যে উদ্ভাবনগুলো বদলে দিয়েছে সভ্যতা - ২
![](https://gleeera.com/bangla/uploads//main/2017/5aa49664b7c3b3.44801179.jpg)
মানব সভ্যতার আবিষ্কার বা উদ্ভাবনগুলোর ইতিহাস লিখতে গিয়ে যে ব্যাপারটা সবচাইতে বড় সমস্যা তৈরি করে সেটা হচ্ছে আবিষ্কারের সময়ের অনিশ্চয়তা। পাথরের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্র ছাড়া বাদবাকী সকল যন্ত্রই মাটির সাথে এমনভাবে মিশে যেতে পারে যে দশ থেকে বিশ হাজার বছর সেগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তথাপিও গবেষকরা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট থেকে পাওয়া বস্তুগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর সময় নিরূপণ করে যাচ্ছেন। এভাবে কোন একটি জিনিষের বয়স এখন পর্যন্ত যত বেশী পাওয়া গিয়েছে, সেটাকেই ওটার প্রাথমিক আবিষ্কারের সময় ধরে নেয়া হয়। মানব সভ্যতা বদলে দেয়া এক হাজার উদ্ভাবন জানানোর উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্বে আজকে আমরা হাজির হয়েছি আরো পাঁচটি উদ্ভাবন নিয়ে।
বড়শি (Fishhook)
মানুষ যখনই প্রথম বড়শি তৈরি করে থাকুক না কেন, এটা মানব সভ্যতাকে অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে।যেহেতু পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগই পানি সেহেতু পানির নিচের এই প্রোটিন ভাণ্ডার মানুষের কাছে আরো বেশী উন্মুক্ত করতে বড়শির বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
টালি স্টিক (Tally Stick)
ড্রিল বা ফুটো করার যন্ত্র (Drill Machine)
বিভিন্ন ধাতু আবিষ্কার করার পর সেগুলো ফুটো করা, কাটা ইত্যাদি কাজে ড্রিল মেশিনের ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়। এসব ড্রিল করার যন্ত্রের মাথায় ড্রিল পিট হিসেবে ধারালো পাথর থেকে শুরু করে চোখা করে নেয়া হার ও কাঠও রয়েছে। আধুনিক যুগে ড্রিল পিট হিসেবে খুব শক্ত হাই-কার্বন স্টিল ব্যবহার করা হয় যেগুলো দিয়ে অনেক কঠিন বস্তুও ফুটো করা সম্ভব। এমনকি পৃথিবীর বুকে ফুটো করে খনিজ পদার্থ আহরণ করার মত ড্রিল মেশিনও মানুষ তৈরি করেছে এবং অহরহ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ড্রিল মেশিন উদ্ভাবন করার ফলে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ও যান্ত্রিক কৌশল সহজেই মানুষের আয়ত্বে আসে। একারণে, এটিকে মানব সভ্যতার অন্যতম বড় একটি উদ্ভাবন হিসেবে দেখা হয়।
ধারালো পাথরের ব্লেড (Sharp Stone Blade)
যে পদ্ধতিতে পাথরকে এভাবে ধারালো করা হয়, তা লিথিক রিডাকশন (lithic reduction) নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে আরেকটি পাথর বা কাঠ দিয়ে পাথরটার গায়ে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলা ধারালো অংশটুকুকে ব্যবহার করা হয়। এই ধারালো পাথর খণ্ডগুলো হার, কাঠ ও বিভিন্ন বস্তুর সাথে জুড়ে দিয়ে ছুরি, বর্শা, তীর ও নানারকম অস্ত্র তৈরি করা হতো। এসব কাজে মূলত চকমকি পাথর বেশী ব্যবহার করা হতো কারণ ওটি অনেক শক্ত এবং সহজে ভেঙ্গে যেত না।
এই ধারালো পাথরের ব্লেডগুলো মানুষকে শিকার ও নানাধরনের যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যপকভাবে সাহায্য করেছে। মানুষের এগিয়ে চলার পথে এটাও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ছিলো।
সেলাই (Sewing)
![](http://res.cloudinary.com/localtech/image/upload/v1520741655/GleeEra/2018/articles/invention/sewing.jpg)
মানুষ পোষাকের ব্যবহার শুরু করে প্রায় চারলক্ষ বছর আগে। কিন্তু সেলাই বা সূচীকর্মের নজীর পাওয়া যায় খৃষ্টপূর্ব ২৫ হাজার বছর আগে। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে এবং রাশিয়ার মস্কোর কাছাকাছি সূই পাওয়া যায় যেগুলোর বয়স খৃষ্টপূর্ব ২৫ হাজার বছর। হাতির দাঁত ব্যবহার করা হয়েছিলো এগুলো বানাতে।
সুই এবং সেলাই মানব সভ্যতায় পোষাক শিল্পের ব্যপক উৎকর্ষ সাধন করে। একইসাথে বিভিন্ন সজ্জা ও পরিবহনের কাজে পশুর চামরা ও বিভিন্ন জিনিষের তৈরি ব্যাগ তৈরিতে সমর্থ হয় মানুষ। পশুর দাঁত, শক্ত বীজ ও মাছের কাটা এভাবে সেলাই করে ডেকোরেশনের কাজে লাগানোর নজীর পাওয়া যায় ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডে। আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসীদের কাছেও সেলাইয়ের প্রযুক্তি পাওয়া যায়। তারা বিভিন্ন গাছের পাতা, পাখির পাখা সেলাই করে নানা ধরনের পোষাক ও সাজ-সজ্জা তৈরি করতো।
প্রথম ধাতব সূই তৈরি করা হয় ব্রোঞ্জ এজে, খৃষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে ৮০০ এর ভেতরে। উত্তর আফ্রিকা এবং চীনে এযুগের কিছু সূই পাওয়া গিয়েছে। এমনকি বোতামের জন্য তৈরি বাটনহোল আবিষ্কার হয় খৃষ্টপূর্ব ৪২০০ সালে। খুব জটিল ধরনের সেলাই কাজ (Eg. Embroidery)-র নমুনা প্রথম পাওয়া যায় ব্রোঞ্জ এজের প্রাচীন মিশর ও ভারতবর্ষে। একই সময়ে চীনাদের রেশমি কাপড়ের নমুনা মেলে।