সময় ও ভালোবাসা

নীলু ডিপার্টমেন্টের জানালার শার্সিতে চোখ রেখে বাইরে তাকাল। সুদর্শন ছেলেটা দাঁড়িয়ে সেখানে। সে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, 'তুমি কি জানো, ভালোবাসা কী?' আমি বললাম, 'জানি'। নীলু বলল, 'সত্যি জানো?' আমি বললাম, 'হুম'। নীলু বলল, 'কী?' আমি বললাম, 'ভালোবাসা মানে তোমার চোখ। যতবার তোমার চোখে তাকাই, ততবার ভালোবাসি। নীলু ঠোঁট উল্টে টিপ্পনী কাটল, 'সবসময় ন্যাকামি। অসহ্য'। আমি বললাম, 'সত্যি অসহ্য?' নীলু বলল, 'হু, তুমি কেমন কাদা জলের মতন লেদলেদে টাইপ। বড্ড সেকেলে! ঝাঁঝ নেই, বিরুদ্ধ স্রোত নেই, অনিশ্চয়তা নেই। খুব বেশি প্রেডিকটেবল। এমন ভালোবাসা ম্যাড়ম্যাড়ে লাগে খুব'।  আমি বললাম, 'তোমার অন্যরকম ভালোবাসা পছন্দ? একালের? ঝাঁঝাল, অনিশ্চিত ভালোবাসা?' নীলু সাথে সাথে জবাব দিল না। চুপ করে রইল জানালার বাইরে। ছেলেটা বাইকে উঠল, চলে গেল গলির আড়ালে। নীলু ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাল, তারপর বলল, 'হু, আই লাভ থ্রিল!' ...



গল্প : লুক থ্রু, সি থ্রু

সোহেল নামে আমার পরিচিত লোক ষোলজন। প্রতিদিন দেখা হয় তিন জনের সঙ্গে। সোহেলে সোহেলে যাতে ক্লাশ না লাগে তাই সবচেয়ে ঘনিষ্ট সোহেলকে আমি বলি বন্ধু সোহেল। বন্ধু সোহেল লোক ভাল। আমার জন্য বেশ দরদ তার। বলতে গেলে সে আমার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড। কিসে আমার ভাল আর কিসে মন্দ তা নিয়া সে দিনে দুই মিনিট হলেও চিন্তা করে। এই গল্পের বিষয় অবশ্য সোহেল না। তবু সোহেলকে দিয়া শুরু করলাম। সোহেল পড়লে খুব খুশি হবে। সে অনেকদিন ধরে বলতেছে, বন্ধু তুমি আমারে নিয়া একটা গল্প লেখো। সোহেলরে নিয়া কী লেখা যায় আমি ভেবে পাই না। তাই আর লেখা হয়ে ওঠেনি। সোহেলের জীবনটা সাদামাটা। মগবাজার মোড়ে ওদের একটা অ্যাড ফার্ম আছে। ফার্ম অবশ্য নামেই, কামে মুরগি। মানে সোহেল অ্যাডের কাজ পায় না। খালি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়া ছবি তোলে। আজ জন্মদিন তো কাল বিয়ে, পরশু এক্সিবিশন। সে হলো প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফার। পসার মোটোমুটি ভাল। ডাক পড়ে নিয়মিত। আমরা যতটা ভাবি ততোটা কিন্তু সত্য না। শহরের লোকজনের জীবনে উৎসব নাই, ইহারা সর্বদা মুখ গোমড়া ক...



গল্প: আধুনিক পৃথিবী

বাসার কাজের মেয়েটা হঠাৎ করে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। জানি, এই কথাটা শোনার পর থেকে আপনারাও আমাকে সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করছেন। করেন, তাতে আমার আপত্তি নাই। ষোল বছর ধরে বিয়ে বসছি যে মেয়ের সঙ্গে সেই যখন সন্দেহের চোখে দেখছে তখন আপনাদের আর কী দোষ। আপনারা তো সবে দুই মিনিট ধরে আমার গল্প পড়ছেন। পড়তে থাকেন, সন্দেহও করতে থাকেন। এই মুহূর্তে আমার প্রত্যেকটা সেকেন্ড কাটছে মারাত্মক টেনশনে। আমার অবস্থা-না পারছি কইতে না পারছি সইতে। আমি বললেই যে মানুষ শুনবে তারও নিশ্চয়তা নেই। পরশু দিন ছিল শনিবার। নীতার অফিস বন্ধ। কিন্তু আপনারা তো জানেন আমার অফিস খোলা। তাই আমি অফিসে আসছিলাম। এসে একটা ফুল কাপ কফি নিয়ে ডেস্কে বসে জাস্ট ফেসবুকটা খুলছিলাম। অমনি নীতার ফোন। একটা বিরাট সমস্যা হইছে। এখনি বাসায় আসো। কেন কী হইছে, বলার আগেই দেখি ফোন কাট। কলব্যাক করলাম। ফোন বিজি। মারাত্মক ব্যাপার। মনে মনে চিন্তা করলাম, তাহলে কি চাচা শ্বশুর সাহেব মারাই গেলেন। পরশুদিন হার্টের সমস্যা নিয়ে স্কয়ারে ভর্তি হয়েছিলেন। ইন্নালিল্লাহ বলেও...