এজ অব ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার
বর্তমান সভ্যতা তথ্য-প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্সের উপরে খুব বেশী নির্ভরশীল। মহাকাশ যান প্রেরণ থেকে শুরু করে দোকানে গিয়ে এক হালি ডিম কেনার জন্য ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, সবই এই তথ্য-প্রযুক্তির দ্বারা হচ্ছে। আর এই পুরো ব্যপারটা দাঁড়িয়ে আছে যোগাযোগ ব্যবসস্থায় ইলেকট্রনিক যোগাযোগের উপরে নির্ভর করে। বাংলাদেশে যদিও ওভাবে এখনো ব্যপক ভাবে এটা শুরু হয়নি, কিন্তু উন্নত বিশ্বে এই ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ছাড়া জীবন প্রায় অচল। এসব প্রযুক্তি সেনাবাহিনী ও যুদ্ধক্ষেত্রেও ব্যপক ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাবুন আফগানিস্থানের আমেরিকার আক্রমণের ব্যপারটা। হাজার মাইল দূরে কম্পিউটারের সামনে বসে ড্রোন হামলা করে হাজার হাজার মানুষ মেরে ফেলা কিংবাদ অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান ও মিসাইল হামলা, সবই সম্ভব হচ্ছে এই ইলেকট্রনিক যোগাযোগের দ্বারা।
ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (EW) কী?
যেহেতু এসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি পুরোপুরি ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরে নির্ভরশীল সেহেতু কেউ যদি এই ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাঁধা তৈরি করতে পারে, তাহলে পুরো ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়ে। খুব সাধারণ একটা উদাহরণ হিসেবে সেল ফোন ও WiFi সিগনাল জ্যামিং ডিভাইসগুলোর কথাই ধরুন। খুব অল্প দামে এগুলো আপনি দোকান থেকে কিনে এনে ছোট পরিসরে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও WiFi অকার্যকর করে দিতে পারবেন। সাধারণত ২০ থেকে ১০০ মিটার রেঞ্জের ভেতরে এসব স্বল্পমূল্যের ডিভাইস কাজ করে থাকে। কিন্তু ভাবুন একই ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইসের কথা, যেটা কয়েক কিলোমিটার থেকে শত কিলোমিটার পর্যন্ত সেলফোন ও WiFi জ্যাম করতে সক্ষম। আপনার পুরো এলাকা কিংবা দেশেই তখন মোবাইল ফোন আর ওয়াইফাই ইন্টারনেট অকার্যকর হয়ে যাবে। সামরিক যন্ত্রপাতিগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাও এভাবে ব্লক করে দেয়া সম্ভব। জিপিএস সিস্টেম অকার্যকর করে দেয়া সম্ভব। এভাবে বিভিন্নরকম জ্যামিং করা সম্ভব হলে অত্যাধুনিক ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, মিসাইল ও ড্রোনগুলো ধাতব জঞ্জালে পরিনত হয়। আর এই পুরো ব্যপারটা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বা EW নামে পরিচিত।
ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের (EW) ব্যপারটা কিভাবে কাজ করতে পারে? একটু ধারণা করা যাক। ধরুন শত্রুপক্ষ দু'টো মিসাইল পাঠিয়েছে যথাক্রমে A ও B কোঅর্ডিনেটে আঘাত করার জন্য। আপনি একটা ডিভাইস দিয়ে পৃথিবীর মূল জিপিএস স্যাটেলাইটগুলোকে জ্যাম করে দিয়ে নিজের মত latitude longitude জেনারেট করলেন। প্রথম মিসাইলটাকে আপনি A হিসেবে যে জায়গাটাকে দেখালেন সেটা হচ্ছে D এবং দ্বিতীয়টার B কেও D জায়গায় দেখিয়ে দিলেন। রাডার দিয়ে দু'টো মিসাইলের গতিপথ ও স্পিড পর্যবেক্ষন করে দু'টোকেই একই সময়ে ঐ কোঅর্ডনেটে পাঠালেন। তাহলে কী হবে? মিসাইল দু'টো তার মূল জায়গায় আঘাত হানার পরিবর্তে একে অপরকে আঘাত করবে।
কোনরকম এন্টি মিসাইল ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার না করে এভাবে শত্রুপক্ষের মিসাইল ব্যবহার করেই সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হলো। ব্যপারটা এভাবেই করা হচ্ছে কিনা নিশ্চিত না তবে জিপিএস সিস্টেমে এধরনের মেনিপুলেশন সম্ভব।
অথবা ধরুন মিসাইলের টার্গেটে থাকা জিপিএস কো-অর্ডনেট শত্রুশিবিরের ঘাঁটিতে দেখিয়ে দিলেন। তাহলে নিজেদের মিসালে তারা নিজেরাই কুপকাৎ হলো।
ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ইন এ্যাকশন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সিরিয়ার যুদ্ধে জিপিএস সিগনালে বাঁধা সৃষ্টি করে আমেরিকান ড্রোনগুলোকে অকার্যকর করে দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছিলো কিছুদিন আগে। আমেরিকান সেনাবাহিনীর হাতে EC-130H Compass Call নামে একটি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান রয়েছে যেটি আকাশ থেকেই একটি এলাকার সমস্ত কমিউনিকেশন সিস্টেম ভেঙে দিয়ে শত্রুপক্ষের আধুনিক সমরাস্ত্রগুলোকে অকার্যকর করে দিতে পারে। সম্প্রতি তাদের এই অত্যাধুনিক বিমানকেও অকার্যকর করে দেয়ার প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে অন্যপক্ষ। আমেরিকানরা এর জন্য রাশিয়াকে সন্দেহ করে থাকলেও এখনো নিশ্চিত নয় আসলে কারা করছে এটা। ধীরে ধীরে এধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। একটা পর্যায়ে হয়তো আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত সেনাবাহিনী তাদের অচল ট্যাংক আর যুদ্ধ বিমানগুলো রেখে বন্দুক হাতে নেমে পড়তে বাধ্য হবে। পৃথিবীর ইতিহাস ও ভূ-রাজনৈতিক চিত্র ব্যপকভাবে প্রভাবিত করতে যাচ্ছে এই প্রযুক্তি।