মু.ই কেন ইরম বা ক্যরিজম্যাটিক কবিতার গুপ্তমন্ত্র খোঁজ
কবি মুজিব ইরমের কবিতার অন্তর্দেশ ঘুরে ক্যারিজম্যাটিক কবিতার গহনের কিঞ্চিৎ ঘ্রাণ নিতে ভেতরে যাওয়ার গুপ্তমন্ত্র খুঁজি। তার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক পাঠ নিই-
কবি-র স্বভাষা কেন?
আমরা জেনেছি, উপভাষা 'রিফ্লেকশন অব দ্য ডীপ ট্রেডিশনাল ভেলিউজ' শুধু না, ভাষাকে পুষ্টি (আ্যাক্রিশন) যোগায়, রসঘন করে, মজায় ভিজায়, টাইট ক'রে ধ'রে, প্রাণোচ্ছল করে, এবং আত্মপরিচয় পাওয়ার পথ সহজতর করে উপভাষা।
প্রমিত ভাষা, মানে স্টান্ডার্ডাইজড ভাষা, ওইটাও গোড়াতে উপভাষা, ওইটারও হাড্ডি মজ্জা স্বভাষা। ওইটাও ডায়ালেক্ট কোনো অঞ্চলের, ঐতিহাসিক কারণে ডমিন্যান্ট হয়েছে, প্রাধান্য পেয়েছে। আর একটি ভাষার ভেতরে অনেক উপভাষা বা স্থানিক ভাষা এসে জমা হয়। ভাষাপন্ডিতগণ বলেন, একটি ভাষা, অনেক উপভাষার (ডায়ালেক্ট) সমন্বয়। উপভাষা, ব্যক্তি মানুষের ভাষিক বিকাশের নির্দিষ্ট স্থরে থাকা ভাষাজ্ঞান বা স্বভাষা (ইডিআলেক্ট)। অন্য ভাষার শব্দেরাও ঢুকে। শক্তিশালি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী উপভাষার শব্দদের মনোগ্রাহী ক'রে বসিয়ে ভাষার ডাইভারসিটি অব টেস্ট দেন, সরস করেন। বিস্তারিত অঞ্চলে ভাষাটির উপভাষা ব্যবহারকারীদের মধ্যে পারস্পরিক বোধগম্যতা (মিউচ্যুয়াল ইনটেলিজিবিলিটি) আসে। এভাবে চাটগাঁর 'সিনার ভিতর বান্ধি রাইখ্যুম তোয়াঁরে ও ননাইরে', সিলেটের 'মায়া লাগাইছে পীরিতি শিখাইছে', উত্তরবঙ্গের 'ওকি গাড়িয়াল ভাই' ইত্যাদি মন ছোঁয়, ইনটেলিজিবল হয় সমগ্র বাংলায়। উপভাষা সাহিত্যকে প্রাণোচ্ছল করে বলেই কি নানা ভাষার সাহিত্যিকেরা সাহিত্যকর্মকে অলংকৃত করেন উপভাষার শব্দে বাক্যে? শেক্সপিয়র তাঁর বিস্তর নাটকে এ্যাসেক্স ডায়ালেক্ট ব্যবহার করেছেন। শিল্পের নানা শাখা আছে, আলাদা দ্রবণাঙ্ক আছে, আবার একাট্টা এক আলগ দুনিয়ারও জ্ঞাপক- শিল্প। টি এস এলিয়টের দিকে একটু নজর রাখা যায়।
এলিয়টের দি ওয়েস্টল্যান্ড এবং
কবির নিজস্ব স্থানীয় ভাষাকে- উপভাষাকে- ডায়ালেক্টকে খুব গুরুত্ব দিতেন টি এস এলিয়ট। স্ল্যাঙ আদলে 'দি ওয়েস্টল্যান্ড' এর প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম এবং বইটির নাম রাখতে চেয়েছিলেন 'হি ডু দ্য পোলিস ইন ডিফরেন্ট ভয়েসেস'। (গুগল বুক- Appreciating Don DeLillo: The Moral Force of a Writer's Work: By Paul Giaimo) বিভিন্ন ভয়েসের কলেজ পরিগণিত এলিয়টের মাস্টারপিস কবিতাটিতে কলোকুইয়ালিজম এবং গোথিক ব্যবহার ছাড়াও বিশেষ আরেকটা ব্যাপার হলো সেখানে 'আনকনভেনশনাল ইউজ অব ল্যাঙ্গুয়েজ'। এছাড়া জেমস জয়েস, চার্লস ডিকেন্স-র সাহিত্যেও ডায়ালেক্ট গুরুত্ব পেয়েছে। আরো কবি তো আছেনই।
উল্লেখ থাক, গ্রেইট বৃটেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাইনরিটি উপভাষা কর্নিশ। ইংরেজি ভাষা সমগ্র বৃটেনে আধিপত্য বিস্তারের আগে বেশিরভাগ যুক্তরাজ্যে কর্নিশ ভাষা চালু ছিল। কর্নিশ abroad মানে open। 'Leave the door abroad, boy.'। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইংরেজি এ্যাব্রড সে-অর্থের সিগনিফায়ার না। এবার থোড়া অন্যদিকে নজর-
ঋণাত্মক ক্রিয়ারও ধনাত্মক মর্ম
শাবিপ্রবি'র শিক্ষক কবি জফির সেতু কয়েক বছর আগে মুজিব ইরমের কবিতার শৈলীর উপর বিশ পৃষ্ঠার একটা থিসিস করানোর কারণে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক জফির সেতুর উপর ব্যাকা নজর দিয়েছেন। তারা আঞ্চলিক পক্ষপাতদুষ্টতার আইব ঢালছেন জফির সেতু ও মুজিব ইরমের উপর। কারণ মুজিব ইরমের কবিতায় সিলেটি ঘ্রাণ আছে। অই শিক্ষকগণ ধন্যবাদ পেতে পারেন এই কারণে যে, আমরা যদি দেখি এভাবে- যেকোনো ঋণাত্মক ক্রিয়ারও ধনাত্মক মর্ম থাকে, তাইলে পাওয়া যায় অভিজ্ঞতা, মানে, তাদের আচরণের দ্বারা এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা- যথেষ্ট অজ্ঞতা কোনো বিষয়ে প্রকাশ করতে পারেন কেউ কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া সত্বেও। সে যাক, কবি যিনি, কবিতার মানুষ যিনি - কবিবংশের লোক যিনি - তিনি তার স্থানীয় ভাষাকে - উপভাষাকে - ডায়ালেক্টকে গুরুত্ব দিবেনই। দিবেন না? দিলে কি হয়? উজাইর মাছের ফুর্তি ও মজা? দেখা যাক-
'উজাইর মাছ' 'বইনালা' আর -
মুজিব ইরমের কবিতার অন্যতম মনোহর অলংকার বৃহত্তর সিলেট বিভাগের নানা ডায়ালেক্টের শব্দ ও আবহ। এর ফলে তার কবিতার আলগ শৈলী আলাদা সুন্দর ভয়েস উন্মোচিত হয়েছে। খরস্রোতা মনুতীরের বাসিন্দাদের হৃদয়ের ভাষারও ঘনিষ্ঠ উপলব্ধি স্ফুট মুজিব ইরমের কবিতায়। কিছু শব্দের ইরমীয় ডিসক্লোজার এমন যে, ওই শব্দেরা সিলেট বিভাগের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম প্রান্তের স্থানীয় ডায়ালেক্টে রয়েছে। সিলেটের লাগোয়া ভারতের সিলেটি ভাষার অঞ্চলেও পরিচিত। যেমনঃ 'লাগ' = লাগ পাওয়া মানে নাগাল পাওয়া; 'উজাইর মাছ' = বর্ষায় পানি বাড়লে মেঘের ডাকে লাফিয়ে পারে ওঠা মাছ; 'বাইসনা' = লতা জাতের উদ্ভিদ বেয়ে উঠবার কিছু অবলম্বন; 'কচুয়া দুঃখ' - কচুয়া = গাঢ় সবুজ; 'নাইওরি' = শ্বশুর বাড়ি থে'কে বাপের বাড়ি আসা মেয়ে; 'বইনালা' = বোনে বোনে বন্ধুতা; 'দিগদারি' = জ্বালাতন; 'হুরইনবাড়ি' = ঝাড়ু দিয়ে মারা; 'বিজ্বালা' = যন্ত্রণা; 'মানু' = মানুষ; 'হরালি' = বিলের অতিথি পাখি; এই ধরণের বিস্তর শব্দ আছে মুজিব ইরমের কবিতায় যেগুলো শুধু মৌলবীবাজারের মনুনদীপারে ব্যবহৃত না, এগুলো ফেঞ্চুগঞ্জের বিশাল হাকালুকি হাওড় পারে, ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়, হবিগঞ্জে, সুনামগঞ্জে, জৈন্তায়, কোম্পানীগঞ্জে এবং ত্রিপুরায়, কাছাড়ে পাওয়া যাবে। আর যুগে যুগে ভাষা বিবর্তনের ধারায় উপভাষার শব্দেরা এসে মান ভাষায় মিশে মান ভাষার আত্মীয় হয়।
ভাষার মিশ্রিতাবস্থা নিত্য নবতর
মানুষের ভাষা আর বসবাসের অঞ্চল নানাবিধ রঙে ঢঙে মিশ্রিতাবস্থায় পরিবর্তন হয়ে আসছে এবং হতে থাকবে। সেই 'রাঢ়’ ‘সুক্ষ’ ‘পুন্ড’ ‘বঙ্গ’ 'কলিঙ্গ' নাই। নাই আর এখন বিশাল গৌড়, নাই বরেন্দ্র বা বিক্রম অধিপতি। সেই দূর অতীতেও অস্ট্রিক গোষ্ঠী, দ্রাবিড় গোষ্ঠী, মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীর মানুষের মিশ্র ভাষার অঞ্চল ছিল এখনকার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ মিলে। গোষ্ঠীতান্ত্রিক প্রভাবের কারণে ভাষা ও রাজ্যক্ষমতার ঠেলাধাক্কা চলতই।
দেখা যায় প্রভাবশালী লেখক আর ক্ষমতাধর শাসকের প্রভাবে কোন অঞ্চলের ভাষার মিশ্রিতাবস্থা নতুন আদল পেয়ে আসছে। এখন ঢাকাই ভাষার রূপটিতে পুরান ঢাকার কুট্টি (ধান কুটার মানুষ) জনগোষ্ঠীর উপভাষা, বিক্রমপুরী এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষার শব্দের এবং কথনভঙ্গীর মিশেল অবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশের লেখা ও কথায় তৎসম শব্দের ব্যবহার কমছে দিনে দিনে। ফলে এই অঞ্চলের প্রধান ভাষার যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়ছে। এখানকার ভাষাতে অনায়াসে ইংরেজি আরবী, অন্যান্য ভাষার শব্দ এবং এই দেশের নানা আঞ্চলিক ডায়ালেক্ট ও ইডিয়ালেক্টের শব্দ আসছে। নতুন নতুন সিনটেক্স আসছে। নানা নীরিক্ষাও জারি আছে। ইংরেজ আগমনের আমলে পশ্চিম বঙের তদানিন্তন সুতানটি গ্রাম (১৬৯৮-তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দখলে নেয়) এলাকার ভাষা সমগ্র বাংলায় প্রভাব রেখেছিল। ১৭৭৩-এ কোম্পানী কোলকাতাকে ভারতের রাজধানী করবার ফলে উপমহাদেশের প্রাণ কেন্দ্র হয় কোলকাতা। বাংলা সাহিত্যের উন্মেষ বিকাশ কোলকাতা থেকেই। কিন্তু এখন স্বাভাবিক নিয়মেই কোলকাতার ভাষা সেই ডমিন্যান্ট ফোর্স আকারে নেই। পশ্চিমবঙ্গের যেসব সাধারণ শ্রমজীবি প্রবাসে পেয়েছি, তাদের, দেখেছি বোল চালে ব্যারাছ্যারা অবস্থা। বাংলা ফোনেটিকস যেনো ফোনি (নকল) হয়ে গেছে হিন্দির প্রভাবে।
আর হ্যাঁ, উপভাষার মিক্সচার হওয়ার অন্যতম একটা বাস্তবতা হলো, পাশাপাশি থাকবার কারণে মিথস্ক্রিয়া (ইন্টারএ্যাকশন) হয়। কয়েকটি স্বভাষার মানুষ নানা কারণে একসাথে থাকলে তাদের ভাষাতে মিশেল অবস্থা আসে। নোয়াখালির ফেনির লাগোয়া পূর্ব- দক্ষিণে চট্টগ্রামের মিরেরসরাই। অই লাগালাগি এলাকার বাসিন্দাদের কথাতে চাটগাঁইয়া আর নোয়াখাইল্যা উপভাষার মিশ্র ঘোষধ্বনি এবং ডায়ালেক্টিক শব্দের মিলমিশ অবস্থা বিদ্যমান। সন্দীপের মানুষের কথাতেও চাটগাঁইয়া ও নোয়াখাইল্যা ছায়ামায়া ঘ্রাণ হাজির।
বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কাজগুলোতে স্বভাষার প্রভাব
বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কাজগুলোতে কোনো-না-কোনো উপভাষা ও স্বভাষার প্রভাব রয়েছে। মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, ফররুখ, শরৎচন্দ্র, মানিক-বিভূতি-তারাশঙ্কর এই তিন বন্দোপাধ্যায়সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ লেখকের কাজে এটা পরিলক্ষিত। সুতানটি, নদীয়া, বিক্রমপুরের উপভাষা প্রাধান্য পেয়েছে মান ভাষা নির্মাণে। (কইনু, হারানু, সিঞ্চহ, পেয়েছিনু, ঘুমাইনু ইত্যাদি রবীন্দ্রনাথের ওই অঞ্চলের) ফকির লালন শাহ বাংলা ভাষার মানুষের কাছে নদীয়া অঞ্চলের স্বভাষাকে ধারণ করেই সমাদৃত। (সদাই, উলামেলা, নাইকো, তায় ইত্যাদি নদীয়া অঞ্চলের শব্দেরা লালনগীতিতে) হাছন রাজা আর শাহ আব্দুল করিম দেশের মানুষের মন মননে হাজির সিলেটি স্বভাষার শব্দে সমৃদ্ধ বাংলা নিয়ে। (কানাই তুমি খেইড় খেলাও কেনে - হাছন রাজা) আর শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো প্রায় সবই সিলেটি স্বভাষাভঙ্গির চালে গঠিত যদিও তাতে বিস্তর সাধু বাংলা প্রমিত শব্দ সমাবেশ আছে। যেমনঃ 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা' ইত্যাদি। জার্মান ফেনোমেনোলজিস্ট মার্টিন হাইডেগারকে স্মরণ করতে হয়, বলেছিলেন, ইংরেজি তর্জমা - 'ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ দ্য হোম অব দ্য বীঙ'। এই ল্যাঙ্গুয়েজ হলো স্বভাষা। আমরা দেখি, স্বভাষার ভিতর দিয়ে বিন্দু থে'কে সিন্ধুতে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। স্বভাষার দ্বারা বিশ্বপ্রেম (ফিলানথ্রপি) স্পর্শ সম্ভব। মুজিব ইরমের কবিতাগুলোতে স্বভাষিক শব্দ এসেছে সহজ স্বাভাবিক স্রোতে। ফলে অনুভবের ভাষারূপ আন্তরিক।
আন্তরিক কারিকা ক্যরিজম্যাটিক
মুজিব ইরমের পংক্তিরা - চরণেরা, কবিতারা ইনফেকশাস কেন?
অন্তরের স্বতঃস্ফুর্ত উচ্চারণ- একটি পংক্তি, একজন কবি লিখেছেন তার স্থানীয় ভাষার শব্দ মিলিয়ে। শব্দটি প্রমিত ভাষার পাঠক/শ্রোতার কাছে অচেনা, কিন্ত এমন হয়েছে, মন ছুঁয়ে ফেলেছে, মায়া লাগাতে পেরেছে বরাবর, তাই অন্তর্দেশে অনুরণিত হচ্ছে, ভাবাচ্ছে, প্রশান্তি দিচ্ছে- কেননা পংক্তিটির ঔষধি গুণ রয়েছে। পয়েমোপ্যাথি দিতে পারে। এক সময় শব্দটির অর্থ জানতে চান পাঠক/শ্রোতা। এইযে না-জানা অবস্থাতে দিল ধরে, কেন ধরে শব্দার্থের খবর না নিয়ে? ঠিক না-নিয়ে ধরা হয় না, পংক্তির ক্ষমতা এতোটা থাকে যে, শব্দটির পরিচয় দিতে পারে পংক্তিটি। ক্ষমতা এখানে স্ফুট মায়া। কারণ না-জানা আন্ধারে আলো আনে প্রেম। যে-প্রেম ইংরেজিতে লিখতে সবখানে ক্যাপিটাল L দিয়ে লেখা লাগে Love বা LOVE।
ডিটাচমেন্ট আনে LOVE এর এ্যাটাচমেন্ট
এই LOVE এর মজা এরকম- এই প্রেম কবিকে ধীরে ধীরে স্তরে স্তরে দুনিয়াদারি থে'কে ডিটাচড করতে করতে 'আমি কিছু নয়' (particle of nothingness) বানায়। একদিকে ডিটাচড, আরেকদিকে এ্যবজর্বড - নকল থুইয়া আসল নিয়ে মগ্ন। এরপর কি হয়? এরপর আসল ঘটনা ঘটতে থাকে - এরপর এ্যালেথিয়া পর্ব - এরপর আনকভার - ডিসক্লোজার একের পর এক - এরপর দেখা যায় দিকে দিকে শোর - এ্যাটাচমেন্ট মনোহর! ডিটাচমেন্ট আনলো এ্যাটাচমেন্ট কবির প্রতি, তাঁর কবিতার প্রতি এ্যাটাচমেন্ট - মায়াটান - অনুরাগ ছড়িয়ে পড়ছে। ভাষাভেদের সীমা ছাড়িয়ে এইভাবে আমরা দেখি ফরিদউদ্দিন আত্তার, জালালউদ্দীন রুমি, মিল্টন, গ্যাটে, হাফিজ, সাদী, গালিব প্রমুখ কর্তৃক কবিবংশজাত কারিকা জগতের মাশরেক মাগরেব শুধু না, চৌদিকে মায়া লাগাতে পেরেছে। ব্যাপারটা এমনই মনে হয়। মনে হয় যেকোনো আন্তরিক কারিকা ক্যরিজম্যাটিক হয়, ম্যাগনেটিজম থাকে তাতে। বসরা-র গোলাপ হোক বা বুলগেরিয়ার গোলাপ হোক, কিংবা তায়েফের বা তুর্কি গোলাপ, গোলাপবংশ বলে কথা।
প্রসঙ্গত এও বলি, সেদিন টিভি চ্যানেল বাংলাভিশন-র আবুধাবী ব্যুরো চিফ, বন্ধু জাহাঙ্গীর কবির বাপ্পী ফেইসবুকে একটি আফগান এপিকের অংশ বিশেষ শেয়ার করলেন। ওখানে পশতু ভাষার গানটির প্রেজেন্টেশন দেখলাম এতোটা আন্তরিক যে, ভাষা না বুঝলেও এ্যাক্সপ্রেশন্স হৃদয়ছোঁয়া। বুঝতে পারলাম, 'অন্তর জ্বালাইলায় পীরিতে'। আমরা দেখি, ইরমের স্বভাষার শব্দেরা মান ভাষার পাঠকের কাছে অচেনা সত্বেও ইনফেকশাস হওয়াতে কবিতাগুলো মুগ্ধ করছে।
ইনফেকশাস সিলেটি নাগরি
'সিলেটি নাগরি' একটি প্রতিষ্ঠিত ভাষা ছিল। আলাদা বর্ণমালা ছিল। পুঁথি পুস্তক প্রকাশ হতো। হযরত শাহজালাল রঃ এবং শ্রী চৈতন্য দেবের আমলে ওই অঞ্চলের হিন্দু মুসলমানেরা নাগরি ভাষায় ধর্মের কিতাব ও সাহিত্য চর্চা করেন বেশি। সিলেটি নাগরি লিপির কয়েকটি অক্ষর আফগান মুদ্রায় থাকতো। 'সোনাভানের পুঁথি' 'হরিণনামা' 'হুশিয়ারনামা' 'সফতুন্নবি' 'মহব্বতনামা' ইত্যাদি সিলেটি নাগরিতে লেখা জনপ্রিয় ছিল। বৃহত্তর সিলেটের বাইরে এ ভাষা চলতো কিশোরগঞ্জ নেত্রকোনা ময়মনসিংহ এবং আসামের কাছাড় ও করিমগঞ্জে। এসব অঞ্চলে সেই গীত, জারি, পুঁথির প্রভাব এখনও আছে। এখনও হয় ভজন রোদন।
'ইরম করিছে সঙ্গী রজনী-রোদন'
'ইরমসংহিতা' আমাদের দেখায় এই কবির কাব্যসাধনার একটা ধারা ও ধারাবাহিকতা রয়েছে। মানে, "কবিবংশ" কাব্যগ্রন্থ পর্যন্ত, তার আগের কবিতা-কর্ম-সিঁড়িতে ভাষা ও উপলব্ধির একটা নহর বা বরিষণধারা পরিলক্ষিত। ধারাতে, মানে জাআন-রা হলো চিরায়ত বাংলার আত্মানুসন্ধানের আন্তরিক প্রয়াস। তার কাব্যভাষাতে ডায়ালেক্টের মিশেলে নব রূপ আছে, মানে ভাষার মিশ্রিতাবস্থার ভিন্নতর সৌন্দর্য সিঁড়ি আছে। ইরম কহেন - 'তোমাকেই নিত্য জপে নির্ধনিয়ার ধন, ইরম করিছে সঙ্গী রজনী-রোদন'। আর অধিকাংশ কাজই ফুটেছে পয়ার ও লিরিক্যাল মেজাজে কখনো মিল কখনো অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত ছন্দে। ফুটেছে বিস্তর কনটেক্সট। ফুটেছে অধরা মনের গহনের অনুভূতির অধরা ম্যাগনেটিজম। রোদন কেন? মা দুধু দেন না রোদন ছাড়া; ভাবের ব্লকদশা ছুটে না রোদন বিনা; ইশক পোক্তা হয় না রোদন ব্যাতিরেকে। অন্তর সাফ হয়, যুক্তিকে হারিয়ে রূপ রস গন্ধের সারাৎসার বোধগম্য হয় রোদনের দ্বারা।
ও মন বাদলা কেন থামে...
দেখা যায়, আলগোছে মোলায়েম শব্দে শক্তিশালিতা রোপন ক'রে হুলস্থুল ঠাশা-টাইট ক'রে মন ছুঁইবার নবতর কাব্যভাষা আছে এই কবির। তিনি নিদ্রাতুর না, নিমাইমুজরা (ইনট্রোভার্ট - অন্তর্মূখী স্বভাবের) না, হুরুমুরু (ছোট) না কবি মুজিব ইরম। পড়া যাক একটি কবিতা-
মনলিপি :: মুজিব ইরম
ক্লান্তি কেনো আসে, ও মন, ক্লান্তি কেনো আসে, কুটিমুটি দুঃখ কেনো মনের ভেতর থাকে, ও মন, মনের মাঝে ভাসে.....চিকনচাকন মন্দ এসে ভোরের জিকির ধরে, রৌদ্র-দুপুর তাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি কেনো নামে, ও মন, বাদলা কেনো থামে....
ও আমার হুরুমুরু মন, পক্ষী হয়ে যাও- গাছের নতুন কুঁড়ি রূপে শরীর তোমার হাসিতে রাঙ্গাও, ও মন, বাতাসে উড়াও...
এই সুরে সুরে আমরা কি এও বলতে পারি না- কাব্য কেনো আসে ও মন কাব্য কেমনে আসে? বা ডিমের ভেতর পক্ষী কেমনে ফোটে কিংবা কুঁড়ি কেমনে আসে; এতো সুন্দর মায়া কেমনে জড়ায়। কবিতাসহ বিস্তর বিষয়আশয়ের হয়ে উঠবার জ্ঞান আমাদের নাগালের বাইরে। সুইচ অন করলে সুন্দর বাতিটি জ্বলে উঠতে দেখি, বিদ্যুৎপরিবাহী তার দেখি, কানেক্টিভিটির মেকানিজম দেখি, বিদ্যুতের শরীর চেহারা, তার গতিবেগ দেখি না। ফ্লো অব ইলেক্ট্রিক চার্জ বুঝি, ইলেক্ট্রনদের দৌড় দেখি না, ম্যাগনেটিক ফিল্ড ছুঁতে পারি না, কিন্তু বাতির আলোতে মন মজে আমাদের, ভাবের ম্যাগনেটিজম আমাদের ধরে রাখে। মানুষ দেখতে পারছে, ভিন্ন ধরনের প্রাণরূপের একটা জীবনচক্র আছে রেশমপোকার। কিন্ত মানুষের নাগালের বাইরে আলোপতঙ্গের ডিম মেটমরফসিসের আগে কেমনে লার্ভা হয়, লার্ভা কেন পুপা হয়, পুপা কেন শুঁয়াপোকা হয়? কেন শুঁয়াপোকা মানুষকে মুল্যবান রেশম দিয়ে ধীরে ধীরে বদলে যায় আলোপতঙ্গ রূপে। এই আলোপতঙ্গের ডিম থেকে আবার লার্ভা আবার পুপা আবার শুঁয়াপোকা। না-বুঝবার অযুত প্রসঙ্গ আমাদের বুঝিয়ে দ্যায়, আমরা যা দেখবার তা দেখি না, যা বুঝবার তা বুঝি না সাধারণভাবে। আর বুঝি না যে তা টের পাই মনোজাগতিক উত্তরণের একটা অবস্থানে গিয়ে।
আমরা ভাবি, ইরমের কবিতা ইরম (অমন) মজাদার কেন! কি ফোটে তাঁর ভাব-ভাষাতে বা ভাষা-ভাবে? আমরা মুগ্ধ হই কেন? অনির্বচনীয় ভাবের ছোঁয়ার কারণে? অনির্বচনীয়কে বচনবন্দী করা যায়? কিছুটা যায় যেনো। হয়তো এ কারণেই Genuine poetry can communicate before it is understood. - T. S. Eliot; মানে বিশুদ্ধ কবিতা বুঝতে পারার আগেই মন ছুঁতে পারে।
এও উল্লেখ্য, মুজিব ইরমের কাব্যে ইউরোপের পাতাঝরা উইলো, নিঃসঙ্গ চেরি, সিলেটের জৈন্তাপাহাড় থেকে উড়ে আসা বক, আইরিশ কফির মগ, সিলেটি ভাষার 'উগার তল', 'নাইকল মুড়া', 'উজাইর মাছ', 'বনউরি' (বুনো শিম) ইত্যাদি সসম্মানে হাজির। ইতিপূর্বে আমরা দেখছি দ্রাবিড় সৈকতের 'বায়ংসি চরকায় লাঙল কাব্য'-তে সে-কবির স্বভাষা মনোহর হয়ে এসেছে।
স্বভাষাভঙ্গিতে লেখেন আরো ক'জন
এই সময়ে আমরা দেখি কাজল শাহনেওয়াজ, ব্রাত্য রাইসু, ইমরুল হাসান, হাসান শাহরিয়ার, প্রমুখের কাব্যকথায় তাঁদের স্বভাষার শব্দেরা সুন্দর আসতে থাকছে। কখনো মান ভাষার বাক্যে বসে নবতর দোলা দিয়ে যায়। নতুন স্বাধ উন্মোচন করে। স্বভাষার দ্বারা সুন্দর ডিসক্লোজ করবার এই দিকটি যুগে যুগে থাকে।
স্বভাষার শব্দ মিশিয়ে, স্বভাষাভঙ্গিতে লেখেন এই ক'জনকে প্রশ্ন করি-
প্রশ্নঃ মান ভাষা থাকা সত্বেও আপনার কাব্যভাষাতে স্বভাষা/উপভাষার মিশ্রিতাবস্থা গুরুত্ব পায় কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর দেন চার কবি- কাজল শাহনেওয়াজ, ব্রাত্য রাইসু, ইমরুল হাসান, হাসান শাহরিয়ার।
কাজল শাহনেওয়াজ বলেন-
"অনেকদিন ধরেই টের পাচ্ছিলাম উপমা ইত্যাদি টুল দিয়ে আমি আমার কবিতায় আনন্দ পাচ্ছি না। ভাষা সময়কে ধরে রাখতে পারে যদি আমার মেজাজ ধরতে পারে। কল্পনা, রাগ, ক্রোধ প্রকাশ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে স্বভাষা।
আর আমার মনোভাষায় আমি যে রাজা! সেখানে সারাক্ষণ কাজ চলছে। টেকনো। বাজারি। পুরানা। আবোল তাবল... প্রফেসির ভাষা..."।
তাঁর কবিতা থেকে-
"হঠাৎ একদিন দেখবা/তোমাকে আর কথা বলতে দিচ্ছে না/তখন তোমার নিজস্ব কবিতা/তোমাকে ভাষা দিবে!" (কাজল শাহনেওয়াজ, চুপচাপ তোমাকে)
ব্রাত্য রাইসু বলেন-
"মান ভাষা চারদিক ছাইয়া আছে। ওই দিয়াই অনেক কিছু বুঝতে হয়। তার মধ্যে টাইম স্পেসের যে চরিত্রগত নিজস্বতা সেইটা আপনার কথিত 'স্বভাষা/উপভাষার মিশ্রিতাবস্থা'র মধ্য দিয়া অনেকটা অনুবাদহীন ভাবে আসতে পারে। সে কারণে হয়তো গুরুত্ব পায়।"
তাঁর কবিতা থেকে-
"জগত আবার পাখি পাখি লাগে/এ লাগাটি তবে কোথায় রাখি?/ওগো পাখি,/ওগো কদম দিনের একটি বাদল পাখি,/শাখার আড়ালে তুমি লতাপাতা/পাখার আড়ালে আঁখি;/ওগো নদীবরাবর উড়িয়া যাইছে" (শালিখের দিন, ব্রাত্য রাইসু)
ইমরুল হাসান বলেন-
"আসলে ভাষার এই সেন্টার পয়েন্টটাতেই আমার খুববেশি আস্থা নাই। লেখক বাদেও একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল যখন ভাষারে ইউজ করে তখন তার মতোন কইরা কিছুটা মোল্ড করতেই থাকেন; মানে, ভাষার মধ্যে তো খালি ভাষা না, ইন্ডিভিজ্যুয়ালরাও তাদের এগজিসটেন্সটাসহ অ্যাক্টিভ থাকেন; এইখানে কনশাস কিছু চয়েস থাকে, আবার কিছু সাবমিশনও থাকে..."
তাঁর কবিতা থেকে-
"মনে কোরো, এখন ঘরের ভিতর শোয়া; একটা উইন্ডোই আমার চাই/আমি অমল হইবো, দইওলা, তোমার মিহি-গলার ডাকটা ডাকো…/আমার ইউটিউব নাই, বব ডিলানের ক্রেজ শেষ, সুমন কাকুও আর ভাল্লাগে না/প্যানপ্যানানি রেভিউলোশন আর কদ্দিন!" (ইমরুল হাসান, উইন্ডো-শ্লেট)।
হাসান শাহরিয়ার বলেন-
"আপনে ত নিজের ভাষাতেই লিখবেন। অন্তত লিখবেন যখন 'নিজের ভাষা' এইরকম একটা উপলব্ধি আপনার আসবে। মান ভাষা আরোপিত ভাষা, এক ধরনের অবদমন। এই আরোপ রাষ্ট্র এবং সমাজ দুইটা-ই করে। একটা শ্রেনী দিয়া অন্যটা সর্বজনের নামে। কাজেই আরোপিত টুল দিয়া আমার সাহিত্য সামনে আগাবে না আর।"
তাঁর কবিতা থেকে-
"কেউ বলবে না আর তোমাদের বন্ধ জানলায়/ঘাস জমতেছে; মৃতের গন্ধ নিয়া ঘরের ছাদে গাছ উঠতেছে।" (শবের ট্রাক, হাসান শাহরিয়ার)
"শ্রীহট্টে জন্মিয়া ভ্রমি বিস্তীর্ণ ভূবন"
কবি তাঁর স্বভাষায়, স্বভাষার শব্দ ছিটিয়ে জগত বুঝতে চান, জগত দেখতে চান। স্বভাষার দৌলতে তাঁর মনোজগতের ইন্টারগ্যালাকটিক পরিভ্রমন হতে পারে। মুজিব ইরম আমাদের জানান- "শ্রীহট্টে জন্মিয়া ভ্রমি বিস্তীর্ণ ভূবন"। কেন স্বভাষার ভেতর দিয়ে ভ্রমন? সোজা উত্তর- সহজ স্বাভাবিক আন্তরিক অকৃত্রিম হয়, তাই। উল্লেখ্য, কারো যদি প্রমিত ভাষাটি হয় জন্মগত স্বভাষা, ঘরের উপভাষা, তিনি ষোলআনা সে-ভাষার দৌলতেও ভ্রমিতে পারেন জগত।
মুজিব ইরম ফ্যাক্টস
মুজিব ইরম-এর জন্ম বাংলাদেশে, মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামে, পারিবারিক সূত্র মতে ১৯৬৯, সনদপত্রে ১৯৭১।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান ১৯৯৬, ইরমকথা ১৯৯৯, ইরমকথার পরের কথা ২০০১, ইতা আমি লিখে রাখি ২০০৫, উত্তরবিরহচরিত ২০০৬, সাং নালিহুরী ২০০৭, শ্রী ২০০৮, আদিপুস্তক ২০১০, লালবই ২০১১, নির্ণয় ন জানি ২০১২, কবিবংশ ২০১৪, শ্রীহট্টকীর্তন ২০১৬, চম্পূকাব্য ২০১৭, আমার নাম মুজিব ইরম আমি একটি কবিতা বলবো ২০১৮। উপন্যাস/আউটবই: বারকি ২০১১, মায়াপীর ২০০৯, বাগিচাবাজার ২০১৫। গল্পগ্রন্থ: বাওফোটা ২০১৫। শিশুসাহিত্য: এক যে ছিলো শীত ও অন্যান্য গপ ২০১৬। মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস: জয় বাংলা ২০১৭। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে ধ্রুবপদ থেকে মুজিব ইরম প্রণীত কবিতাসংগ্রহ: ইরমসংহিতা ২০১৩, বাংলা একাডেমি থেকে নির্বাচিত কবিতার বই: ভাইবে মুজিব ইরম বলে ২০১৩, Antivirus Publications, Liverpool, England থেকে নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ গ্রন্থ: Poems of Mujib Erom 2014, ধ্রুবপদ থেকে উপন্যাসসমগ্র: মুজিব ইরম প্রণীত আউটবই সংগ্রহ ২০১৬, পাঞ্জেরী থেকে: প্রেমের কবিতা ২০১৮, বেহুলা বাংলা থেকে: শ্রেষ্ঠ কবিতা ২০১৮।
পুরস্কার: মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান-এর জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার ১৯৯৬। বাংলা কবিতায় সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৯, কবি দিলওয়ার সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪। কবিবংশ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪। শ্রীহট্টকীর্তন কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬। সম্প্রতি পেলেন বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার ২০১৭।
(আমরা এও যোগ করতে পারি- মুজিব ইরম নামের শব্দসংক্ষেপ মু.ই। মু.ই এর মাঝখানের বিন্দু তুলে দিলে শব্দটি হয় মুই। সিলেট আর বরিশালের ভাষায় মুই মানে আমি। জগতের সকল মুই মুগ্ধ হোক আমাদের মু.ই-র কাব্যকথায়। সকল মউতশীল প্রাণ 'আমি' যে-অনন্ত অসীম প্রেমময় অক্ষয় 'আমি'র কাছে ফিরে যায়, সে-'আমি'র দিদার নসীব হোক মুজিব ইরমের, আমীন।)