) নং এর কেবল একটি ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে। সুতরাং বলা যায়, লজিকাল স্ট্রাকচারও (বাক্যো অর্থের সাথে সঙ্গতিবিধান করে) যুক্তির ভিত্তিতে সবসময়ের জন্য প্রয়োজনীয় নয়, কিন্তু জীববৈজ্ঞানিকভাবে প্রয়োজনীয়। কারণ জেনেটিক প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এ-ওভার-এ শর্তটির প্রায়োগিকতার জন্য এটি জরুরী। এমন ধরনের উদাহরণ এস. ই. লুইরা প্রস্তাবিত “লজিকাল স্ট্রাকচার” এর অনুমানগুলিকে বৈধতা দেয় (পরিচ্ছেদ ১)।

দেখা গেছে, সার্বজনীন ব্যাকরণের জন্য উপরের মতো আরো কিছু শর্তকে সিদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে; এসব শর্তের সবগুলিই শব্দবর্গের ব্যাকরণিকভাবে সিদ্ধ সম্ভাব্য বিন্যাস ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে জোরদার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। উদাহরণস্বরূপ, অধঃস্থনতার শর্ত কোনো বাক্যে বিশেষ্যবর্গের অভ্যন্তরে থাকা প্রশ্নসূচক বিশেষ্যবর্গ (who ইত্যাদি)-কে সরাসরি সরিয়ে ফেলার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, যেমন বাক্য (১৫) এ।

(15) *Who do you believe John’s claim that Mary saw —?

আবার, প্রতিজ্ঞা দ্বীপ-নির্দিষ্ট কর্তার শর্ত কিছু নিয়মের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে: যেমন, অনুগামী সর্বনাম himself-কে তার পূর্বগামী বিশেষ্যবর্গ-এর সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে (যেমন John washed himself এ), কাল-নির্দেশিত (সমাপিকা ক্রিয়ার) অধীন বাক্যে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে অথবা বিশেষ ধরনের কর্তা আছে এমন বাক্যে প্রয়োগের ক্ষেত্রে।

(16) *John thinks [that himself left]Sentence
(17) *John wants [Peter (subject) to wash himself]Sentence

এই অংশে (ভাষার জেনেটিক প্রোগ্রাম হিসেবে ব্যবহৃত) সার্বজনীন ব্যাকরণের শর্তগুলিকে আমরা চমস্কির নিয়মাদি নামে অভিহিত করেছি। নীচের অংশে আমরা বংশগতিবিজ্ঞানের নিয়মাদির আলোকে এগুলির অবস্থা আলোচনা করব। পরবর্তী অংশে মেন্ডেলের সূত্রাদির আলোকে চমস্কির নিয়মাদিকে দেখার সময়ে আমাদের চমৎকার উপলব্ধি হতে পারে। (অসমাপ্ত)

অনুবাদকের আত্মপক্ষ সমর্থন: ইংরেজি (অথবা লাতিন, গ্রিক, ফরাসি, জার্মান ইত্যাদি থেকে ইংরেজিতে আত্তীকৃত) পারিভাষিক শব্দগুলিকে বাংলায় আত্মস্থ করা হয়েছে, ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক এমন নিবন্ধের উপস্থিতি বাংলা ভাষায়, বিশেষত বাংলাদেশে, বেশ কম। উদাহরণস্বরূপ, generative grammar শব্দবর্গটির কথা ধরা যাক। বাংলায় এটি বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে: উৎপাদনশীল ব্যাকরণ, সঞ্জননী ব্যাকরণ, সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ, সৃজক ব্যাকরণ, উৎপাদক ব্যাকরণ ও জেনারেটিভ ব্যাকরণ। কোনটি সঠিক, বা সুবিধাজনক, সে আলোচনায় না গিয়ে, পাঠকের সুবিধার্থে বর্তমান অনুবাদকের ব্যবহৃত পরিভাষার একটি তালিকা উপস্থাপিত হলো: A over A Condition  এ-ওভার-এ শর্ত; Chomsky’s laws  চমস্কির নিয়মাদি; crossing over  উপরি-উত্তরণ; discourse grammar প্রসঙ্গ ব্যাকরণ ; factor  ফ্যাক্টর; generative grammar  সঞ্জননী ব্যাকরণ; genetic  বংশগতিবিদ্যক; genetic code  বংশগতীয় সংকেত; genetic program  জেনেটিক প্রোগ্রাম; geneticist  বংশগতিবিজ্ঞানী; genetics  বংশগতিবিদ্যা; genome বংশাণুসমগ্র / জিনোম; hypothesis  উপপ্রমেয়; linguistic capacity  ভাষিক সক্ষমতা; linkage   সংযোগ; Mendel’s laws  মেন্ডেলের সূত্রাদি; molecular biologist  আণবিক-জীববিজ্ঞানী; monkey wrench  বহুরূপী সাঁড়াশি; organism  প্রাণসত্তা; phrase  শব্দবর্গ; Proposition Island-Specified Subject Condition প্রতিজ্ঞা দ্বীপ-নির্দিষ্ট কর্তার শর্ত; sentence grammar  বাক্যিক ব্যাকরণ; Structure-dependance Condition  কাঠামো-নির্ভরতার শর্ত; subjacency    অধঃস্তনতা ; universal grammar  সার্বজনীন ব্যাকরণ


পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকুন... আপডেট পেতে লাইক দিন GleeEra-র ফেসবুক পেজে

প্রাসঙ্গিক লেখা

ইংরেজিঃ একটি বৈশ্বিক লিংগুয়া ফ্রাংকা (Lingua Franca)

পৃথিবীর প্রায় সাত হাজারেরও উপরের লিভিং ল্যাংগুয়েজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মৌখিক ব্যবহারকারীর ভাষার তালিকা নির্ধারণ করা এতটাই কঠিন যা আপনার ধারণাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইংরেজী, ম্যান্ডারিন, স্প্যানিশ ও আরবিকে সহজেই আমরা টপ লিস্টে ফেলে দিতে পারি।

পৃথিবীর সবচাইতে বেশী ব্যবহৃত ভাষাগুলো

বিভিন্ন ভাষাভাষীর লোকজন সবসময় পরস্পরের যোগাযোগের সুবিধার্থে তৃতীয় কোন ভাষার সাহায্য নিয়েছে যা কিনা ব্রিজ ল্যাংগুয়েজ হিসেবে কাজ করতো। এবং অধিকাংশ সময়ই সেটা যোগাযোগাকারীর ব্যক্তিদের মাতৃভাষা থেকে ভিন্ন কোন ভাষা হতো যা আজ লিংগুয়া ফ্রাংকা (Lingua Franca) হিসেবে পরিচিত।