এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স প্রসঙ্গে
রেসিস্টেন্স কি?
রেসিস্টেন্স হল কোন একটা জীবানুর তার সংক্রমণ রোধে যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেটার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা। কোন জীবানুর সংক্রমণ রোধে একই ধরণের এন্টিবায়োটিক বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করে গেলে জীবানুরা আস্তে আস্তে সেই এন্টিবায়োটিকের কাজ করার ধাত বুঝে সেটার বিপরীতে এক ধরণের ব্যবস্থা নেয়। হতে পারে সেটা তাদের শরীরের গঠনের পরিবর্তন কিংবা মেটাবলিজম/বিপাকের পরিবর্তন। এতে করে সেই ওষুধ আর কাজ করে না। ফলে সেই জীবানুর সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।
কেন এটা বিপদজনক?
মনে করুন আপনি ভাবছেন জীবানুরা রেসিস্টেন্স ডেভেলপ করলে আপনার সমস্যা কোথায়? একজন দিনের পর দিন এন্টিবায়োটিক খেতে খেতে নাহয় জীবানুদের বেশ কিছু এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেসিস্টেন্স ডেভেলপ করিয়ে দিল নাহয়, ক্ষতি কি? এবার ধরে নিন, আপনার এলাকার দোকান হতে আপনার প্রতিবেশী এন্টিবায়োটিক খেয়ে এই কাজ করলেন। উনার মাধ্যমে পরিবেশে চার-পাঁচটা ভালো ভালো এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেসিস্টেন্স ডেভেলপ করা জীবানু ছড়িয়ে গেল। আপনার শিশু সেই পরিবেশেই হেঁটে হেঁটে স্কুলে যায়, আপনার সদ্য জন্মানো শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করে দেন প্রতিবেশীরা। আপনার যে কোন একটি শিশু সংক্রমিত হয়ে গেল সেই রেসিস্টেন্স ডেভেলপ করা জীবানু দিয়ে। তখন চিকিৎসকবৃন্দের পক্ষেও আপনার শিশুটিকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।
তাহলে নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক বের করলেই তো হয়!
না, নতুন এন্টিবায়োটিক বের করা সহজসাধ্য নয়। দশ থেকে চল্লিশ বছরের গবেষণার পর এক একটা এন্টিবায়োটিক বের করা যায়। সেগুলোর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা সাইড-ইফেক্ট সম্পর্কে ধারণা পেতে আরো সমপরিমাণ সময় লাগে। তাই আমরা চাইলেও নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক বের করতে পারি না।
আমি তো এন্টিবায়োটিক খাই না....
আপনি আমি জেনে বা না জেনে এন্টিবায়োটিক খাই। কাশির ওষুধ মনে করে বা বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলেই এজিথ্রোমাইসিন (জিম্যাক্স, এজিথ), বড়দের পাতলা পায়খানা হলেই সিপ্রোফ্লক্সাসিন(ব্যাক্টিন, সিপ্রো), মেট্রোনিডাজল (ফিল্মেট, এমোডিস), জ্বরের ওষুধ সেফিক্সিম (সেফ-থ্রি, রফিক্সিম), বাচ্চাদের কাশির ওষুধ সেফ্রাডিন, সেফোট্যাক্সিন পাউডারের সিরাপ ইত্যাদি সবই এন্টিবায়োটিক। রোগীর রোগের পূর্ণ বিবরণ শোনা, রোগীর গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করা ব্যতীত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তের পরীক্ষা (সিবিসি বা ব্লাড আর.ই. এবং ব্লাড সি.এস.) ছাড়া এন্টিবায়োটিক শুরু করা অনুচিত।
কি করনীয়?
- রোগাক্রান্ত হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক শুরু করবেন না।
- অনিয়মিতভাবে এন্টিবায়োটিক খাবেন না।
- কোন কোন পরীক্ষাগুলো এন্টিবায়োটিক শুরু করার জন্য আবশ্যক,তা চিকিৎসক হতে বুঝে নিন।
- কোন এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পর শারীরিক যে কোন সমস্যা দেখা দিলে সে এন্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ রাখুন ও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সচেতন হোন নিজের স্বার্থে।