টিকে থাকার লড়াইয়ে উদ্ভিদ


টিকে থাকার লড়াইয়ে আপনাকে সবসময় চেষ্টা করতে হবে পরিচিত প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের এবং যতদূর সম্ভব স্থলভূমিতে অবস্থান করার। খাবার পানি, আশ্রয় এবং প্রাণীজ খাবার খুঁজে বের করার পর আপনাকে নজর দিতে হবে স্থলভূমির খাবার উপযোগী উদ্ভিদের দিকে। বেঁচে থাকার সংগ্রামে খাবার ছাড়াই কিছুদিন পার করে দিতে পারবেন এমন চিন্তা কখনোই করবেন না। আপনার লড়াইটা একেবারে স্থিতিশীল এবং নিরুপদ্রব হলেও শারীরিক উদ্যম এবং মানসিক প্রশান্তি টিকিয়ে রাখার জন্য আপনাকে নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

যে কোন লড়াইয়ে টিকে থাকার মতো যথেষ্ট খাবার আপনি প্রকৃতি থেকেই খুঁজে নিতে পারবেন, শুধু খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেন ভুল খাবার বেছে না নেন। আর সে জন্য আপনি যে অঞ্চলে অবস্থান করছেন সেখানকার উদ্ভিদ সম্পর্কে যতদূর সম্ভব ধারণা নিয়ে রাখতে হবে। খাবার ছাড়াও উদ্ভিদ আপনাকে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করবে এবং অস্ত্রের জোগান দেবে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাঁচামাল এবং জ্বালানী আপনি উদ্ভিদের কাছ থেকেই পাবেন। খাবার সংরক্ষণের ভেষজ উপাদান এবং নিজেকে ছদ্মবেশের মাধ্যমে লুকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয় উপকরণও আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন উদ্ভিদের কাছ থেকে।

খাবার হিসেবে উদ্ভিদ

সর্বত্রই পাওয়া যায়, সংগ্রহ করা সহজ এবং সঠিক অনুপাতের মিশ্রণ আপনার প্রয়োজনীয় সকল খাদ্যগুণ সরবরাহ করে থাকে বলে উদ্ভিদকে খাবারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

খাবার হিসেবে উদ্ভিদ গ্রহণ না করার পিছনে একমাত্র কারণ হতে পারে দুর্ঘটনাবশত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা। কাজেই শুধুমাত্র সেই সকল উদ্ভিদ গ্রহণ করুন যাদের আপনি চেনেন এবং নিশ্চিতভাবে জানেন এরা বিষাক্ত নয়। গাজর জাতীয় উদ্ভিদের মতো দেখতে পয়জন হেমলক (Poison hemlock) কে গাজরের গাছ মনে করে খেয়ে আজ পর্যন্ত অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কাজেই খাবার হিসেবে গ্রহণ করার আগে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত ভাবে উদ্ভিদটিকে চিনতে হবে। 

বেঁচে থাকার এই লড়াইতে আপনি এমন পরিস্থিতি কিংবা পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন যেখানকার উদ্ভিদ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেয়া তৎক্ষণাৎ সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে আপনি ইউনিভার্সাল এডিবিলিটি টেস্ট (Universal Edibility Test) করে নির্ণয় করতে পারেন খাবার হিসেবে কোন উদ্ভিদকে গ্রহণ করবেন আর কোনটাকে বর্জন করবেন। 

নিজেকে রক্ষা করার জন্য চাষ করা শস্য বা উদ্ভিদ এবং বন্য উদ্ভিদ দুটোকেই সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। আবাদ করা শস্য সম্পর্কে অনেকের ধারণা থাকায় এবং এই শস্য সম্পর্কে জানাটা সহজসাধ্য বলে আমরা এখানে শুধুমাত্র বন্য উদ্ভিদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। 

খাবার জন্য উদ্ভিদ সংগ্রহের সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে

বাড়ির আশেপাশে, ভবনের গা বেয়ে এবং রাস্তার পাশে যে সকল উদ্ভিদ জন্মায় তাদের উপর কীটনাশক প্রয়োগ হয়ে থাকতে পারে। এদেরকে খুব ভালো করে ধুয়ে নিন। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে – মূলত যেখানে প্রচুর গাড়ি রয়েছে সেখানে গাড়ি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাব রাস্তার পাশের উদ্ভিদে থাকতে পারে বলে একান্ত বাধ্য না হলে সেগুলো সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকুন। 

দূষিত কিংবা পরজীবী বাস করে এমন পানিতে জন্মানো উদ্ভিদ সংগ্রহ করতে হলে অবশ্যই সেদ্ধ করে বা অন্য কোন উপায়ে দূষণ-মুক্ত করতে হবে। কিছু কিছু উদ্ভিদ ফাঙ্গাসের আক্রমণে প্রচণ্ড বিষাক্ত হয়ে উঠে। দুর্ঘটনা বশত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য পঁচতে শুরু করেছে বা ফাঙ্গাসের উপস্থিতি দৃশ্যমান এমন ফল এবং উদ্ভিদ এড়িয়ে চলুন। 

বংশগত এবং পরিবেশগত কারণে একই উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতির তারতম্য থাকতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে চকচেরীর (chokecherry) কথা। চকচেরীর কিছু প্রজাতিতে প্রাণঘাতী সায়ানাইডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি দেখা গেলেও ভিন্ন প্রজাতির কিছু চকচেরীতে সায়ানাইডের উপস্থিতি সহনীয় মাত্রায় বা একেবারেই অনুপস্থিত থাকে। বন্য চেরি গাছের পাতা খেয়ে অনেক ঘোড়াকেই আজ পর্যন্ত প্রাণ হারাতে দেখা গিয়েছে। যে কোন ধরণের ঘাস, লতা পাতা এবং বীজে যদি বাদামের সুবাস থাকে তাহলে তাদেরকে এড়িয়ে চলুন, সায়ানাইড উপস্থিত থাকার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ জাতীয় সুবাস। হিজল ফল খেলে মারাত্মক রকম বমিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আকন্দ গাছের পাতায়, টগর ফুলের বীজ এবং ফলে রয়েছে বিষ। ছিটা (Plumbago zeylanica) উদ্ভিদ খেলে সম্ভাবনা রয়েছে পঙ্গুত্বের। ধুতরা গাছ (Datura metel) খেলে অচেতন হবার এবং মস্তিষ্ক বিকৃত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। 

কারো কারো ক্ষেত্রে অন্যান্য খাবারের চাইতে উদ্ভিদ জাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে গ্যাস্ট্রিক আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনি যদি উদ্ভিদের প্রতি সংবেদনশীল হন তাহলে অপরিচিত সব ধরণের উদ্ভিদ এড়িয়ে চলুন। বিছুটি জাতীয় উদ্ভিদের (Poison Ivy) প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকলে সুমাক (Sumac), আম (Mango) এবং কাজুবাদাম (Cashew)জাতীয় উদ্ভিদের সকল প্রজাতি থেকে দূরে থাকুন। 

ওক ফল (Acron) এবং জল পদ্মের মূল ও কাণ্ড (water lily rhizome) জাতীয় বন্য উদ্ভিদ খাবার উপযোগী হলেও খেতে খুবই তিতকুটে স্বাদের। মূলত কষের উপস্থিতি থাকায় এরা তিতকুটে এবং বিস্বাদ হয়ে থাকে। পানি পরিবর্তন করে কয়েকবার সিদ্ধ করলে এদের তিতকুটে ভাবটা অনেকটাই কমে আসে। 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদে অতিরিক্ত মাত্রায় অক্সালিড এসিডের (oxalic acid) উপস্থিতি রয়েছে। এই সকল উদ্ভিদ খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে মুখে এবং গলায় তীব্র জ্বালা পোড়া অনুভূত হবে, এমনকি কিডনি বিকল করে দেবার ক্ষমতাও এদের রয়েছে। সেঁকে, ভেজে এবং শুকিয়ে উদ্ভিদ থেকে এই অক্সালেড দূর করা যায়। ইন্ডিয়ান তারপিন (Indian turnip) নামে পরিচিত জ্যাক ইন দ্য পালপিটের (the jack-in-the-pulpit) মূল এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। খুব ধীরে ধীরে সেঁকে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে শুকানোর পর এই উদ্ভিদ খেতে হবে। 

টিকে থাকার লড়াইয়ে কখনো মাশরুম (Mushroom) খাবেন না। শুধুমাত্র সঠিকভাবে সনাক্ত করেই কোন মাশরুম খাবার উপযোগী কিনা সেটা বলা সম্ভব, পরখ করে দেখার কোন সুযোগ এখানে নেই। মাশরুমের প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্র বিকল হওয়া এবং পঙ্গুত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রজাতির মাশরুমের-ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয় আহারের কয়েকদিন পর থেকে, যে কারণে তখন আর প্রতিকারের কোন উপায় থাকেনা।

ইউনিভার্সাল এডিবিলিটি টেস্ট (Universal Edibility Test)

পৃথিবীর অসংখ্য উদ্ভিদের মধ্যে এমন অনেক উদ্ভিদ রয়েছে যাদের খুব সামান্য পরিমাণ অংশ খাবার হিসেবে গ্রহণ করলেই অস্বস্তি, পেটের পীড়া, ভয়ঙ্কর রকমের আভ্যন্তরীণ গোলযোগ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কাজেই কোন উদ্ভিদ নিয়ে যদি সামান্যতম সংশয়-ও দেখা দেয়, তাহলে তার কোন অংশ খাবার আগে ইউনিভার্সাল এডিবিলিটি টেস্ট করে নিন। 

১ – মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে নিন, আপনাকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে। 
২ – উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন মূল, কাণ্ড, পাতা এদেরকে আলাদা আলাদা করে রাখুন।
৩ – উদ্ভিদের যে কোন একটা অংশ (মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল) নিয়ে পরীক্ষা করুন, একসাথে একাধিক অংশ নিয়ে পরীক্ষা করবেন না। 
৪ – শুঁকে দেখুন তীব্র এবং ঝাঁঝালো গন্ধের উপস্থিতি আছে কিনা। অবশ্য শুধুমাত্র গন্ধের মাধ্যমে খাবার উপযোগী কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবেনা। 
৫ – এই পরীক্ষা শুরু করার আগে অন্তত আট ঘণ্টা আগে থেকে না খেয়ে থাকুন।
৬ – উদ্ভিদের যে অংশ পরীক্ষা করতে চান তা আপনার কনুইয়ের ভিতরের অংশে বা কবজিতে ঘষে দেখুন কোন প্রকার জ্বালা পোড়া অনুভব করেন কিনা। আপনার চামড়ার জন্য যে উদ্ভিদ ভালো নয়, সেটা আপনার পাকস্থলীর জন্যও ভালো হবেনা। চামড়ার কোন অস্বস্তি হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার জন্য সাধারণত ১৫ মিনিট সময়ই যথেষ্ট। 
৭ – পরীক্ষা করার সময় বিশুদ্ধ পানি এবং উদ্ভিদের যে অংশ পরীক্ষা করছেন সেটা ছাড়া আর কিছু খাবেন না। 
৮ – উদ্ভিদের যে অংশ পরীক্ষা করতে চান তার সামান্য অংশ নিয়ে যেভাবে খেতে চান (রান্না করে, সিদ্ধ করে, ভেজে বা সেঁকে) সেভাবে প্রস্তুত করুন।
৯ – প্রস্তুতকৃত উদ্ভিদটি খেতে শুরু করার আগে তার সামান্য অংশ আপনার ঠোঁটে স্পর্শ করে দেখুন কোন রকম অস্বস্তিকর অনুভূতি, জ্বালা পোড়া বা চুলকানি অনুভূত হয় কিনা।
১০ – ৩/৪ মিনিট পরেও যদি কোন অস্বস্তি না হয় তাহলে উদ্ভিদের উক্ত অংশটি আপনার জিহ্বার উপর ১৫ মিনিট সময় ধরে রেখে দিন।
১১ – এবারও যদি কোন অস্বস্তি না হয় তাহলে ভালো করি চিবিয়ে ১৫ মিনিট সময় খাবারটি মুখেই রেখে দিন, গিলে ফেলবেন না। 
১২ – যদি কোন রকম জ্বালা পোড়া, চুলকানি, অসারতা, ব্যথা বা অন্য কোন ধরনের অস্বস্তি অনুভূত না হয় তাহলে খাবারটি এবার গিলে ফেলতে পারেন।
১৩ – আট ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এ সময়ের মধ্যে কোন রকম অস্বস্তিকর অনুভূতি হলে বমি করুন এবং প্রচুর পানি পান করুন। 
১৪ – যদি কোন সমস্যা অনুভূত না হয় তাহলে উদ্ভিদের ঐ অংশ পূর্বের ন্যায় একই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করে এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ পরিমাণ খেয়ে নিন, এবং আবারো আট ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যদি ক্ষুধা ছাড়া অন্য কোন অনুভূতিতে আক্রান্ত না হন তাহলে উদ্ভিদের এই অংশটিকে খাবার উপযোগী হিসেবে ধরে নিতে পারেন। 

উদ্ভিদের সকল অংশ আলাদা আলাদা ভাবে পরীক্ষা করুন, কেননা এমন অনেক উদ্ভিদ রয়েছে যাদের একটা অংশ খাবার উপযোগী হলেও অপর অংশ বিষাক্ত। রান্না করে উদ্ভিদের যে অংশ খাওয়া নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে সেই অংশ কাঁচা অবস্থায় খাওয়াও নিরাপদ হবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। যদি সেই অংশ কাঁচা খেতে চান তাহলে কাঁচা অবস্থায় সেটাকে পরীক্ষা করে দেখে নিন। অপরিচিত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অন্য কারো পরীক্ষার উপর ভরসা না করে নিজেই পরীক্ষা করে নিন, কেননা একই উদ্ভিদ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করতে পারে। 

এডিবিলিটি টেস্ট করার আগে দেখে নিন উদ্ভিদটি প্রচুর পরিমাণে আছে কিনা, নাহলে আপনার সময় এবং শ্রম দিয়ে করা এই পরীক্ষা বিফলে যাবে। উদ্ভিদের প্রতিটি অংশ পরীক্ষার জন্য প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন, কাজেই আপনি যেখানে অবস্থান করছেন সেখানে যদি প্রচুর পরিমাণে উক্ত উদ্ভিদ না থাকে তাহলে সময় নষ্ট করে উক্ত পরীক্ষা করতে যাবেন না। 

মনে রাখতে হবে যে খালি পেটে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদজাত খাবার খেলে উদরাময়, বমি বমি ভাব, খিঁচুনি এবং পেটে ব্যথা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সবুজ আপেল এবং বন্য পেঁয়াজের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। উদ্ভিদ পরীক্ষা করার পর খাবার উপযোগী হলেও একসাথে প্রচুর পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিৎ। 

খাবারের উপযোগিতা পরীক্ষা করার পদ্ধতি এবং সময় থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন খাবার উপযোগী উদ্ভিদ খুঁজে বের করাটা কেন গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভাব্য বিষাক্ত উদ্ভিদ এড়ানোর জন্য অপরিচিত এবং বন্য সেই সকল উদ্ভিদ এড়িয়ে চলুন, যাদের– 
১ – দুধের মতো সাদা বা বর্ণহীন কষ রয়েছে।
২ – বীজ বা কাণ্ড রয়েছে কোন পর্দা বা খোলসের ভিতরে।
৩ – স্বাদ তিতকুটে বা সাবানের মতো।
৪ – শিরদাঁড়া, লোম বা কাঁটা রয়েছে।
৫ – পত্র-গুচ্ছ দেখতে মৌরি জাতীয় সুগন্ধ লতা, গাজর, মূলা বা ধনেপাতার মতো।
৬ – মূল বা পাতায় বাদামের গন্ধ রয়েছে। 
৭ – শস্যের মাথায় গোলাপি, বেগুনী বা কালো রঙের মুকুট বা নালের মতো অংশ (spurs) বিদ্যমান।
৮ – ত্রিপত্রী (three-leafed pattern) পত্র-গুচ্ছ রয়েছে। 
ইউনিভার্সাল এডিবল টেস্টের জন্য উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ সমূহকে বাদ দিলে খাবার উপযোগী কিছু উদ্ভিদ থেকে যদিও আপনি বঞ্চিত হবেন, কিন্তু বিষাক্ত অনেক উদ্ভিদ থেকেও আপনি নিরাপদ থাকবেন।

খাবার উপযোগী উদ্ভিদ

খাবার উপযোগী কিছু উদ্ভিদের নাম নিচে দেয়া হল। নিরাপদ উদ্ভিদের তালিকার একটা এনসাইক্লোপিডিয়া লিখা সম্ভব হলেও এখানে অল্প কিছু উদ্ভিদের নাম দেয়া হল। আপনাকে সবসময় চেষ্টা করতে হবে যে এলাকাতে আপনি অবস্থান করছেন সেখানকার উদ্ভিদ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা নেবার। 

নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলঃ
পারিজাত (Amaranths retroflex species), অ্যারারূট (Sagittarius species), শতমূলী (Asparagus officials), বীচনাট (Fags species), ব্ল্যাকবেরী (Rubes species), ব্লুবেরী (Vaccinium species), ভাটুই গাছ (Arctium lappa), হোগলা (Cattail, Typha species), বাদাম (Castanea species), চিকোরি ফুল (Chicory, Cichorium intybus), ডেনডেলায়ন (এক প্রজাতির হলুদ ফুল বিশেষ; Dandelion, Taraxacum officinale), ডেলিলি ফুল বিশেষ (Daylily, Hemerocallis fulva) , বিছুটি (Nettle, Urtica species), ওক (Oaks, Quercus species), খেজুর (Persimmon, Diospyros virginiana), কলা (Plantain, Plantago species), নাশপাতির মতো দেখতে কাটাযুক্ত ফণীমনসা (Opuntia species), চিড়াকুটি / পর্তুলাকা (Purslane, Portulaca oleracea), স্ট্রবেরী (Fragaria species), পদ্ম এবং জলপদ্ম (Nuphar, Nelumbo, and other species), বন্য পেয়াজ এবং রসুন (Allium species), বন্য গোলাপ (Rosa species), আমরুল (Wood sorrel, Oxalis species)।

গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলঃ
বাঁশ (Bambusa and other species), কলা (Musa species), রুটিফল (Artocarpus incise), হিজলি বাদাম (Cashew nut, Anacardium occidental), নারিকেল (Cocoa nucifera), আম (Mangifera indica), পেপে (Carica species), আঁখ (Saccharum officinarum), কচু (Taro, Colocasia species)

মরুভূমি অঞ্চলঃ
বাবলা (Acacia farnesiana), আগেইভ / টাকিলা গাছ (Agave, Agave species), ফণীমনসার বিভিন্ন প্রজাতি (Cactus), খেজুর (Phoenix dactylifera), মরুভূমির পারিজাত (Amaranths palmer)

সামুদ্রিক শৈবালঃ
যে খাবারটিকে কখনোই অবহেলা করা উচিৎ না সেটা হচ্ছে সামুদ্রিক শৈবাল। এরা মূলত সমুদ্রের শ্যাওলা; সমুদ্রের উপকূলে এবং তীরের কাছাকাছি জন্মায়। খাবার উপযোগী কিছু শ্যাওলা অবশ্য মিঠাপানিতেও জন্মে থাকে। সামুদ্রিক শৈবাল বিভিন্ন খনিজ উপাদান, আয়োডিন এবং ভিটামিন সি-র চমৎকার উৎস। অনভ্যস্ত পেটে অধিক মাত্রার সামুদ্রিক শৈবাল অবশ্য তীব্র পেটের পীড়া এবং ডাইরিয়ায় আক্রান্ত করতে পারে। 

খাবার জন্য শৈবাল সংগ্রহের সময় পাথরের গায়ে লেগে থাকা বা পানিতে স্বাধীন ভাবে ভেসে বেড়ানো জীবন্ত উদ্ভিদ সংগ্রহের চেষ্টা করুন। পানিতে ভেসে এসে সমুদ্রের তীরে পড়ে থাকা শৈবালের পচা বা জীবাণুতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সংগ্রহ করা তাজা শৈবাল ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য চাইলে শুকিয়েও রাখতে পারেন। 

প্রজাতি ভেদে সামুদ্রিক শৈবালকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রস্তুত করা উচিৎ। পাতলা এবং নরম শৈবালকে মচমচে করার জন্য রোদে বা আগুনে শুকাতে হবে। শুকনো মচমচে শৈবাল ভেঙ্গে সুপ বা ঝোলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। ঘন এবং শক্ত শৈবালকে কিছুক্ষণ সিদ্ধ করার পর সবজি হিসেবে বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন। কিছু কিছু শৈবাল অবশ্য কাঁচাও খাওয়া যায়, তবে অবশ্যই কাঁচা খাবার আগে খাবার উপযোগী কিনা সেটা পরীক্ষা করে নেবেন।

খাবার প্রস্তুত প্রণালি

কিছু উদ্ভিদ এবং উদ্ভিদের অংশবিশেষ কাঁচা খাওয়া গেলেও বাকিদের খাবার হিসেবে উপযোগী করতে তুলতে এবং স্বাদ বাড়ানোর জন্য রান্না করে খেতে হবে। খাবার উপযোগী বলতে প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান পরিপূর্ণ ভাবে পাওয়াকে বুঝানো হচ্ছে আর স্বাদ বাড়ানো বলতে খাবার সময় বিস্বাদ লাগবেনা এমনটা বোঝানো হচ্ছে। অনেক বন্য উদ্ভিদ খাবার উপযোগী হলেও খেতে প্রচণ্ড বিস্বাদ। বন্য উদ্ভিদ চিনতে পারার পাশাপাশি তার পুষ্টি উপাদান এবং প্রস্তুত প্রণালি সম্পর্কে ধারণা থাকাটাও টিকে থাকার জন্য জরুরী। 

উদ্ভিদের স্বাদ বাড়ানোর জন্য সেটাকে শুকিয়ে ফেলা, জলসিক্ত করা, সিদ্ধ করা, ভাজা কিংবা গরম পানি দিয়ে লিচ (Leach) করে নেয়া যেতে পারে। কিছু উদ্ভিদ বা ফলকে (যেমন: ওক) পিষে চালনিতে নিয়ে তার মধ্যে দিয়ে গরম পানি চালনা করে লিচ করা হয়। মূলত অতিরিক্ত পটাশিয়াম এবং তিতকুটে ভাব দূর করার জন্য লিচ একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। 

উদ্ভিদের পাতা, কাণ্ড, ডাঁটা, কুড়ি নরম না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করুন। তিতকুটে ভাব দূর করার জন্য প্রয়োজনে বার বার পানি পরিবর্তন করে নিন।

কন্দ এবং মূল সিদ্ধ করে বা সেঁকে বা ভেজে নিন। কিছু কিছু উদ্ভিদের মূল (যেমন কচু জাতীয় উদ্ভিদ) শুকিয়ে নিলে কষটে ভাবটা দূর হয়। কিছু বাদাম কাঁচা খেতে খারাপ না লাগলেও ভেজে খেলে স্বাদ অনেক বেড়ে যায়।

কিছু শস্য এবং বীজ পাকার আগেই খেতে হয়। এরা যদি বেশি শক্ত বা শুকনো হয় তাহলে সিদ্ধ করে বা চূর্ণ করে নিতে পারেন।

অনেক গাছের রস মিষ্টি হয় এবং এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা বা চিনির উপস্থিতি থাকে। এই রসকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে মিষ্টি সিরাপ হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারেন। ম্যাপল গাছের ক্ষেত্রে ১ লিটার ম্যাপল সিরাপ করতে প্রায় ৩৫ লিটার রস লাগে। 

ঔষধি উদ্ভিদ

খাবার উপযোগী উদ্ভিদ সনাক্ত করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার জন্য সঠিক উদ্ভিদ সনাক্ত করা। চিকিৎসায় উদ্ভিদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করাও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যবহারবিধি:
প্রলেপ – উদ্ভিদের পাতা বা অন্য কোন অংশ পিষে, প্রয়োজনে সামান্য গরম করে ক্ষত বা ফোঁড়ার উপর সরাসরি বা কাপড়ে পেঁচিয়ে প্রলেপ দেয়া হয়। প্রলেপ গরম থাকা অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং উদ্ভিদের রস ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। প্রলেপ ধীরে ধীরে শুকাতে থাকে এবং একইসাথে জখম বা ফোঁড়া থেকে বিষাক্ত অংশটুকু তুলে আনতে থাকে। প্রলেপ দেখতে হবে অনেকটা থেঁতলানো আলুর মতো এবং ততটাই গরম করা উচিৎ যতটা ক্ষতস্থান সহ্য করতে পারবে। 

তরল বা ভেষজ চা – গাছগাছড়া থেকে বানানো ভেষজ মিশ্রণ আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় চিকিৎসার জন্যই ব্যবহৃত হয়। ভেষজ উদ্ভিদের গুঁড়ো একটি পাত্রে নিয়ে তাতে গরম পানি মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে চা বানাতে হয়। খালি পেটে অতিরিক্ত ভেষজ চা খেলে প্রতিকূল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিৎ। 

ক্বাথ বা পাঁচন – পাঁচন হচ্ছে সেদ্ধ বা অল্প আঁচে ফুটানো ভেষজ উদ্ভিদের পাতা বা মূলের নির্যাস। ভেষজ পাতা বা মূলটি পানি সহ একটি পাত্রে নিয়ে অল্প আঁচে ফুটিয়ে বা সেদ্ধ করে উদ্ভিদের নির্যাসটা পানির সাথে মেশানো হয় এবং পানিটা আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসলে পাত্রের নিচে এসে নির্যাসটা জমা হয়। পাঁচন তৈরির গড়পড়তা অনুপাত হচ্ছে আধা লিটার পানিতে ২৮ থেকে ৫৬ গ্রাম (এক থেকে দুই আউন্স) ভেষজের মিশ্রণ।

রস – উদ্ভিদ চিপে বের করা তরল বা রস, সরাসরি ক্ষতে বা অন্য ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

আপনার পরিচিত ঔষধের চাইতে ভেষজ ঔষধ সাধারণত ধীর গতিতে কাজ করে থাকে, কাজেই অল্প মাত্রায় অধিক বার ব্যবহার করে উপশমের জন্য অপেক্ষা করুন। চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো আরও বিস্তারিত ভাবে বলা আছে সারভাইভাল গাইড ফিচারের ঔষধ নিয়ে লিখা আর্টিকেলে।

কিছু চিকিৎসা

নিম্নোক্ত প্রতিকারগুলোর কয়েকটি পদ্ধতি শুধুমাত্র সারভাইভের সময় কাজে লাগানোর জন্য। স্বাভাবিক অবস্থায় এদের নিয়মিত ব্যবহার পরিহার করুন। 

উদরাময় / ডাইরিয়া - দুর্গম পরিবেশে অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াইকারী বা যুদ্ধবন্দীদের কম সময়ে বেশি দুর্বল করে ফেলার অন্যতম ব্যাধি ডাইরিয়া। ডাইরিয়া প্রতিকারের জন্য ব্ল্যাকবেরী বা তার সমগোত্রীয় উদ্ভিদের মূল দিয়ে বানানো চা পান করুন। যে সকল ওক গাছের বাকলে কষ থাকে তাদের দিয়া বানানো কড়া ধরণের চা-ও বেশ উপকারী। কিন্তু যেহেতু এদের কারণে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, কাজেই অন্য কোন চিকিৎসার সুযোগ না থাকলেই কেবল এদের ব্যবহার করুন। মাটি, ছাই, কাঠকয়লা, খড়ির গুঁড়ো, গুঁড়ো হাড়ের সংমিশ্রণ তীব্র কষটে স্বাদের হলেও বেশ উপকারী। এই সংমিশ্রণ প্রতি দুই ঘণ্টায় দুই টেবিল চামচ করে খেতে হবে এবং এক্ষেত্রেও অন্য কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলেই কেবল এই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন। লটকন পাতার শুকনো গুঁড়োতে ডায়রিয়া বেশ দ্রুত উপশম হয়।

আমাশয় – আমাশয় আক্রান্ত হলে ডালিমের খোসা লবঙ্গের সঙ্গে ফুটিয়ে খেলে বেশ সুফল লাভ করবেন। বহেরা চূর্ণ ৩ গ্রাম পরিমাণে সকাল এবং সন্ধ্যায় ১ সপ্তাহ খেলে আমাশয় চলে যাবে। পাকা বিচিকলা বিচি সহ সকাল-বিকাল কয়েকদিন খেলেও আমাশয় ভালো হয়। প্রতিদিন সকালে ৫/৭ টি থানকুনি পাতা চিবিয়ে ৭ দিন খেলেই আমাশয় ভালো হবে। 

রক্তপাত বন্ধে – রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ইয়ারো(Yarrow) বা উন্ডওর্ট (woundwort) পাতা দিয়ে ঔষধ তৈরি করা হয়। এরা মূলত রক্তপ্রবাহে একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। প্রিকলি পিয়ার (Prickly pear) নামক ক্যাকটাসের ছাল তুলে ফেলে কিংবা উইচ হেজেল (witch hazel) ক্ষততে লাগাতে পারেন। রক্তপাত বন্ধের জন্য এরা রক্তনালীকে সংকুচিত করে ফেলে। থানকুনি পাতা বেঁটে অল্প গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হবে। এছাড়া দূর্বা ঘাস বেঁটে বা থেঁতলে ক্ষতে লাগালেও রক্ত পড়া কমে যায়। 

ক্ষত পরিষ্কার করার জীবাণুনাশক হিসেবে – ক্ষত, সাপের কামড়, ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি পরিষ্কারের জন্য সবসময় জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন। ভাটুই গাছের মূল, মেলো (mallow) গাছের পাতা বা মূল কিংবা সাদা ওক গাছের বাকল থেকে বানানো ক্বাথ ভালো জীবাণুনাশক। শরীরের কেটে যাওয়া স্থানে কেশরাজের পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে লাগালে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে কাটা স্থানের ক্ষত শুকিয়ে যায়। থানকুনির মূলসহ সামান্য গাছ নিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সাধারণ কাটাছেড়ায় জীবাণুনাশক হিসেবে হলুদ, বন্য পেঁয়াজ, রসুন নিংড়ানো রস ব্যবহার করতে পারেন। তবে শ্রেষ্ঠ দুইটি জীবাণুনাশক হচ্ছে চিনি এবং মধু। জীবাণুনাশক হিসেবে ক্ষতের উপর রাখা চিনির প্রলেপ গলে গেলে ক্ষতস্থানটি ধুয়ে আবার নতুন করে প্রলেপ দিতে হবে। মধু ব্যবহার করতে হবে দিনে তিনবার। জীবাণুনাশক হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার মধু, তার ঠিক পরের স্থানটাই চিনির দখলে। 

জ্বর – থানকুনি পাতার রস ১ চামচ ও শিউলি পাতার রস ১ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে জ্বর সারে। তুলসী পাতার রসও জ্বর কমাতে সাহায্য করে। জ্বর কমাতে এক কাপ আদা সেদ্ধ রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান। বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতলে ১০০ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে সেদ্ধ করে পানির পরিমাণ ২৫ মিলিতে নিয়ে আসতে হবে, এই পানি দিনে দুইবার খেলে জ্বর এবং কাশি দুইই চলে যাবে। 

ঠাণ্ডা, কাশি এবং গলা ব্যথা – দুই চামচ থানকুনির রস সামান্য চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে খুশখুশে কাশির উপশম হবে। ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হয়ে হলে থানকুনির শিকড় ও ডাঁটার মিহি গুঁড়ার নস্যি নিলে উপকার পাওয়া যায়। বাসক পাতার রস ১-২ চামচের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে সর্দিকাশিতে উপকার পাওয়া যায়। নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে কফ জনিত বুকের ব্যথা কমবে; যদিও গর্ভবতী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য নিম পাতার রস উপযোগী নয়। 

ব্যথা বা মচকানো উপশমে – সাধারণ মচকানোতে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। ব্যথা দ্রুত সারাতে বাটা হলুদে উষ্ণ পানি মিশিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে নিন। 

খোশ, পাঁচড়া, চুলকানি, ফোঁড়া, ঘা - নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করলে খোস পাঁচড়া চলে যায়; পাতা বা ফুল বেটে কয়েকদিন গায়ে লাগালে চুলকানি ভালো হয়। তুলসী পাতার রস দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তুলসী পাতার সাথে দূর্বা ঘাসের ডগা একসাথে বেঁটে গায়ে লাগালে ঘামাচি ও চুলকানি ভালো হয়; ফিটকিরির সাথে একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগালে ঘা দ্রুত কমে যায়। 

শরীরের খোস পাঁচড়ার ঘা অর্জুন ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুয়ে ছালের মিহি গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ঘা সেরে যাবে। বাসকের ১০/১২ টি কচি পাতার সাথে সামান্য হলুদ মিশিয়ে একসঙ্গে বেঁটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যাবে। ফোঁড়া হলে শিমুল গাছের ছাল ধুয়ে বেটে ফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিলে উপকার হয়। আবার অর্জুন পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলে ফোঁড়া ফেটে যায়, তারপর পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। 

অনিদ্রা – অশ্বগন্ধার মূল এবং পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয় এবং অনিদ্রা দূর করে। 

বাত – ধনিয়া পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি (anti inflammatory) উপাদান যা বাতের ব্যথা সহ হাড় এবং অস্থিসন্ধির ব্যথা উপশমে কাজ করে।

কৃমি - ডালিম গাছের মূলের ক্বাথ কৃমিনাশক। নিম গাছের মূলের ছাল গুঁড়ো করে দিনে তিন বার সামান্য গরম পানি সহ খেলে কৃমি দূর হয়। বাসকের ছালের ক্বাথ খেলে এর উগ্র তিক্ত স্বাদের কারণে কৃমি মলের সাথে বের হয়ে যায়। 

কোষ্ঠকাঠিন্য – কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও পাকস্থলীর রোগ প্রতিরোধে জাম্বুরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রাতে ঘুমানোর আগে লবণের সাথে সামান্য লবঙ্গ বা দারুচিনি এবং হরীতকীর গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে পেট পরিষ্কার হয়। মধুর সঙ্গে কালমেঘ পাতার রস মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকার পাওয়া যায়। 

গ্যাস্ট্রিক – যাদের গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি রয়েছে তাদের জন্য কচু অনেক উপকারী। এছাড়া থানকুনি পাতার রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। 

ফাঙ্গাসের আক্রমণ – থানকুনি মূলসহ সমগ্র গাছ নিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে দূষিত ক্ষত ধুতে হবে। একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাসের আক্রমণে ধনে পাতার রস বেশ উপকারী। 

আগুনে পোড়া – শিমুল তুলা নিয়ে সেটাকে শিমুল গাছের ছালের রসে ভিজিয়ে পোড়া ঘায়ে দিন, ঘা সেরে যাবে। শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালা কমবে এবং পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকাবে। 

প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া - প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন। প্রস্রাবের যন্ত্রণায় বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ মিছরির সাথে মিশিয়ে সরবত করে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

দাঁতে ব্যথা - পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে ২০টির মতো বাসক পাতা একসাথে থেঁতো করে ২ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচা করুন। হরীতকী গুঁড়া লাগালেও দাঁতের ব্যথা দূর হয়। ধনেপাতা চিবিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের গোঁড়া হতে রক্তপাত বন্ধ হবে। 

অন্যান্য - কোন কারণে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে তার নাকের কাছে কিছু তাজা পুদিনা পাতা ধরুন, জ্ঞান ফিরে পাবে। অর্জুনের কচি পাতার রস ফোঁটা ফোঁটা করে কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।

উদ্ভিদের অন্যান্য ব্যবহার –

সচেতন ভাবে যতদিন আপনি উদ্ভিদ ব্যবহার করতে পারবেন প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার লড়াইতে উদ্ভিদ হবে আপনার সবচাইতে কাছের বন্ধু, তবে সে জন্য আপনাকে উদ্ভিদ চিনতে হবে এবং তাদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। খাবার এবং ঔষধ ছাড়াও উদ্ভিদের আরও কিছু ব্যবহার রয়েছে- 

কাপড় রঙ করার বা ছদ্মবেশের জন্য শরীরে লাগানোর জন্য রঙ আপনি উদ্ভিদ থেকেই তৈরি করে নিতে পারেন। ভালো ফলাফলের জন্য সাধারণত উদ্ভিদটিকে সিদ্ধ করে নিতে হয়। উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত রংগুলোর মধ্যে আছে খয়ের গাছের কাঠের কষ, জাম থেকে মেরুন/খয়েরী; কাঁঠাল কাঠের ভুসি থেকে হালকা হলুদ; লটকন বীজ, গাজর থেকে কমলা; ডালিম ফলের খোসা থেকে খাকি; গাব ফল, এলাচি পাতা এবং গোরান গাছের ছাল থেকে গোলাপি; সুন্দরী গাছের ছাল, সুপারি, ঝাউ গাছের ছাল থেকে গাঢ় গোলাপি; শিউলি ফুল থেকে হলুদ; ইউক্যালিপ্টাস পাতা থেকে এ্যাশ; হরীতকী গাছের ছাল থেকে এ্যাশ/সোনালী; ডালিয়া পাপড়ি থেকে সোনালী; গাঁদা ফুলের পাপড়ি, শিলকড়ই কাঠের ভুসি, পেঁয়াজ খোসা থেকে গাঢ় সোনালী; বাবলা গাছের ছাল থেকে বাদামী; গর্জন কাঠের ভুসি, চা পাতা থেকে হালকা বাদামী; নীল পাতা থেকে গাঢ় ও হালকা নীল; লেবু পাতা, কৃষ্ণচূড়া পাপড়ি, তুলসী পাতা থেকে হালকা সবুজ; মেহেদি পাতা, চাপা গাছের পাতা থেকে হালকা জলপাই।

পাটের আঁশ ব্যবহার করে শক্ত দড়ি তৈরি করতে পারেন। গাছের ছাল, বাকল, ডালপালা, শুকনো পাতা জ্বালানী হিসেবে উত্তম। 

মশার কামড়ে লাল হয়ে ফুলে ওঠা ত্বকে কলার খোসা ঘষলে ফুলে ওঠা অংশ ঠিক হয়ে যাবে। পোকা মাকড় কামড় দিলে বা হুল ফোটালে নিম গাছের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হবে। বোলতা, ভীমরুল, বিছা প্রভৃতি বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের কামড়ের স্থানে তুলসী পাতার রস গরম করে লাগালেও জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যায়। মাথা থেকে উকুনের উপদ্রব দূর করতে নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক পরে মাথা ধুয়ে ফেলুন, ২/৩ দিন এভাবে লাগালে উকুন মরে যাবে। বাসক পাতার রস গোসলের আধ ঘণ্টা আগে মাথায় কয়েকদিন মাখালেও উকুন মরে যায়। আশ্রয়স্থল থেকে তেলাপোকার উপদ্রব দূর করতে নীম পাতা এবং তেজপাতা ব্যবহার করুন। পুদিনা পাতা এবং কমলার খোসা মাছি দূর করতে সাহায্য করে। আশ্রয়স্থলে রসুনের কোয়া বা পেঁয়াজের কাঁটা টুকরো রেখে দিলে সেখান থেকে টিকটিকি চলে যাবে। 

পানি পরিশুদ্ধ করার কাজে এক কলসি পানিতে ৩/৪ টি বাসক পাতা ৩/৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। বসাক পাতায় কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে বলে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় আক্রমণ করে না বলে ফল সংরক্ষণের কাজেও বাসক পাতা ব্যবহার করা হয়। 

উদ্ভিদকে খাদ্য, ঔষধ, আশ্রয় নির্মাণের উপকরণ বা অস্ত্র যে হিসেবেই ব্যবহার করেন না কেন তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাবার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক ভাবে তাদের সনাক্ত করতে পারা।

---
* লেখাটি সার্ভাইভাল গাইড ফিচারের অন্তর্ভূক্ত।


প্রাসঙ্গিক লেখা