হারুকি মুরাকামির 'ইয়েসটারডে'র গোপন সুন্দর


ক.

শিল্প শুধু 'বিশেষ শিল্পবোদ্ধা'র বিবেচনার কাছে সীমিত থাকবার না। শিল্প ফোটে সকলের জন্যে। ক্রিটিকদের মতে, উত্তরাধুনিক ধারায় গল্প উপন্যাস রচনা করে সেটা দেখিয়েছেন কথাশিল্পী হারুকি মুরাকামি। তার সাহিত্যকর্ম 'পপুলার' এবং 'পিউর' - এই দুই বিভাজনের লেবেলদ্বয়কে একাট্টা করে ফেলেছে। তার বই 1Q84 যেদিন প্রকাশ পায়, সেদিন জাপানের সবচেয়ে বড় বুকশপ কিনোকুনিয়া সারাদিন বিক্রি করে প্রতি মিনিটে কয়েকটা করে। প্রথম মাসেই শেষ হয় এক মিলিয়ন কপি। পরে ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে বিভিন্ন দেশে মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।

কথাশিল্পের দুনিয়ায় তাঁর তুলনা করবার আর কেউ নাই। নিজেই নিজের তুলনা। খেলাধুলা করার মতোই ক্রিয়েটিভ প্রসেস ব্যাপারটা। হারুকি মুরাকামি তাই মনে করেন। খেলা সৃষ্টিজগত জুড়ে আছে বহু রূপ রঙে। টিকে থাকবার খেলা, জন্ম মৃত্যুর খেলা। কাজী নজরুল ইসলামের গানটা মনে পড়ে- 'খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে.....প্রলয়ও সৃষ্টি তব পুতুল খেলা...'। স্রষ্টা খেলছেন সৃষ্টি নিয়ে। সুন্দর অসুন্দরের খেলা এবং বহুবিধ সুন্দরের খেলা। নজরুলের  ভাষায়- 'স্বর্ণজ্যোতি সুন্দর', 'বিষ সুন্দর', 'সংহার সুন্দর', 'শোক সুন্দর', 'প্রলয় সুন্দর' ইত্যাদি নানাবিধ সুন্দরের খেলা চলছে তা নজরুল দেখতে পেয়েছেন তার সুগভীর অন্তর্দৃষ্টির দৌলতে। - এইমতের একটা বুঝ পাওয়া আছে।

মুরাকামি'র স্মৃতিকথা  'Talk About When I Talk About Running' (ইংরেজি অনুবাদ) থেকে  অংশ বিশেষ পড়া যাক।
"In every interview I’m asked what’s the most important quality a novelist has to have. It’s pretty obvious: talent. Now matter how much enthusiasm and effort you put into writing, if you totally lack literary talent you can forget about being a novelist. This is more of a prerequisite than a necessary quality. If you don’t have any fuel, even the best car won’t run."
বঙ্গানুবাদ-
"একজন উপন্যাসিকের বিশেষ গুণ কি থাকা লাগে, প্রত্যেক আলাপচারিতায় আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়। অবশ্যই প্রতিভা- সহজাত ক্ষমতা। এখন আপনি কতটুকু আগ্রহ এবং প্রচেষ্টা নেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার মোটেই প্রতিভা না থাকে, তাইলে কথাশিল্পী হওয়ার চিন্তা বাদ দেন। এই ব্যাপারটা দরকারি গুণের চেয়েও আবশ্যক, মানে পূর্বাবশ্যক। একটা ভাল গাড়িও দৌড়াবে না যদি আপনার কাছে জ্বালানী না-থাকে।"
এরপর তিনি এই স্মৃতিকথায় বলেছেন লেখককে গভীর মনোনিবেশ (ফোকাস) করতে হয়! এটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দিবসের কয়েক ঘন্টা শুধু মনোযোগ দিয়ে ভাবেন। তখন কিছু দেখেন না, করেন না।। লেখকের সহ্যক্ষমতার কথাও বলেছেন। নিজের সহ্যক্ষমতা বুঝবার জন্যে মুরাকামি নিয়মিত দৌড়েন। বলেন-
"Most of what I know about writing I’ve learned through running every day. These are practical, physical lessons. How much can I push myself? How much rest is appropriate—and how much is too much?"
গল্পে তিনি ব্যাখ্যা করেন না কি ঘটে চলছে। ঘটনার পর ঘটনা আসতে থাকে এবং অবশেষে কোনো উপসংহার নাই। অতৃপ্তি থাকে পাঠকের। সুখ দুখের রস থাকে, যাদুময়তা থাকে, মিস্ট্রিয়াস কোয়েস্ট থাকে। IQ84 এর শুরু এভাবে ইংরেজি অনুবাদে-
"The taxi's radio was tuned to a classical FM broadcast. Janacek's Sinfonietta - probably not the ideal music to hear in a taxi caught in traffic. The middle-aged driver didn't seem to be listening very closely, either. With his mouth clamped shut, he stared straight ahead at the endless line of cars stretching out on the elevated expressway, like a veteran fisherman standing in the bow of his boat, reading the ominous confluence of two currents.".......
টাইম ম্যাগাজিনে IQ84 বইটার  রিভিয়ু লিখেছিলেন ব্রায়ান ওয়ালশ। শুরুতেই লিখেন- "সম্ভবত মুরাকামি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্য লেখক এবং নিরংকুশভাবে এই জনপ্রিয়তার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নাই"। আইকিউএইটিফোর পড়ার একজন পাঠক বলেছিলেন, 'পৃথিবীর অদ্ভুত ব্যাপারগুলো আমি এখন দেখতে পারছি'।

নিজের দেশে মুরাকামি নিজেকে মনে করেন আউটসাইডার। ১৯৮৭ সালে পঞ্চম বই 'নরওয়েজিয়ান উড' দিয়ে জাপান সাহিত্যের মূলধারাকে প্রবল নাড়া দেন। তরুণদের কাছে কাল্ট ক্লাসিক বিবেচিত এই বইটি জাপানে চার মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়। উল্লেখ্য, তিনিই প্রথম জাপানের লেখক, যাকে বিশ্বের পাঠকেরা 'জাপানি লেখক' মনে করে না।

হারুকি কথাশিল্প রচনা করেন অদ্ভুত সুন্দর সহযোগে। বাস্তবের কোলে পরাবাস্তব। দৃশ্যের পর দৃশ্য ফোটান শব্দে শব্দে। মানুষের দায়িত্ব কর্তব্য নির্ধারণ করেন না। কোনো একটা দর্শনের পক্ষে বিচার করে রায় দেন না। মানবজাতি উদ্ধারের পলিটিক্সে ডুব দেন না। জীবন ভিন্ন ভিন্ন, চয়েজ ভিন্ন ভিন্ন, পথও ভিন্ন; দৃশ্যপট, প্রেক্ষাপট, সংস্কৃতিও ভিন্ন ভিন্ন- কখনো এই দিকগুলো দেখান। (উত্তরাধুনিক চিন্তার পথে পথে কোনো দর্শনের আনুগত্যে অবিচল অনড় থাকবার পাঠ নেই বলা হয়।) একটি ঘটনার ভেতরে চুপ মেরে থাকা অন্য সারমর্ম অথবা ঘটনার পাশেই অগোচরে থাকা অর্থ বাইর করে দেখান মুরাকামি।


কেটলি না, কিন্তু কেটলির মতো। মানুষ একজন কেটলির মতো!

হারুকি বলেছেন- 'আমি একটা বড় কেটলির মতো। গরম হ'তে সময় লাগে, হয়ে গেলে আর ঠান্ডা হওয়া নাই যেনো, সারাক্ষণ গরম'।
২০১১ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস-র সাম এ্যান্ডারসনকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন হারুকি মুরাকামি। এই পরাবাস্তবতা, যাদু বাস্তবতার এক আজব কারিগর ভাবেন beyond scientific understanding এবং ভয়ংকর কল্পনাশক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন সাহিত্যকর্মে। কিন্তু এই মানুষটির প্রখর অন্তর্দৃষ্টি তাঁর সৃজনকর্মের মধ্য দিয়ে স্ফুট। পৃথিবীর মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ তার চিন্তা-ভাব-ভাষা পাঠ করে এবং করতে চায়।

নিজের দেশে মুরাকামি নিজেকে মনে করেন আউটসাইডার। ১৯৮৭ সালে পঞ্চম বই 'নরওয়েজিয়ান উড' দিয়ে জাপান সাহিত্যের মূলধারাকে প্রবল নাড়া দেন। তরুণদের কাছে কাল্ট ক্লাসিক বিবেচিত এই বইটি জাপানে চার মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়। উল্লেখ্য, তিনিই প্রথম জাপানের লেখক, যাকে বিশ্বের পাঠকেরা 'জাপানি লেখক' মনে করে না।
২৯ বছর বয়সে বেজবল খেলা দেখতে থাকা অবস্থায় বল আকাশের দিকে উড়ে যাওয়া দেখতে থাকবার সময় an epiphany struck Murakami. কি সে ঘটনা!  যার ব্যাখ্যা মুরাকামির কাছেও নাই। কেবল বলেন- 'Something happened'.
সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি উপন্যাস লিখবেন। দোকানে গিয়ে খাতা কলম কিনে এনে চার মাসে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে লিখেন, হয়ে যায় প্রথম উপন্যাস 'Hear the Wind Sing'। জাপানী ভাষায় বইটির নাম ইংরেজিতে লিখলে হয় এইরূপ- 'Kaze no Uta o Kike'। উপন্যাসটি জমা দেন Gunzo সাহিত্য ম্যাগাজিনে ১৯৭৯ সালে। তখন এই উপন্যাসের নাম ছিল 'হেপি বার্থ ডে এ্যান্ড হোয়াইট ক্রিসমাস'। ১৩০ পৃষ্ঠায় ১৪ টি অধ্যায়ে সাজানো উপন্যাস। এই পরাবাস্তুব উপন্যাসে গল্পের কথক একুশ বছর বয়সের এক যুবক, তার কোনো নাম নাই।
তার উপন্যাস 'কাফকা অন দি শোর' তাকে বিশেষ পরিচয় দিয়েছে। ২০০৩ সালে উপন্যাসটি লেখা শুরু করেছিলেন। প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে লিখতেন পাচ ঘণ্টা ধরে কি-বোর্ডে চেপে। 'কাফকা অন দি শোর' এই রুটিন মোতাবেক লেখা হয়।

খ.

২০১৪ সালের ৯ জুন 'দি নিউইয়র্কার' গ্রীষ্মকালিন ফিকশন প্রকাশ করে হারুকি মুরাকামি'র একটি নতুন ছোট গল্প। শিরোনাম 'ইয়েসটারডে'। গল্পটি উত্তম পুরুষে লেখা। মনে হয় যেনো মুরাকামিরই আত্মকথা। কিন্তু না। তানিমুরা নামের চরিত্রটি আত্মস্মৃতিকথা আকারে বলতে থাকে। গল্পের প্রবেশমুখে সেই বিখ্যাত, মানে, বিংশ শতকের শ্রেষ্ট সংগীত বিবেচিত বিটলস এর 'ইয়েসটারডে' গানটির প্রসঙ্গ। জাপানের কানসাই ডায়ালেক্টে ওই গানটির সুরে নিজস্ব শব্দ প্রয়োগ করে, নিজস্ব সংস্করণ বানিয়ে কিটারু নামের লোকটি গায় বাথরুমে যখন অযথা দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করে। কিটারু সংস্করণে গানের কথাগুলো অর্থহীন।  অর্থহীন শব্দখেলা। ( তানিমুরা বলে-“Those lyrics don’t make any sense,” I told him. “It just sounds like you’re making fun of the song ‘Yesterday.’ ”)
ইংরেজি তর্জমাতে কিটারুর কানসাই সংস্করণের কথাগুলো-
'Yesterday
Is two days before tomorrow,
The day after two days ago.'
বাংলায়-
'গতকাল
আগামীকালের দুইদিন আগের দিন
এই দিন দুই দিন আগের পরের দিন।'
এই গান কিটারু গলা ছেড়ে গায় এবং বাথরুমে দীর্ঘক্ষণ ভেজা থাকে এই কারণে যে, এতে তার মতে- ....all kinds of good ideas come to me.'।
তার মানে, অর্থহীন কর্মের দ্বারা একটা অর্থ পাওয়া।

তানিমুরা কানসাইয়ের বাসিন্দা ছিল। স্কুল গ্রাজুয়েট হওয়া পর্যন্ত শুধু কানসাই ডায়ালেক্টে কথা বলতো। পরে টোকিওর বাসিন্দা হয়ে টোকিওর ভাষা এতোটাই আয়ত্বে এনেছে যে কেউ বিশ্বাস করে না আর সে-যে কানসাইর মানুষ। কিটারুও আসলে কানসাইয়ের বাসিন্দা না। সে খুব মনোযোগে কানসাই ডায়ালেক্ট ভালোভাবে শিখেছে। তার আসল ঠিকানা ডেনএনচোফু, টোকিও। কিটারু দুইবারেও এ্যান্ট্রান্স পাশ করতে পারে নি। স্কুলের পড়া পড়তো না। পড়তো বেশি আউট বই। অদ্ভুত ধরণের চিন্তা করে। তার অন্তর্জ্ঞান বা সহজজ্ঞান দুর্দান্ত।
গল্পটির মাঝামাঝি একটা উল্লেখযোগ্য আলোকপাত-
“So you’re saying that things being smooth and comfortable is a problem. Is that it?” কিটারুর জবাব 'ইয়াহ'।
জীবনে এমনও হয়। তানিমুরার মনে পড়ে-
কিটারু তার বান্ধবীর সাথে যেতে বলেছে তানিমুরাকে। যে-বান্ধবীর সাথে স্বাভাবিক   প্রায় যৌনসংসর্গহীন লিভটুগেদার করছে। তানিমুরা সে-প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হয় নি। বলেছে- “But why would I go out with your girlfriend? It doesn’t make sense.”। পরে শুধু বেড়াতে এবং সিনেমা দেখতে যায়। ফিরবার পর কিটারু জানতে চায় তানিমুরার কাছে তারা চুমু দিয়েছিল কি-না।
তাদের কথা-
“You kiss her?” - তুমি তাকে চুমু দিয়েছ?
“No way,” I said. - কোনোভাবেই না, আমি বললাম।
“Don’t worry—I’m not gonna freak if you did,” he said. - সে বলে, ব্যাপার না, তুমি চুমু দিয়ে থাকলে আমার মাথা খারাপ হবে না।
“I didn’t do anything like that.”- আমি অমন কিছু করি নাই ।
“Didn’t hold her hand?” -  ওর হাত ধরো নাই?
“No, I didn’t hold her hand.” - না আমি ওর হাত ধরি নাই।
“So what’d you do?” - তাইলে কি করেছো?
“We went to see a movie, took a walk, had dinner, and talked,” I said. - আমি বলি, আমরা ছবি দেখতে গিয়েছিলাম, কিছুক্ষণ হাটি, রাতের খাবার খাই এবং কথা বলি।
গল্পের মাঝামাঝি এসে তিনটি চরিত্র- কিটারু, তানিমুরা আর কিটারুর বান্ধবী এরিকা, এই তিনজনের পারস্পরিক বোঝাপড়া, না-পাওয়ার বেদনা এবং বিশেষত নারী পুরুষের যৌনতাড়নাকে ছাড়িয়ে ভালোবাসাবোধের অনবদ্য একটা পাঠ উজ্জ্বলতর হয়। নারী পুরুষের স্বাভাবিক যৌন আবেদনের ব্যাপারটা তারা কথা বলার সময় স্বীকার করলেও তানিমুরা আর এরিকা সচেতনভাবেই শরীরের বাসনাকে পাশ কেটে যায়।

তানিমুরা স্মরণ করে- তাদের বয়স তখন বিশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিটারু আর তানিমুরার জন্মদিনও। পার্টটাইম কাজ করতো তারা একটা কফিশপে ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটির মেইনগেইটের কাছে। কিটারু ছিল ওয়েটার আর তানিমুরা কিচেনে। মাত্র কয়েক মাসের বন্ধুত্ব। এরিমধ্যে কতোশতো ডালপালা গজিয়েছে সম্পর্কের। কিটারু ভালোবাসে তার বান্ধবী এরিকাকে কিন্তু ওর সাথে শুইতে তার মন আগ্রহী হয় না।  তাদের মধ্যে শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে কি-না রহস্যাবৃত থাকে গল্পে।  সে সক্ষম তবু কেন ওর সাথে যৌনসংসর্গ পেতে চায় না, এর পরিস্কার কারণ সে বলতে পারে না। এ ব্যাপারে তানিমুরাকে কিটারু বলেছিল- ...just thinking about doing it with her—I dunno—it just seems wrong. You know?”। এরিকা দেখা যায় মনেপ্রাণে ভালবাসে কিটারুকে। আদর করে ডাকে আকি-কুন। তবু বিচ্ছেদ আসে। এই বিরহ বলা যায় স্বেচ্ছায় মেনে নেয়। কারণ, টোকিও-র তরুণ কিটারু সারাক্ষণ কানসাই ডায়ালেক্টে কথা বলে- এটা তার ভাল লাগে না। অন্য আরেকটা কারণ কিটারুর চিন্তার ধরন অদ্ভুত।
একেএকে তিনজনই যার যার পথে চলে যায় কয়েক মাসের ব্যবধানে।
ষোল বছর পর আকাসাকা হোটেল পার্টিতে তানিমুরা আর এরিকা পরস্পরকে দেখামাত্র চিনে ফেলে। এরিকা সেই আগের মতই সুন্দর প্রাণবন্ত। তানিমুরার মন ভিজে ওঠে এরিকাকে দেখে। তারা পথ চলতে চলতে কথা বলে। তানিমুরা সাতাশ বছর বয়সে বিয়ে করে, তবে সন্তান হয় নি। কলেজ পাশ করার পর পেশাদার লেখক হয়।

কিটারু লাপাত্তা। কেউ জানে না কোথায়। কয়েকবার পোস্টকার্ড পাঠিয়েছে এরিকার কাছে তার ঠিকানা না-জানিয়ে। কথা বলতে বলতে কিটারুকে স্মরণ করে অশ্রুভেজা হয় এরিকা।
এরিকা আর তানিমুরা সেই-যে প্রথম বেড়াতে বের হযেছিল, একটি স্বপ্নের কথা বলেছিল এরিকা। বলেছিল, কিটারুর সাথে সমুদ্রপথে বড় একটা জাহাজে করে যাচ্ছে কোথাও, শেষ রাতে দেখছে জাহাজের ছোট জানালা দিয়ে দূরে একটা বরফ নির্মিত স্বচ্ছ চন্দ্র অর্ধেক ডুবে আছে। সকালে সূর্য উঠার পর সেটা গলে সমুদ্রে মিশে যায়।

গল্পটির শেষে এই স্বপ্নে আচ্ছন্ন থাকে তানিমুরা। স্বপ্নটি আর এরিকার থাকে না। তানিমুরা বলে- “Dreams are the kind of things you can borrow and lend out"। এবং বিটলস এর 'ইয়েসটারডে' সংগীতটি শুনতে শুনতে তানিমুরার মনে পড়ে কিটারুর অর্থহীন 'ইয়েসটারডে' এবং সমুদয় স্মৃতি আর তার মনে হতে থাকে এসবই যেনো গতকালের ঘটনা।


প্রাসঙ্গিক লেখা