ভালো লেখক হবেন কিভাবে?
আপনি হয়তো নিজেকে লেখক ভাবেন না অথচ আপনি একজন লেখক। সেই ছোটবেলা অ আ ক খ লেখার ভেতর দিয়ে আপনার লেখালেখির হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছে। তারপর এতগুলো বছর পড়ালেখা করতে গিয়ে আপনি কত হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন ভেবে দেখুন। তবে হ্যাঁ, আপনি হয়তো একজন ভালো লেখক নন। এর কারণ হচ্ছে আপনি কখনো লেখক হতে চাননি অথবা লেখক হওয়ার ব্যপারটা নিয়ে ভাবেননি। এছাড়াও লেখালেখি নিয়ে ভাবনা ও চর্চার অভাবে আপনি ওভাবে লেখক হয়ে উঠতে পারেননি। এই ভাবনা ও চর্চার জায়গাটা যদি পুরন করা সম্ভব হয়, তাহলে নিজেকে আপনার লেখক দাবী করা খুব অন্যায় হবে না। কিভাবে নিজেকে একজন লেখক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন? চলুন, কিছু মৌলিক ব্যপার জেনে ফেলা যাক।
লেখকের মনন
লেখালেখি হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশের একটা মাধ্যম। কথা বলার মতই। আপনি কী বলবেন বা লিখবেন, এটা আপনার চিন্তা-ভাবনা ও ভাবার ক্ষমতার উপরে নির্ভরশীল। ভাষা এখানে একটা টুল মাত্র। যদি আপনি চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন, ভাবনাগুলোকে গুছিয়ে আনতে পারেন, তাহলে কোন ভাষায় বলছেন বা লিখছেন সেটা বড় ব্যপার না। যেকোন ভাষাভাষীদের সংস্কৃতি, ভাষার গুরুত্বপূর্ন শব্দগুলো ও বেসিক ব্যকরণ জেনেই আপনি সেই ভাষায় লেখালেখি করতে পারবেন। তাই চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা এখানে সবচাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ন। ভালো লেখক হওয়ার জন্য আপনাকে চিন্তা করা শিখতে হবে। এই শেখার জন্য নানা ধরনের বই পড়তে পারেন, চিন্তাশীল লোকদের সাথে মিশতে পারেন, আলোচনায় অংশ নিতে পারেন এবং প্রতিদিনের প্রতিটি ঘটনা নিয়ে চিন্তা করার চর্চা শুরু করতে পারেন। এভাবেই ধীরে ধীরে আপনার লেখক সত্তা ও মনন গড়ে উঠবে।
লেখালেখিতে ভাষা ও সংস্কৃতি
বাংলা যেহেতু আমাদের মাতৃভাষা এবং আমরা যেহেতু এখানেই বড় হয়েছি; তাই বাংলা ভাষাতেই লেখালেখি শুরু করতে পারেন। এভাবে আপনি যদি ভালো একজন লেখক হয়ে উঠতে পারেন তাহলে অন্য যেকোন ভাষা ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুদিন জ্ঞান লাভ করে সেই ভাষাতেও লিখতে পারবেন। যেকোন ভাষায় লেখালেখির জন্য সেই ভাষা ও ভাষাভাষীদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হয়, বুঝতে হয়। এই জানাশোনা ও বোঝাপড়া যত গভীর হতে থাকবে আপনি ততই ভালো লেখক হয়ে উঠতে থাকবেন। তাই প্রথমে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করুন। এজন্য প্রচুর পড়ুন এবং সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।
লেখালেখি চর্চা ও আলোচনা
লেখালেখি একটা চর্চার ব্যপার। তাই প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখার চেষ্টা করতে হবে। তা দুইশত শব্দ হোক কিংবা দুই হাজার শব্দ। তাই লিখুন এবং লিখতে থাকুন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখুন। লেখার বিষয় খুঁজে না পেলে ডায়েরী লিখুন। ফেসবুকে ঢুকে লোকজনের মতামত দেখে সেটার উপরে আপনার ভাবনাটা লিখে ফেলুন। চাইলে তা ফেসবুক বা কোন মিডিয়ায় শেয়ার করতেও পারেন নাও পারেন। লিখুন শেখার জন্য, আনন্দের জন্য। নিজের লেখাগুলো ভালো কোন লেখক বা চিন্তককে দেখান, তার সাথে আলোচনা করুন। পরামর্শ গ্রহণ করুন। এভাবেই ধীরে ধীরে আপনি একজন ভালো লেখক হয়ে উঠবেন।
নিজের লেখা নিজে পড়ুন
কিছু লিখে ফেলার পর ড্রাফট করুন প্রথমে। তারপর সেটা পড়ে ফেলুন, কয়েকবার। একটু বিরতি নিন। কয়েক ঘন্টা পর আবার পড়ুন। পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে আবার পড়ুন। দেখবেন, অনেক ভুল ধরতে পারছেন। এভাবে আপনার লেখা ধীরে ধীরে সুন্দর হবে। তাই যেকোন লেখা হুট করে পাবলিশ করে ফেলবেন না। ড্রাফট করে রাখুন এবং নিজে পড়ুন। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মুডে। নিজেকেই নিজে সাজেশন দিতে পারবেন তাহলে। আপনার লেখার মান উন্নত হবে।লেখকদের খাদ্যাভাস
লেখালেখি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যপার। ভালো লেখক হওয়ার জন্য মস্তিস্ক ও মন শীতল ও শানিত রাখতে হবে। এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট ধরনের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে এবং কিছু খাবার নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যাভাসের বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটা পড়ুন- মনোযোগ বাড়াতে খাদ্যাভাস ।
লেখালেখিঃ বই পড়া
লিখতে হলে জানতে হবে। আর জানার জন্য বই পড়ার অভ্যাস হচ্ছে সবচাইতে সহজ পথ বা শর্টকার্ট। তাই পড়তে চেষ্টা করুন। বাংলা ভাষায় লেখালেখি করার জন্য যেসব বই আপনার জন্য বিশেষ সহায়ক হতে পারে, তার একটি তালিকা পরবর্তী লেখায় দেয়ার চেষ্টা করবো। আপাতত এই বইগুলো সংগ্রহ করে ফেলুন-
১) বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান ১ ও ২ By বাংলা একাডেমী
২) যথাশব্দ By মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
৩) বাংলা লেখার নিয়মকানুন By হায়াৎ মামুদ
৪) প্রমিত বাংলা লেখার নিয়মকানুন (বাংলা বানান শেখার সহজ উপায়) By ড. মোহাম্মদ আমীন , হায়াৎ মামুদ
আজকের মত এখানেই শেষ করি। ভালো থাকুন। হ্যাপি রাইটিং...