নাঈম ফিরোজের কবিতা - পর্যবেক্ষণ, এ্যানোটেশন আর প্রেমপূর্ণ হৃদয়ের শিহরণ


কবিতারা স্থানকালের ভিতরের জিনিস। এদের ভিতর পরিভ্রমণ করা যায়। এদের ভিতর 'বেবি ইউনিভার্সেস' থাকবার কথা ভাবা যায়। অন্তহীন দেশ আর দেশ, অবারিত — অনবরুদ্ধ, যেখানে আসলে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম নাই, দিকদিশা নাই, উর্ধদেশ তলদেশ নাই, কোনোএক বিন্দু থেকে শুরু কোনোএক বিন্দুতে শেষ, ইনকমপ্লিট, তবু প্রতিটি পরিপ্রেক্ষিত একেকটি দেশ— সীমানাহীন দেশ।

কেননা, কবিতা অর্থপূর্ণ ও অর্থহীন অনুনাদ ও অনুনাদী, কবিতা অতঃপর আমাদের সামনে আকাশনন্দিনী। যেকোনো ব্যক্তির প্রিয় ও অপ্রিয় প্রসঙ্গ হয়ে উঠতে পারে কবিতা।

একটি কবিতা একটি কবিতা না, কবিতাংশ এবং একটি কবিতাংশ একটি কবিতা। কবিতার এ্যানালগি অশেষ। নতুন নতুন মেটাফর ত হয়ই। কবিতাকে ডিফাইন করতেও রূপক আসে। কবিতা এ্যালেগরির মাধ্যমে বিস্ময়কর মায়াবী হয়। 
ধরা যায় যদি কবিতা বৃক্ষ, বৃক্ষের ছায়া, তার ডাল, তার পাতা ফুল ফল। বৃক্ষটির সামগ্রিক ইমপ্রেশনের চেয়ে একটি ডালের গঠন অধিক ইনফেকশাস হতে পারে। এই সুন্দর দূর থেকে দেখা যায় না, কাছে থেকে, নিবিড়ভাবে দেখলে, দেখা যায়। কেননা, কবিতা অর্থপূর্ণ ও অর্থহীন অনুনাদ ও অনুনাদী, কবিতা অতঃপর আমাদের সামনে আকাশনন্দিনী।  যেকোনো ব্যক্তির প্রিয় ও অপ্রিয় প্রসঙ্গ হয়ে উঠতে পারে কবিতা। অন্ধকারের কবিতা আলোর কবিতাকে গ্লোরিফাই করে।

একই সূর্যকে পৃথিবীর একদিক থেকে অনেক জোয়ান বুড়া দেখেন অস্ত যাচ্ছে, অন্যদিক থেকে অনেক জোয়ান বুড়া দেখেন উদয় হচ্ছে। পৃথিবীর সব মানুষ একসাথে দেখে না সূর্যের ডুবে যাওয়া। পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হওয়ার কারণ ত আছেই। চাঁদ রুটি না হয়েও রুটি।

পড়ছি—দেখছি—ঘুরছি নাঈম ফিরোজ বিরচিত কবিতাগুলো। 
কোনো কোনো ভাবগর্ভ পংক্তির সাথে কথা বলি, চুপচাপ বসেও থাকি। কবিতার শব্দেরা সাক্ষাৎকার দিতে জানে। প্রশ্ন দিয়ে প্রশ্ন বানাতে পারে, উত্তর দিয়ে উত্তর, পর পর, কমপক্ষে সত্তর মারহালায় (স্তরে)। আবার, কবিতারা যুথবদ্ধ প্রশ্নোত্তর— যা প্রশ্ন তা উত্তরও হয়। কোনো কোনো কবিতার ঘ্রাণ 'চ্যানেল এ্যাল্যুর স্পোর্ট' মনে হতেই পারে। কোনো কবিতা অনবদ্য পর্যবেক্ষণশীলতারই টেক্সট—রিডিং এবং এ্যানোটেশন (annotation)।

উল্লেখ্য, জগতভ্রমণ শুরু করা যায় যেকোনো দেশ থেকে। যেকোনো ঘাট বন্দর ছোট গলি কিংবা বনাঞ্চলের কোল থেকেও শুরু করা যায়। এই জার্নি ইন্ টু দি পয়েটিকস অব নাঈম ফিরোজ, কোথা হতে শুরু হল, গোপন থাক। পাঠক ধরে নিতে পারেন, যেখানে শেষ হল, হয়ত এখান থেকেই শুরু হয়েছিল।

কথা শুরু করি এভাবে—
অতঃপর আমি 'বিষ্যুদবারের ভালোবাসা'-তে এসে থামলাম। 
এই ভালোবাসা নাঈম ফিরোজের। সেখানে 'ধোবাউড়ার আবহাওয়ার গল্প ভনে' গারো পাহাড়ের ক্লান্তচিচাম। (বই: উবে যাওয়া জলচোখ — নাঈম ফিরোজ)
প্রসঙ্গত বলি, আরব দেশগুলোতে 'লাইলাতুল খামিস', মানে 'বিষ্যুদবারের রাত' খুব তাৎপর্যমণ্ডিত। সকল প্রকার প্রিয়জনের সাথে একত্রিত হবার, গপ করবার, সুখ দুখ শেয়ার করবার রাত এটি।
নাঈম দেখান 'বিষ্যুদবারের ভালোবাসা কী গভীরতম, কতটা অমলিন, এই দিনে কোনো কথা নেই, গান ছাড়া।'
এখানে ভালোবাসা তথাকথিত 'সেক্স ডিজায়ার' এ সীমিত না। এখানে ভালোবাসার সুইটনেস ইনক্লুসিভ — চৌদিকে প্রবাহিত — সারকামফ্লুয়েন্ট। তাই গভীরতম আর অমলিন। তাই গানমগ্ন বা শিল্পমগ্ন, নিশ্চিন্ত, যদিও সীমিত পরিসরে 'বিছানার চাদর চুম্বকীয় ঢেউ জাগায়'। এখানে 'মেকিং লাভ', 'ডুইং লাভ', আকাংখা, দেহের মিলনে লয় ইত্যাদি কামের পক্ষে তথাকথিত ডিজায়ার ফুলফিল করবার ভেলকি নাই।

তারপর, তারপর আমি নাঈমের 'উড্ডয়নলীন রাত্রীর গান' শুনতে যাই 'নীল উল্কার দেশ'-এ। সেখানে টের পাই আকাশও কথা বলে। কিন্তু এই আকাশ 'তার' সাথে কথা বলে নি একতিল। আমি অবাক তাকিয়ে রই 'অভ্রপ্রতিম রানওয়ে' আর 'জানালায় শূন্যবক্ষ অন্তরীক্ষ' দেখে। সেখানেই 'সহস্র জোনাকি মিটিমিটি হাসছে'। কারণ সুসংগতিপূর্ণ ঐকতান প্রশান্ত করে মনোদেশ।

চৌদিকে সংকট ঘোরতর— আলোতেও অন্ধকারেও বিপদ। বিপন্ন বিষন্ন বিদীর্ণ মন রাহা চায়, উভয় সংকট থেকে বের হতে চায়। কারো কাছে নিরাপদ জীবন নাই। সন্তাপ মর্মভেদী বিলাপ দেখায় সাভার ট্রাজেডি।
জীবন সদা বিচিত্ররূপে প্রকাশ পায়। প্রগাঢ় দুঃখে কিংবা প্রবল সুখে থির থাকে না। কেবল পার হওয়া — কেবল অতিক্রম করা। চলতে চলতে যেকোনো সময় কোথাও শোনা যেতে পারে 'হরিৎ নাকফুলের ঘুমগান'। নাঈমকে দেখলাম এক জায়গায়— 'আমি আকাশের কাছে করি আত্মসমর্পণ' (অতিপুরাণ)। কেন এই সমর্পণ? আকাশের কাছে সমর্পিত হতেই হয়। আকাশ ত নিরাকার ফার্মামেন্ট, আকাশই অখিল — শূন্য — সোলার এ্যাপেক্স, আকাশ বিস্ময়কর পরিব্যপ্ত — পরিবেষ্টক। আকাশ তাইলে কি অস্তিত্বের উপসংহার নয়?

হয়ত আকাশ জানে মানুষের বুদ্ধির দৌড় কত দূর যাওয়ার পর আরো কতদূর যেতে পারে। মানুষ বিচার করতে করতে দেখে বিচার করতে পারে না। নাঈম দেখান— 'কাক তাড়িয়ে কখনো কোথাও মানুষের কান্না থামানো যায় নি।' কারণ মানুষের 'জুডিসিয়াল হাত বাজায় নিয়ত কলমসিম্ফনি'। (কাকতাড়ুয়া পারে আমি পারি না)

তারপর, 'ডানাবতী আনন্দ' আর 'গোলাপী অন্ধকার' দেখতে দেখতে পৌঁছি গিয়ে 'পৃথিবীর শেষ কয়েক ছত্র মেঘপত্র' যেখানে, সেই দেশে। নানা রঙের দুই শ একটি মেঘপত্রের রওশন মন টানে। এগুলোকে নাঈমকোড বলা যায় মনে হয়। কিছু যেনবা ক্রিপ্টোগ্রাফ, যেগুলোতে ফরেন কনটেক্সট, মনে হলো, কম্পারেটিভ এ্যাডভান্টেইজ দিচ্ছে।

কবিতা যখন পড়ি, তখন কেবল কবিতা পড়ি না ঠিক, কবিতাদের শহর বন্দর গ্রামে, কিংবা আলাদা আলাদা কবিতার ম্যাগনেটিজমের ভিতর ঘুরেফিরে দেখতেও পারি— অন্যরকম ভোর দুপুর সন্ধ্যা অথবা রোদ মেঘ বৃষ্টি বাদলের রূপ। আর হ্যাঁ, কবিতাতে অরূপের ঐশ্বর্যও থাকে। থাকে উজ্জ্বল অনুজ্জ্বল অনুভূতি উস্কে দেয়ার কারিকা।

সপ্তম মেঘপত্রে বৃষ্টির জাতীয়তা বৃটিশ দেখে চমকে উঠি! বৃষ্টি জাতীয়তাবাদী হয় কি? হয় অপ্রত্যক্ষভাবে। জাতীয়তাবাদও পায় বৃষ্টির খেদমত।  বাদশাহর রাজপ্রাসাদও বৃষ্টিভেজা হয়। হিটলারের জার্মানিতেও বৃষ্টি হয়েছিল। বর্ণবাদী জনগোষ্ঠীও রোদ বৃষ্টি জোছনা পায়। মহাসমুদ্রেও বৃষ্টি ঝড়ে। সামগ্রিক মিকানিজমে কিছু ব্যাপার থাকে যা আপাতদৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। আসলে দরকারি। মানুষের অজ্ঞতা — মুর্খতা — মুঢ়তা — বর্বরতাও প্রাসঙ্গিক, অপরিহার্য, থাকা লাগে। বর্ণবাদী পণ্ডিতমূর্খ (wiseacre) 'ভালো কাজের' জন্যে গুরুত্বপূর্ণ কেউ হতে পারে। বিষাক্ত মানুষটিও দানশীল হয়।

মেঘপত্র পঁয়তাল্লিশে 'বৃষ্টিলুকোনো বাগানে ক্ষতি-মৃত বিহ্বলতা'। মানুষের কিছু বুদ্ধি আছে বলেই কখনো হতবুদ্ধি হয়, বিমূঢ় হয়। জীবন সংশ্লিষ্ট সব ঘটনাই কি আমাদেরকে অবাক করে না? ভাল করে দেখলে আমরা প্রতি পদে ধন্দে পড়ি। হিসাব মিলাতে পারি না দর্শনের গাইডেন্স পাওয়া সত্বেও। দর্শন-বিশ্বাস-সত্য-ধারণা সমগ্র পরিপ্রেক্ষিত জুড়ে। দর্শনের হিসাবের ভিতর জীবনের আসা যাওয়া।
কবিতায় দর্শন কিভাবে থাকে তা বুঝবার জন্যে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের বিখ্যাত চার পদ আমরা দেখে নিতে পারি, মানে কবিতা কিভাবে দর্শন দেখায় ও শিখায়—
“One impulse from a vernal wood
May teach you more of man,
Of moral evil and of good,
Than all the sages can.”
(‘The Tables Turned’, 1798)
এর প্রৌজ প্যারাফ্রেজ হয়— 'One act of nature reveals more about morality than any philosopher’। সরল বাংলা অনুবাদ হয়— প্রকৃতির একটা কার্যধারা যেটুকু সত্য/ধর্ম/বিশ্বাস/নীতি/সূত্র শিখায়, তা একজন দার্শনিকের চেয়ে অনেক বেশি।
দর্শন ত love of wisdom, এই প্রেম ফুটতে পারে বিশেষ কবিতায়, দার্শনিকের সমিকরণের মতো না হোক, প্রচ্ছন্নভাবে ত আসছেই। দর্শন ত thinking of thinking. ফলে কবিতায় অলংকৃত চিন্তা ত পাই আমরা। কবিতা বিশেষ ভাষার শিল্প। তাতে ভাব থাকে, মানে চিন্তা থাকেই। চিন্তা দেখায় দর্শন।
ভালোবাসা একটি দর্শন, যে-দর্শন অজস্র দর্শনের নেটওয়ার্ক রচনা করে।
'তোমাদের হিমেল বিলুপ্তির দিনে আমার রক্ত ঝরে ভাই।' (মেঘপত্র ৫৫) কারণ মায়াবোধ ইনফেকশাস। মায়ার ম্যাগনেটিজম টানে। মায়ায় মায়া আনে। পৃথিবীর মাটিতে মায়াবীজ রোপণ করলে মায়াগাছ হয় মায়াফল ধরে। এই হিসাব দর্শনেরই হিসাব।

নাঈমের দুই শ একটি মেঘপত্র, তাতে, সত্তুরটি নাঈমের মেঘপত্র আর প্রতিনাঈমের সত্তুরটি মেঘপত্র মনে হয়েছে বেদনার জ্বলজ্বলে গান। কেননা 'মস্তিষ্কহীন! আমাদের অদ্ভুত দিন যাচ্ছে।' যেনবা কেউ না-বুঝতে বুঝতে পার হচ্ছে নির্ধারিত পথ। কারো মাথায় আসছে না, কেউ ভাবছে না 'বাছুর নিলাম হলে থাকবে কি মাখনের খোয়াব?' (মেঘপত্র ৪১) জীবনের আগামাথা আচ্ছন্ন থাকে জাস্টিস আর ইনজাস্টিসের ভেলকিতে। এর মাঝে 'মহাশূন্য হৃদের শিহরণ'(মেঘপত্র ৬৮)
নাঈমও টের পান না 'আয়নবেহালায় কে বাজায় কোথায় আমায়?'। আমরা দেখি, মেঘপত্রগুলোতে, মেঘ মানেই বেদনা ছাওয়া প্রকৃতি না, সেখানে আনন্দ ও বেদনার দাম্পত্য  ফ্যাকটাম গ্রণ্থিত।
কবিতায় ফ্যাকটাম থাকে কেন?
ফ্যাকটাম মানে formula, মানে law, মানে way of doing something, মানে অন্ধভাবে অনুসৃত নিয়ম, মানে দর্শন।
কবিতা নিজেই একটি দর্শন। কেননা, কবিতাও একটি way of knowing. কবিতা প্রকাশ পায় কবিতারই পয়েটিসিজম ধারণ করে। 
বিশ্বাস ত বিশ্বাসই, অবিশ্বাসও বিশ্বাস। বিশ্বাসের ভিতর আমরা পাই, notion, idea, concept, thought ইত্যাদি। দর্শন কি বিশ্বাসও নয়?
কোনোএকটা নোশন গদ্য প্যারাফ্রেইজে বলা যায়। আবার এটিকে কেউ অলংকৃত ভাষায় প্রকাশ করলে হয় কবিতা। তার মানে কি এই হলো না যে, একটি দর্শনকে দুইভাবে বলা?
কবিতা যখন insight provide করে, তখন সেই কবিতাকে আমরা অন্তর্দৃষ্টিসমৃদ্ধ কবিতা বা দর্শনের সারসমৃদ্ধ কবিতা বলি। যেমনঃ খলিল জিবরানের সব কবিতা।
মানে, কবিতার ভিতরে কাব্যিক হয়ে কেবল দর্শন প্রকাশ পায় না, কবিতা নিজেও একটি দর্শন। অতএব দর্শন আসমান আর কবিতা জমিন এমন পার্থক্য নাই। আসমান আর জমিন ভাবলে আরেকটি চমৎকার সত্য সামনে আসে। সেটি এই যে, অবারিত নভস্থল পৃথিবীর জমিনের চৌদিকে, কিংবা আরেকটু আগে বেড়ে বলা যায়— অনবরুদ্ধ স্থানকালে ফুটলো পৃথিবী, ফুটলো জমিন পৃষ্ঠে তার, দুর্নিবার।

আমরা দেখি কবিতা দর্শন দেখায় এভাবে—
'ঈশ্বরের ঘ্রাণ নিয়ে/শাফায়াৎ নেমে আসে/চোখের উজ্জ্বলতম কর্ণিয়ায়' (ঈশ্বরের ঘ্রাণ)
'হাইওয়েতে কারা যেনো না জানিয়ে— চুপিসারে প্রজাপতি হয়ে গেলো!' (মেঘপত্র ৮৫)
কিংবা
'সোডিয়াম আলোর নিচে ঢাকার সন্ধ্যাতারা খুব উদ্দাম, আত্মদ্রোহী!' (মেঘপত্র ৯৩)
অথবা
'মেসোপটেমীয় রাত ফরাসী হরিণের মৃত্যুক্ষুধায় লীন।' (মেঘপত্র ৯৪)
নয়ত এভাবে
'একটা নীল রিকশা ঘুমিয়ে আছে বীজঘরে।' (মেঘপত্র ৯৫)

দর্শন ত সবখানে, সবকিছুর ভিতর। কিন্তু দর্শনের তাৎপর্য দেখবার স্থিরতা সচেতনতা থাকা লাগে। অস্থির ক্ষুব্ধ বিক্ষিপ্তচিত্ত থাকলে দৃশ্যের ভিতরে নজর রাখবার সুযোগ মিলে না। নাঈম দেখান 'আন্তঃরিক্ততার সরোবরে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে হু হু সময়' (মেঘপত্র ১০০)

নাঈমের মেঘপত্রগুলোর অন্য বিশেষত্ব এই যে, ওসবের মাঝে ছোপ-ছোপ — splashy সুন্দর, মানে, ভাবের মনোহর স্ফুটন আছে। যেমনঃ

'গাড়ির হর্ণে ডুবে থাকে সিরিনিটি' — 'নিদ্রাতুর বৃক্ষের শরীর থেকে কে ডাকে পলে পলে' — 'রি রি রাই ক্ষেতে হলদে পতঙ্গের মদিরা ও যতিচিহ্ন' — 'এভাবেই আমি নিয়ন কান্নার ছায়াপথ' — 'এই জনপদে দরিদ্র ও ক্ষুন্নমনাদের আকাশপট দেখি' — 'ডানা মেলে বাও খোঁজে ইলিউশান' — 'এতো শীতল অংকুর কীভাবে মেলে দুস্টুমির পল্লব' ইত্যাদি।

হ্যাঁ, মেঘ মানেই মেঘ না। ধবল মেঘেরা বলে দ্যায় দিন সুন্দর, মেঘলা না। তারা মেঘ, তবু তারা পরিচ্ছন্ন আকাশের অলংকার।

হ্যাঁ, মেঘ মানেই মেঘ না। ধবল মেঘেরা বলে দ্যায় দিন সুন্দর, মেঘলা না। তারা মেঘ, তবু তারা পরিচ্ছন্ন আকাশের অলংকার। নাঈম ফিরোজের মেঘপত্রেরা মেঘ ও মেঘহীনতাকে ধারণে সমর্থ দেখেছি। প্রীতিকর এ পয়েটিক্স ভ্রমণে আমি বোধ হয় মেঘপত্রদের কাছেই থাকলাম বেশিক্ষণ।




প্রথম প্রকাশঃ 2017
নাঈম ফিরোজের তৃতীয় কবিতবই 'পৃথিবীর শেষ কয়েকছত্র মেঘপত্র' কবিতাসুষমার এক অভিনব ও সুননন্দ চিঠিগুচ্ছ।

প্রাপ্তিস্থানঃ