দিস ওয়ার অব মাইন
একুশ শতকের গেমগুলোকে শুধু গেম ভাবা ভুল। অনেক গবেষণা করে বানানো হয় এগুলো। বিশেষ করে সিমুলেশন ও স্ট্রেটেজি গেমগুলোতে বাস্তব জীবনের অনেক ফ্যাক্ট ও নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। This War of Mine এরকমই একটি গেম। যুদ্ধকালীন সময়ের উপরে ভিত্তি করে এই গেমটি তৈরি। তবে এ্যাকশন গেমগুলোর মত এখানে আপনাকে প্রতিপক্ষকে অস্ত্র-গোলাবারুদ দিয়ে ঘায়েল করতে হবে না বরং যুদ্ধে একজন সিভিলিয়ান হিসেবে কিভাবে আপনি টিকে থাকবেন, তার উপরে ভিত্তি করে এর গেমপ্লে নির্মাণ করা হয়েছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষদের জীবনে যে দুর্ভোগ ঘটে এবং টিকে থাকা যে কতটা কষ্টকর, সেটা বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস ও সিনেমাতে আপনি দেখে থাকবেন। সেরকম একটি পরিস্থিতিতে আপনি নিজে কী করবেন, সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই গেম। ক্রেয়নে আকা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি বাড়িতে শুরু হবে আপনার টিকে থাকার লড়াই। আরো দু্ইজন সঙ্গী থাকবে আপনার এই সার্ভাইভাল মিশনে। খাবার-পানি-আশ্রয় এবং পরিমিত বিশ্রাম নিয়ে আপনাকে অবিরাম ভাবতে হবে। ধ্বংসস্তুপ থেকে খুঁজে বের করা বিভিন্ন বস্তুর ব্যবহার করে শোয়ার খাট থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ আপনার নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। রান্না করার জন্য তৈরি করতে হবে চুলা। সংগ্রহীত উপাদানগুলো সব জোগাড় করতে হবে রান্না করে খাবার তৈরির জন্য। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের যন্ত্র তৈরি করে নিতে পারবেন নিয়মিত পানি সংগ্রহের জন্য। সবজি বাগান তৈরি করতে পারবেন তাজা খাবারের যোগান দিতে। এরকম জীবনের প্রতিটি প্রয়োজনীয় ব্যপারই আপনাকে যোগাড় অথবা তৈরি করে টিকে থাকতে হবে।
তিনজন সঙ্গী নিয়ে বেঁচে থাকার এই লড়াইয়ে নেতা হিসেবে আপনাকে ঠিক করে দিতে হবে প্রত্যেকের দায়িত্ব। হয়তো আপনার এক সঙ্গীকে দিলেন খাবার তৈরি করতে, অন্যজন ধ্বংসস্তুপ ঘেঁটে বের করছে প্রয়োজনীয় কোন না কোন উপকরণ। রাতে আপনি বের হলেন শহরের অন্য প্রান্তের ধ্বংসস্তুপ বা অন্যদের আস্তানা থেকে প্রয়োজনীয় বস্তু সংগ্রহ করতে, একজন গেল বিশ্রাম নিতে, অন্যজন বাড়ি পাহাড়ায় জেগে থাকলো। হ্যাঁ, টিকে থাকার যুদ্ধে আপনাকে শুধু নিজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সংগ্রহ করাই যথেষ্ঠ নয়। সেগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টাও আপনাকে দেখতে হবে। সবাই যখন অভাবী, সকলেই যখন টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত, তখন আপনার কষ্ট করে তৈরি করা রসদ ও উপকরণ চুরি হয়ে যেতে পারে। এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে লুট হতে পারেন। তাই আপনাকেও নিতে হবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা। সংগ্রহ অথবা তৈরি করতে হবে অস্ত্র। আপনি নিজেও অন্যের আস্তানা থেকে নিয়ে আসতে পারবেন নানা বস্তু। টিকে থাকার লড়াইয়ে এগুলো আপনি না চাইলেও করতে হবে।
ব্যপারটা যদি এমন হতো যে, নিজের রসদ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আপনি ভালো থাকতে পারতেন, তাহলে গেমটা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যেত। এই চমৎকার গেমটার গেমপ্লে শুধু ওটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।
তবে ব্যপারটা যদি এমন হতো যে, নিজের রসদ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আপনি ভালো থাকতে পারতেন, তাহলে গেমটা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যেত। এই চমৎকার গেমটার গেমপ্লে শুধু ওটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আপনি রাতে শহরের বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে যে রসদগুলো সরবরাহ করবেন, সেগুলো করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হবে। যেমন হয়তো এক বাড়িতে গেলে। সেখানে বাস করে দুই বুড়ো-বুড়ি। তারা আপনার কাছে কাকুতি মিনতি করবে তাদের জিনিষপত্র লুট না করার জন্য। কিন্তু আপনি নিরুপায় হয়ে নিয়ে আসলেন। বাড়ি ফিরে আক্রান্ত হবেন ডিপ্রেশনে। ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার করুন চেহারা এবং তাদেরকে লুট করার অভিজ্ঞতা আপনার ভেতরে অপরাধবোধের জন্ম দিবে। আপনি হতাশাগ্রস্থ হবেন। আপনার মন খারাপ হবে। কাজে মন বসবে না। ঘুমাতে পারবেন না। সঙ্গীরা আপনার সাথে বসে কথা বলে চিয়ার আপ করার চেষ্টা করবে। তাতে পরিস্থিতির খুব বেশী উন্নতি সবসময় হয় না। এরকম আরো অনেক অভিজ্ঞতা আপনার প্রতিদিনের সঙ্গী হবে, সেগুলো আপনাকে মানসিক ভাবে আক্রান্ত করবে। টিকে থাকার লড়াইয়ে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন যে ব্যপারটা, যেটাকে বলে টিকে থাকার মানসিক শক্তি, সেটা হারাতে শুরু করবেন। সার্ভাইভাল সাইকোলজির অসাধারণ রুপায়ণ আছে গেমটায়। যুদ্ধ যে মানুষের জীবনে কী ভয়াবহতা নিয়ে আসে, তা উপলদ্ধি করিয়েই ছাড়বে এই গেম। জীবন ও বেঁচে থাকা সম্পর্কে আরো জানার জন্য, টিকে থাকার কৌশলগুলো রপ্ত করার জন্য এই গেম হতে পারে আপনার জন্য হ্যান্ড অন এক্সপেরিয়েন্সের মত।