যেসব খাদ্যাভাস আপনার মন খারাপের জন্য দায়ী
খাদ্যাভাস খুব গুরুত্বপূর্ন ব্যপার। এটা শুধু আপনার শরীর নয়, মনের উপরেও প্রভাব ফেলে। 'খাদ্যাভাস' নিয়ে এই সিরিজে তেমনি জরুরী কিছু ব্যপার আমরা জানবো। এই পর্বে খাদ্যাভাস কিভাবে আপনার মন খারাপ করে দেয় বা বিষন্ন করে তোলে সে সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো।
খাবারে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ
ধারণা করা হয় এই সময়ের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে প্রায় ১৬ চামচ চিনি গ্রহণ করে থাকে। বিভিন্ন খাবারের ভেতরে থাকা সুগার বা সরাসরি গ্রহণ করা সুগার এর ভেতরে অন্তর্ভুক্ত। ভুল খাদ্যাভাসের ভেতরে এটি খারাপতম। এটা আপনার শরীরের সেরেটোনিন (serotonin) লেভেলে প্রভাব ফেলে।
সেরেটোনিন হচ্ছে এক প্রকার হরমোন যা আপনার শরীরের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ন্ত্রন করে। এই যেমন- ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রন (Sleep cycles), ব্যথা নিয়ন্ত্রন করা, শর্করার অভাব নিয়ন্ত্রন করা এবং খাবার হজম করা (Digestion)। এই হরমোনের অভাবে মানুষ বিষন্ন (depressed) হয়ে পড়ে, রক্তচাপ বেড়ে যায়। এটা থাইরয়েড হরমোন (thyroid hormone) উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় যা হজমে সমস্যা তৈরি করে। এটি সন্তান ধারণ করার ব্যপারে প্রভাব ফেলে যা অনৈচ্ছিক গর্ভপাতের মত ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
ক্যাফেইন নির্ভরতা
কফি খুব জনপ্রিয় পানীয়। ঘুম থেকে ওঠার পর এক কাপ কফি আপনাকে ঝরঝরে করে দেয় কিংবা কাজের ফাঁকে এক কাপ কফি ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই কফিই আপনার অবসাদের কারণ হতে পারে। ব্রেইনে কফির কিছু বিষক্রিয়া আছে। কফিতে থাকে ক্যাফেইন যা আপনাকে আসক্ত করে তোলে। যখন আপনি প্রচুর কফি পান করতে থাকেন তখন আপনার শরীরে এই ক্যাফেইনের চাহিদা তৈরি হয়। এই ক্যাফেইন নির্ভরতার (Caffeine dependence) কারণে আপনাকে সবসময় কফি পান করে যেতে হয়। না করলেই শরীর সেরেটোনিন (serotonin) এর অভাব দেখা দেয় যা ব্রেইনকে অবসাদগ্রস্থ করে, দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়, বিরক্তিকর লাগে সব এবং মনোযোগ নষ্ট করে দেয়।
মদ্যাভাস বা এ্যালকোহল আসক্তি
মানুষ এ্যালকোহল গ্রহণ করে থাকে কারন এটি মানুষকে সাময়িক ভাবে উদ্দীপ্ত করে, মানসিক কষ্ট দূর করে দেয়। গ্লুটামেট (glutamate) নামক এক প্রকার নিওরোট্রান্সমিটার (neurotransmitters) নিয়ন্ত্রন করার মাধ্যমে এ্যালকোহল আপনাকে এমন অনুভূতি দিয়ে থাকে। সাময়িকভাবে এটি আপনার মন খারাপ ভাব কমিয়ে আনলেও পরবর্তীতে আপনার মন আরো খারাপ করে দেয়, আপনি অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। একইসাথে এটি এমন কিছু নিওরোট্রান্সমিটার বাড়িয়ে তোলে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (immune system) ক্ষতিসাধন করে যা শরীরের জন্য বিপদজনক।
প্রচুর ভাজাপোড়া খাওয়া
ভাজাপোড়া সবসময়ই আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। একইসাথে মনের উপরেও এটি প্রভাব ফেলতে সক্ষম। ভাজাপোড়ায় ব্যবহৃত তেলের ট্রান্স ফ্যাট (trans fat) যেমন আপনাকে মোটা করে দেয় তেমনি এটি আপনাকে অবসাদগ্রস্থ করে তোলে। তাই অবসাদ ও দীর্ঘমেয়াদী মন খারাপ ভাব থেকে বাঁচতে হলে ভাজাপোড়া খাওয়া কমিয়ে দিন।
অতিরিক্ত লবন খাওয়া
অতিরিক্ত সবকিছুর মত অতিরিক্ত লবনও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। লবন আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় যা আপনার হৃৎপিন্ডকে দুর্বল করে তোলে। একইসাথে এটি আপনার বিষন্নতা (Depression), হতাশা (frustration), ক্লান্তি (Tiredness), বিদ্বেষপ্রবনতা (Hostility) ও অসন্তোষ (Resentment) বৃদ্ধি করে। তাই লবন পরিমানমত খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত লবন ভালো লেগে থাকলে সেই অভ্যাস ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে ফেলুন।
সকালে নাস্তা না করা
এই অনলাইন ও ফেসবুক যুগে তরুনদের কাছে রাত জাগা এবং সকালে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠা খুব স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, সকালের নাস্তা হচ্ছে দিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন খাবার? সকালে নাস্তা না করলে ধীরে ধীরে আপনার ব্রেইন তার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। একটা দিনের শুরুতে মানুষের শরীরে শক্তির যে চাহিদা, সেটার মূল উৎস যখন বাঁধাগ্রস্থ হয় তখন শরীর তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। ব্রেইন পর্যাপ্ত এনার্জির অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, কাজে মনোযোগ নষ্ট হতে থাকে, অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে শরীর ও মন। আর এগুলো সব আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে দারুণ প্রভাব ফেলে। বিষন্নতা বাড়ায়, মনোযোগ ও কর্মস্পৃহা নষ্ট করে এবং ধীরে ধীরে ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্থ হতে হতে আপনার সবকিছু নষ্ট করে দেয়।
খুব অল্প কথায় আপনাদের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি কিভাবে খাদ্যাভাস আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। পরবর্তী পর্বে এবিষয়ে আরো কথা হবে। সেই পর্যন্ত সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন।