গুগলের তিন পণ্য: প্রযুক্তি উৎকর্ষের নতুন সংজ্ঞা
সম্প্রতি প্রযুক্তিজায়ান্ট গুগল ইনকর্পোরেশন উন্মোচন করেছে কয়েকটি নতুন হার্ডওয়্যার পণ্য। এর মধ্যে একটি ফোন, একটি ল্যাপটপ এবং একটি ইয়ারফোন রয়েছে। এই তিনটি পণ্য প্রযুক্তিগত দিক থেকে একই ধরনের অন্যান্য পণ্যের তুলনায় অনেক বেশি স্মার্ট। ধারণা করা হচ্ছে, এই তিনটি পণ্য নিজ নিজ ধরনের ক্ষেত্রে হয়ে উঠবে নতুন মানদণ্ড।
গুগল ফোনঃ পিক্সেল
আমরা প্রথমে গুগলের নতুন ফোনটি নিয়ে আলোচনা করি। ফোনটির নাম পিক্সেল টু। গুগল বলছে এটি ‘লো-মেইনটেনেন্স. হাই-পারফর্ম্যান্স’ ফোন। পানি প্রতিরোধক এবং মেটাল ইউনিবডি ডিজাইনের এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বশেষ কোয়ালকম স্নাপড্রাগন ৮৩৫ প্রসেসর। ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী ব্যাটারি, যা মাত্র ১৫ মিনিটের চার্জে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত ফোনটিকে সচল রাখবে। কী, অবিশ্বাস্য লাগছে তো!
গুগল পিক্সেল টু বাজারে আসবে একই দুটি ভিন্ন মডেলে। একটি হলো পিক্সেল টু, অন্যটি পিক্সেল টু এক্সএল। মডেলের ভিন্নতা তৈরি হয়েছে কেবল মূল ডিসপ্লের ভিন্নতার কারণে। পিক্সেল টুর মূল ডিসপ্লে পাঁচ ইঞ্চি। আর এক্সএল মডেলের ডিসপ্লের আকার ছয় ইঞ্চি। গুগল বলছে, আকৃতি দিক থেকে ফোন দুটি ভিন্নতা থাকলেও স্মার্টনেসে দুটি একদম সমান।
পিক্সেল ফোনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো এর ক্যামেরা। কম আলোতেও পিক্সেল টু’র ছবি উঠবে দৃষ্টিনন্দন। এ ছাড়া তোলা যাবে স্মুথ ভিডিও এবং নান্দনিক পোর্ট্রেট ছবি। মজার ব্যাপার হলো, ছবি যতো ভালোই বা ভারিই হোক না কেনো, আপনাকে ছবির স্টোরেজ নিয়ে একদম ভাবতে হবে না। কারণ পিক্সেল টু ব্যবহারকারীদের গুগল দিচ্ছে ছবি ও ভিডিও রাখার জন্য বিনামূল্যে আনলিমিটেড জায়গা। গুগলের আগের ফোনগুলোর মতো এটিতেও থাকছে বিল্টইন গুগল অ্যাসিসটেন্স। যা আগের তুলনায় অনেক বেশি বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন। সব মিলিয়ে নতুন ফোন দিয়ে গুগল টেক্কা দিচ্ছে অ্যাপল, স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকেও।
গুগল পিক্সেল টু মডেলের ফোনের দাম ৬৫০ ডলার থেকে শুরু। এটি আপাতত বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে খুব শিগগিরই বাংলাদেশের প্রিমিয়াম ফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফোনটি বাজারে নিয়ে আসবে।
গুগল পিক্সেলবুক
পিক্সেলবুক আসলে গুগলের ল্যাপটপ। এই ল্যাপটপ গুগলের হার্ডওয়্যার পণ্যসম্ভারেরন নতুনতম অতিথি। এটিকে একই সঙ্গে ল্যাপটপ এবং ট্যাব হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমে চলবে পিক্সেলবুক। অত্যন্ত পাতলা গড়নের হওয়ায় আপনি যেখানে ইচ্ছে সেখানেই বহন করতে পারবেন এটি। ব্যাটারি লাইফ নিয়েও করতে হবে না কোনো রকম দুশ্চিন্তা। সব মিলিয়ে দৈনন্দিন কম্পিউটিংয়ের জন্য পিক্সেলবুক হলো নতুন আদর্শ ডিভাইস।
গুগল পিক্সেলবুক হলো প্রথম ল্যাপটপ যাতে গুগল অ্যাসিসটেন্ট পাওয়া যাবে বিল্টইন অবস্থায়। এ ছাড়া এটিতে কলম দিয়ে লেখার বা আঁকার অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে পিক্সেলবুক পেন দিয়ে। পিক্সেল বুক গুগলের তৈরি করা সবচেয়ে স্লিম ল্যাপটপ। এর বডি অ্যালমুনিয়াম দিয়ে তৈরি। ফলে এর টেকসই ক্ষমতা নিয়ে আপনাকে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করতে হবে না।
১২.৩ ইঞ্চি কোয়াড এইচডি এলসিডি ডিসপ্লের ল্যাপটপটি যে টাচস্ক্রিন সুবিধা সম্বলিত, সেটি নিশ্চয় না বললেও হয়! পিক্সেল বুকের ব্যাটারির সক্ষমতা নিয়ে গুগল বলছে, ‘চার্জেস ফাস্ট. লাস্টস অল ডে’। বুঝতেই পারছেন পিক্সেল ফোনের মতো গুগলের এই ল্যাপটপও পাচ্ছে শক্তিশালী ব্যাটারি। যা ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত পিক্সেলবুককে সচল রাখবে এবং মাত্র ১৫ মিনিটের চার্জে ল্যাপটপটি চলবে পুরো দুই ঘণ্টা। পিক্সেলবুকের কিপ্যাডে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাকলিট, ফলে কম আলোতে কিবোর্ড দেখতে কোনো সমস্যাই হবে না।
এ ছাড়া আপনার উৎপাদনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা এবং বিনোদনের চাহিদা মেটাতে পিক্সেলবুকে বিল্টইন থাকছে বিশ্ববিখ্যাত সব অ্যাপ। যার মধ্যে রয়েছে গুগল ডক, জিমেইল, এডোবি লাইটরুম, গুগল প্লে মিউজিক, নেটফ্লিক্স, ইউটিউবসহ আরো হাজার হাজার অ্যাপ।
পিক্সেলবুকে এসএসডি বা সলিড স্টোরেজ ড্রাইভে ডাটা সংরক্ষিত হবে। যার সঙ্গে ইন্টেলের সপ্তম প্রজন্মের কোর প্রসেসর এবং ১৬ জিবি র্যাম মিলে পিক্সেলবুককে করে তুলেছে অবিশ্বাস দ্রুত গতির। চমৎকার ডিজাইনের এই ল্যাপটপটি হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যত ল্যাপটপের নতুন মানদণ্ড।
গুগল পিক্সেলবুক এখনো বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। ৯৯৯ ডলার থেকে এর দাম শুরু হবে। এটি বাংলাদেশে পাওয়া যেতে পারে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে।
গুগল পিক্সেল বাডস
গুগল পিক্সেল বাডস হলো নতুন প্রজন্মের ইয়ারফোন। যাতে বিদেশি ভাষা শোনা অবস্থায় পাওয়া যাবে রিয়েলটাইম ট্রান্সলেশনের মতো অবিশ্বাস্য সুবিধা। এটি খুব সহজে পিক্সেল ফোন ও ল্যাপটপের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা এই ইয়ারফোনে প্রতিবার টাচ করলে আপনি পাবেন গুগলের প্রায় সব সেবা। যেমন, নতুন ভাষার ট্রান্সেলশন শোনা, প্লে লিস্ট থেকে নির্দিষ্ট গান বাজানো কিংবা পথের নির্দেশনা পাওয়া। তারবিহীন এই ইয়ারফোনের দাম ১৫৯ ডলার। এটিও গুগল পিক্সেল টু, পিক্সেলবুকের মতো এখনো বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। আগামী বছরের শুরুতে গুগল পিক্সেল বাডস বাংলাদেশে যাওয়া যেতে পারে।