পদ্মাবতঃ সিনেমা এবং ইতিহাস
১.
১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দ। চৌসার যুদ্ধে দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ূনকে পরাজিত করে দিল্লীর সিংহাসন দখল করলেন শের শাহ্ শুরি। এই বছরই এক 'সূফী' কবি, নাস্তালিক লিপিতে, অবধী ভাষায় 'পদ্মাবত' নামে এক মহাকাব্য লেখেন। কবির নাম মালিক মোহাম্মদ জায়েসী। রাজপুত শৌর্য এবং রাজপুত জাত্যাভিমান ফুটিয়ে তোলা এই মহাকাব্য অনূদিত হয় অনেক ভাষায়। আরাকান রাজসভার কবি আলাওল, পদ্মাবতের অনুবাদ করেন 'পদ্মাবতী' নামে।
কাহিনী সংক্ষেপ যদি বলতে হয়, তা অনেকটা এরকম। সিংহল রাজের অনিন্দ্য সুন্দরী কন্যা, পদ্মাবতী। তার পোষা হীরামন পাখিটি একদিন উড়ে গিয়ে পৌঁছে চিতোরের রানা রতন সিং এর কাছে। পদ্মাবতীর রূপ-গুণের কথা শুনে রতন সিং শত বাঁধা পেরিয়ে, সিংহল গিয়ে তাঁকে জয় করে নেন। পত্নীরূপে পদ্মাবতীকে নিয়ে আসেন চিতোরে।
কিন্তু সুন্দরীর রূপের বাখান তো এক জায়গায় থেকে যায় না, ছড়িয়ে পড়ে। পদ্মাবতীর কথাও ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। দিল্লীর সুলতান সে সময়ে আলাউদ্দিন খিলজি। পদ্মাবতীর সৌন্দর্যের কথা শুনে তিনি পদ্মাবতীকে অধিকার করতে নিজের সৈন্যবাহিনী সহ চিতোর কেল্লার দিকে ধেয়ে যান। এরই মাঝে রতন সিং, কুম্ভলগড়ের রাজা দেবপালের সঙ্গে দ্বৈত যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওদিকে আলাউদ্দিনের আক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে, পদ্মাবতী সহ চিতোর কেল্লার নারীরা জহর পালন করেন। জহর পালন বা "জহর ব্রত" হচ্ছে কোন শহর দখল হবার পূর্বেই পুরনারীরা আত্মসম্মান রক্ষার্থে আগুনে ঝাঁপ (বা জহর বা বিষ) দিয়ে স্বেছায় মৃত্যুবরণ করতেন, যা সতীদাহের অনুরূপ।
২.
সাহিত্যের ইতিহাসে অনেক মহাকাব্য আছে, তার মাঝে ঐতিহাসিক মহাকাব্য কম নয়। কিন্তু কোন 'ঐতিহাসিক কাহিনী'-ই ইতিহাস নয়। সেখানে থাকে কবির কল্পনার ছোপ ছোপ রঙ। 'পদ্মাবত'-ও তাই। পদ্মাবতের শুরুতে মালিক মোহাম্মদ জায়েসী নিজেই লিখেছেন, এটি ইতিহাস নয় বরং কাব্য। সুতরাং জায়েসীর কাব্যে ইতিহাস খুঁজতে যাওয়া ভুল।
'পদ্মাবত'-এর অনুবাদ হয়েছে ফার্সিতে, বাংলায় আলাওল লিখেছেন 'পদ্মাবতী'। মোগল আমলে ভারতে ভ্রমণকারী অনেক বিদেশী বণিকও 'পদ্মাবত'-এর গল্প, তাদের লেখায় রেখেছেন। ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে রাজপুতানায় হেমরতনের হাতে 'গোরা বাদাল পদ্মিনী চৌপাই' নামে 'পদ্মাবত'-এর একটি সংস্করণ আসে। স্বাভাবিক ভাবেই জায়েসীর কাব্য হাতে হাতে কিছুটা হলেও বদলে যায়।
আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর আক্রমণ করেন, তাও সত্যি, কিন্তু সেখানে পদ্মাবতী নামে কোন নারীর সত্য অস্তিত্ব ছিল কিনা তা জানা যায় না।
জায়েসী যে কাহিনী লিখেছেন ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে, সেই কাহিনীর সময়কাল প্রায় দুইশ বছর পেছনে। আলাউদ্দিন খিলজি দিল্লীর সিংহাসনে ১২১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। দুইশ বছর পরে, জায়েসী কোন ইতিহাসের আলোকে লিখেছেন, তা আমরা জানি না। রতন সিং এবং আলাউদ্দিন চরিত্র দুটি ঐতিহাসিক। আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর আক্রমণ করেন, তাও সত্যি, কিন্তু সেখানে পদ্মাবতী নামে কোন নারীর সত্য অস্তিত্ব ছিল কিনা তা জানা যায় না। জিয়াউদ্দিন বারনী, কিংবা সমসাময়িক কোন ঐতিহাসিক-ই পদ্মাবতীর কথা লেখেন নি। পরবর্তীতে ফিরিশতার মতো পারস্যের ঐতিহাসিক, কিংবা রাজপুত ইতিহাসবিদ পদ্মাবতীর কথা বলতে চাইলেও উপযুক্ত তথ্য উপাত্ত দিতে পারেননি।
৩.
ইতিহাস আশ্রিত কাব্য, গল্প, উপন্যাস যেমন হয়, আধুনিক কালে সিনেমাও অবশ্যই হবে এবং সেই সিনেমায়-ও ইতিহাস খুঁজতে যাওয়া উচিত নয়। হলিউড, বলিউড সবখানেই সিনেমা একটি বানিজ্য। সুতরাং সিনেমা একটি পণ্য, কোন শিক্ষার মাধ্যম নয়। যদিও সিনেমাকে শিক্ষা কিংবা 'মেসেজ পৌঁছানোর মাধ্যম' হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু সেটা খুব একটা হয়ে উঠছে না। তাই সিনেমায় ইতিহাস খুঁজতে যাওয়া ভুল হবে।
ইতিহাস দেখার আশা যেমন করা উচিত নয়, তেমনি সিনেমায় ইতিহাস বিকৃত করাও উচিত নয়। প্রযোজক, পরিচালকেরও অন্তত উচিত 'ঐতিহাসিক সত্য'-র প্রতি সৎ থাকা। যেটা সঞ্জয় লীলা বানসালির 'পদ্মাবত'-এ হয় নি। প্রশ্ন হতে পারে, যেহেতু জায়েসীর কাব্য থেকে সিনেমা, সেখানে ঐতিহাসিক সত্যের কথা কেন আসবে?
জায়েসীর কাব্য-নির্যাস থেকেও যদি সিনেমা হয়ে থাকে, সেখানেও কিছু বিষয় থেকে যায়। প্রথমেই আসে, চরিত্রের কথা। আগেই বলা হয়েছে আলাউদ্দিন এবং রতন সিং চরিত্র দুটি ঐতিহাসিক। সুতরাং, এই চরিত্র দুটির প্রতি পরিচালকের আলাদা দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। খেয়াল রাখা দরকার যে আলাউদ্দিন খিলজি নিজেই এক কিংবদন্তী ইতিহাস। 'আকবর দ্য গ্রেট'-এর পূর্ববর্তী সবচেয়ে সফল সুলতান ছিলেন আলাউদ্দিন।
সেই চরিত্র চিত্রনেই পরিচালকের ভুল। আলাউদ্দিনের পোশাক, দরবারী আচার, ধর্মাচার, মালিক কাফুরের সাথে তার সম্পর্ক সবকিছু সম্পর্কেই লিখিত ইতিহাস রয়েছে। সুতরাং সে সম্পর্কে 'ধারনা করে নেওয়া'র কিছু নেই। আলাউদ্দিন, পদ্মাবতীর জন্য চিতোর আক্রমণ করেছিলেন কিনা তা আমরা জানি না। ধরে নেওয়া হোক, তিনি সত্যই নারী লোলুপ ছিলেন। কিন্তু, তার আচরণ যেমন 'বর্বর' দেখানো হয়েছে, আলাউদ্দিন সে রকম বর্বর ছিলেন না। সিনেমার বানিজ্যের খাতিরে রনভীর সিং-কে দিয়ে একটা Badass চরিত্র চিত্রিত করাই যায়; কিন্তু সেটা দুর্ধর্ষ যোদ্ধা এবং একজন দক্ষ প্রশাসকের চরিত্র, যিনি সত্যই বেঁচে ছিলেন এক সময়; তার সঙ্গে মেলে কিনা তা ভেবে দেখার সময় হয়ত পরিচালকের ছিল না।
ভারতে মুসলিম শাসকদের মধ্যে অন্যতম কুশলী যোদ্ধা ছিলেন আলাউদ্দিন খিলজি। সেই সঙ্গে তার ছিল দক্ষ অমাত্যবৃন্দ। সাম্রাজ্য বৃদ্ধি তার লক্ষ্য ছিল, এবং সেই উদ্দেশ্যেই চিতোর দখলের তার উদ্যোগ। আলাউদ্দিনের সেনা সংখ্যা ছিল প্রচুর, কিন্তু চিতোর দুর্গও ছিল তেমনি মজবুত। দুর্গ অবরোধ করে অনেকদিন অপেক্ষায় ছিলেন খিলজি। ইতিহাস বলে শেষ মুহূর্তে চিতোরের প্রতিরোধ ভেঙে যায়, এবং চিতোরের পতন হয়। খিলজি, চিতোরকে নিজের অধীন করে রতন সিং এবং তার পরিবারকে ক্ষমা করে দেন। অন্যদিকে সিনেমায় দেখানো হয়, কিংবা জায়েসীর কাব্যে পাওয়া যায় যে মুসলিমের দ্বারা অধিকৃত, সহজ কথায় ধর্ষিত হওয়া থেকে বাঁচতে, রাজপুত নারীরা জহর করেন।
৪.
রাজপুত, ভারতের অন্যতম সাহসী এবং রণকুশল জাত। এবং সেই সঙ্গে তাদের রয়েছে প্রচণ্ড জাত্যাভিমান। জায়েসীর কাব্য কিংবা বানসালীর সিনেমায় আগাগোড়া সেই রাজপুতী অহং এর কথা। রানা রতন সিং এখানে একজন প্রেমিক, একজন যোদ্ধা এবং রাজপুত জাতির মাথার মুকুট। তার রয়েছে বিশ্বাসী সেনাপতি। তারা তাদের মহারাজের জন্য প্রাণ দিতে দ্বিধা করে না।
এসব বুঝতে গেলে রাজপুতদের কথা কিছু জানতে হবে। এ কথা সত্য যে রাজপুত পুরুষেরা অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। ধর্ম এবং মাটির প্রতি তাদের ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা। যুদ্ধে প্রাণ দেওয়াই তাদের শৌর্য। কিন্তু এই জাতির কিছু শাখা আছে, সিসোদিয়া, রাঠোর, হাদা প্রভৃতি। অন্তর্কলহের জন্য এক সময় ভেঙে পরে তাদের রাজত্ব। আলাউদ্দিনের প্রায় আড়াইশ বছর পর সম্রাট আকবরের কাছে রাজপুত জাতি মাথা নত করে। যদিও আকবর তাদের সাথে মৈত্রী করতে চেয়েছিলেন, এবং তারা আংশিক রাজি হয়।
রাজপুত জাতি 'রক্ত শুদ্ধতায়' বিশ্বাসী। মোগল বংশে তারা তাদের মেয়ের বিয়ে দিলেও, কোন মুসলিম নারীকে তারা নিজেদের পরিবারে স্ত্রী হিসেবে আনেন নি। ধর্মীয় দিক দিয়ে শুদ্ধতা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট। জায়েসীর কাব্যে পদ্মাবতী ছিলেন সিংহল কুমারী। তার সঙ্গে তাই রতন সিং এর বিয়ের বিষয়টা অনেকটাই অসম্ভব। যদি বা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, রানী পদ্মাবতী নিজে একজন রাজপুত ছিলেন না। বানসালীর সিনেমায় দীপিকার কণ্ঠে, "রাজপুত নারীর কঙ্কনে ততটাই শক্তি আছে, যতটা আছে রাজপুতের তলোয়ারে", শ্রুতিকটু। সিনেমা নিয়ে বিতর্কে বলা হয়েছিল দীপিকা রাজপুতদের অসম্মান করেছেন, যেখানে আসলে তিনি রাজপুত ছিলেনই না।
৫.
আলাউদ্দিন খিলজির আড়াইশ বছর পর আকবর, চিতোরের পতন ঘটিয়ে হত্যা লীলা চালিয়েছিলেন। এমনই শোনা যায়। কিন্তু কেন? কেননা, আকবর চেয়েছিলেন মৈত্রী, কিন্তু বেপরোয়া জাত্যাভিমানী রাজপুতরা অকারণেই প্রাণ দিতে উৎসাহী ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দেওয়াই যেন তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। পুরুষেরা যুদ্ধ করবে এবং পরাজিত হলে নারীরা জহর করবে। জহর প্রথা চলে আসছে বহুদিন আগে। পরাজিত রাজপুত রমণীরা এক বিশাল অগ্নিকুণ্ডে আত্মাহুতি দেন।
'পদ্মাবত' সিনেমার শেষ তিরিশ মিনিটে এই রাজপুত জাত্যাভিমানের প্রদর্শনী ছিল। এবং রাজপুতদের এহেন আত্মাহুতির ঘটনাকে মহিমান্বিত করে দেখা বা দেখানো হয়। দেখলে বা শুনলে আসলেই সম্মান জাগে। কিন্তু এর পেছনেও একটু অন্ধকার দিক আছে। পরাজয় নিশ্চিত দেখলে রাজপুত পুরুষেরা মাদক গ্রহণ করে যুদ্ধে নামতেন। মূলত এই মাদক ছিল ভাঙ। অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় মৃত্যু হতো তাদের। অর্থাৎ, কেবল তীব্র অহং বোধ ছিল তাদের। অন্তঃপুরের নারীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তারাও আসলে কেউ প্রকৃতিস্থ থাকতেন না। স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতেন খুব কম সংখ্যক।
সম্রাট আকবর সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন আইন করে। চিতোরের জহর তার কাছে সতীদাহ প্রথার আরেক সংস্করণ বলেই মনে হয়। আজকে সিনেমায় বা ইতিহাসে যে জহরকে মহিমান্বিত করা হয়, তা আসলে অনেকটাই চাপিয়ে দেওয়া একটা সংস্কার ছিল।
সম্রাট আকবর সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন আইন করে। চিতোরের জহর তার কাছে সতীদাহ প্রথার আরেক সংস্করণ বলেই মনে হয়। আজকে সিনেমায় বা ইতিহাসে যে জহরকে মহিমান্বিত করা হয়, তা আসলে অনেকটাই চাপিয়ে দেওয়া একটা সংস্কার ছিল। সিনেমায় দেখানো হয় খিলজির ভয়ে পদ্মাবতী, অন্যান্যদের নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেন। অথচ, জায়েসীর কাব্য অনুসারে পদ্মাবতী জহর করেছিলেন স্বামীর মৃত্যুর কারণে, সতী হতে।
৬.
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'রাজকাহিনী'-তে পদ্মাবতীর কথা লিখেছেন। শ্রী পারাবত লিখেছেন 'মেবার বহ্নি পদ্মিনী'। উভয় রচনাতেই পদ্মাবতীকে সতী নারী, রাজপুতদের সাহসী, দেশপ্রেমিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু দুটো রচনার কোনটিতেই আলাউদ্দিনকে 'খলনায়ক' হিসেবে দেখানো হয় নি। তাঁকে দেখানো হয়েছে একজন প্রবল প্রতাপ শাসক হিসেবে, যিনি রূপের খ্যাতি শুনে পদ্মাবতীকে দেখার জন্য চিতোর অবরোধ করে বসে আছেন। এবং কেবল যখন তার সঙ্গে ছলনা করা হয়, আয়নায় পদ্মাবতীর এক ঝলক দেখিয়ে তখনই তিনি রুদ্রমূর্তি ধারন করেন।
বানসালীর সিনেমায় আগাগোড়াই আলাউদ্দিন একজন 'খলনায়ক'। সিনেমায় দেখানো হয় বিয়ের রাতে তিনি অন্য নারীতে উপগত হচ্ছেন। অর্থাৎ, তিনি নারীলোলুপ। অথচ, ইতিহাসে তার নারীলোভের কথা পাওয়া যায় না।
বানসালীর সিনেমায় আগাগোড়াই আলাউদ্দিন একজন 'খলনায়ক'। সিনেমায় দেখানো হয় বিয়ের রাতে তিনি অন্য নারীতে উপগত হচ্ছেন। অর্থাৎ, তিনি নারীলোলুপ। অথচ, ইতিহাসে তার নারীলোভের কথা পাওয়া যায় না। সিনেমায় দেখানো খিলজির বাচন, পোশাক কিছুই ইতিহাসের সত্যকে ধারন করে না। কল্পিত কাহিনী থেকে সিনেমা তৈরি হতেই পারে, কিন্তু ঐতিহাসিক চরিত্রের বিকৃতি সিনেমার মানকে কমিয়ে দেয় বলেই মনে হয়।
সিনেমা নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। মুক্তির পরে সব চুপচাপ। সিনেমা দেখে আমার মনে হলো হয়ত হুমকির পরে অনেক কিছু বদলানো হয়েছে। কেননা, অবনীন্দ্রনাথ, শ্রী পারাবতের গল্পে যেখানে আলাউদ্দিন নায়ক, বানসালীর সিনেমার ট্রেলার দেখেও তাঁকে অন্তত খল মনে হয়নি, অথচ সিনেমায় সে পুরোপুরি খল। আসলে খল বললেও ভুল হবে, শেষ দৃশ্যে তাঁকে 'ব্যর্থ' দেখানো হয়েছে। সোজা কথায়, 'ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা'। সবাই খুশি। অথচ, সিনেমা শেষ করে মনে হয়, 'ইতিহাস তো আশা করি নাই, এটা তো সিনেমাই হয় নাই'।
*জায়েসী সূফী কবি হিসেবেই পরিচিত। যদিও তার 'পদ্মাবত'-এ সূফী ভাব পাওয়া যায় না। খোদ জায়েসীকে অনেক কিংবদন্তী রয়েছে। এবং পদ্মাবত লেখা কালীন সময়ে তিনি কোন এক রাজপুত রাজার অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন।
*অবধী ভাষাঃ ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। উত্তর প্রদেশের দিকে এই ভাষার ব্যবহার ছিল।
*নাস্তালিক লিপিঃ পারস্যের একটি লিখনরীতি।
*মালিক কাফুর ছিলেন একজন খোঁজা ক্রীতদাস, যিনি আলাউদ্দিনের দরবারে অত্যন্ত ছোট জায়গা থেকে তার মূল পরামর্শদাতায় পরিণত হন। এ কারণে অনেকেই ধারনা করেন আলাউদ্দিন 'উভকামী' ছিলেন।
জিয়াউদ্দিন বারনীর বক্তব্য থেকে পাওয়া যায় যে জীবনের শেষ সময়ে আলাউদ্দিন, মালিক কাফুরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, এবং তাদের মধ্যে এক গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। এ থেকে অনেক এই সম্পর্ককে 'সমকামীতা' বলে থাকেন, আবার অনেক ঐতিহাসিক তা মানতে নারাজ।
সিনেমায় সরাসরি মালিক কাফুরের সাথে আলাউদ্দিনের সম্পর্ক দেখানো না হলেও বেশ কিছু সুত্র ছড়ানো ছিল।