খাওয়ার উপযোগী জীব-জন্তু ও প্রাণী (প্রথম পর্ব)


মানুষের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদার মধ্যে একটি হলো খাদ্য। টিকে থাকার পরিস্থিতি বিবেচনায় সবার আগে খাদ্যের চিন্তাই আমাদের মাথায় আসে। এমনকি পানি, যা শরীরের কার্যকলাপ বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেই পানির চাইতেও খাবারের কথা আমরা বেশি চিন্তা করি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে বেঁচে থাকার প্রধান তিনটি অনুষঙ্গ পানি, খাদ্য এবং আশ্রয়ের পর্যায়ক্রমিক গুরুত্ব এবং অবস্থান আমাদের ঠিক করতে হবে আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে, এবং এই অনুমান করার ক্ষমতা হতে হবে যথার্থ। আমরা খাবার ছাড়া এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারলেও নিরাপদ খাদ্য নির্বাচন এবং প্রাণীজ খাদ্য সংগ্রহের জন্য কিভাবে ফাঁদ পাতা যায় তা ভাবতে ভাবতেও বেশ কিছু দিন সময় এমনকি সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। অতএব, বেঁচে থাকার তাগিদে সারভাইভাল পরিস্থিতির প্রাথমিক পর্যায় থেকেই খাদ্য সংগ্রহ শুরু করতে হবে, কেননা দিনকে দিন আপনার শক্তি ও সহনশীলতা কমবে বৈ বাড়বে না। 

খাদ্য হিসেবে প্রাণী

যতক্ষণ না আপনি বড় কোন প্রাণী শিকারের সুযোগ পাচ্ছেন, ছোট প্রাণীদের উপর মনোনিবেশ করুন। এরা সংখ্যায় প্রচুর এবং খাদ্য হিসেবে সহজে প্রস্তুত যোগ্য। প্রাণীকুলের সমস্ত প্রজাতি খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই, খুব কম সংখ্যক প্রাণীই বিষাক্ত এবং এরা ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ। তবে বিভিন্ন শ্রেণীর পশুদের অভ্যাস এবং আচরণগত নিদর্শন বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনাকে বুঝতে হবে কোন প্রাণীগুলোকে ফাঁদ পেতে ধরা বুদ্ধিমানের কাজ, কোন প্রাণী নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে বসবাস করে, কোন প্রাণীদের খাবার খাওয়া এবং খোঁজার জন্য সীমাবদ্ধ অঞ্চল আছে এবং কারা খাবারের খোঁজে একটি অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয়। বড়, হংসী প্রাণী যেমন এল্ক (Elk) বা ক্যারিবু (caribou) জাতের হরিণ বিস্তৃত এলাকায় ঘোরাফেরা করে এবং সহজে ফাঁদে আটকায় না। এছাড়াও যথাযথ টোপ ফেলার জন্য আপনাকে একটি প্রজাতির খাবারের ধরন সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।

কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আপনি প্রায় সব ধরনের প্রাণী, যেগুলো সাঁতার কাটে, হাটে বা উড়ে বেড়ায় সেগুলো খেতে পারেন। সবার আগে আপনাকে খাদ্য উৎসের উপর থেকে বিতৃষ্ণা দূর করতে হবে। টিকে থাকার তাগিদে এবং শরীরের পুষ্টির জন্য যেকোনো মূল্যেই হোক আপনাকে খেতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে বিমুখ হয়ে যিনি এসব খাবার উপেক্ষা করবেন অথবা অরুচিকর মনে করে সরিয়ে রাখবেন তিনি নিজ হাতে নিজের বেঁচে থাকার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিলেন। শুরুতে কাজটা কঠিন মনে হলেও স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য যা হাতের কাছে পাওয়া যায় তাই আপনার খাওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে প্রাণী ও কীটপতঙ্গ কাঁচা খেতে হতে পারে, তবে অসুস্থতা রোধ করার জন্য যতটা সম্ভব খাদ্য রান্না করে খাওয়া ভালো।

পোকামাকড় (Insects)

পৃথিবীতে সংখ্যায় বেশি এবং সহজ প্রাপ্য জীব হল পোকামাকড়। গো মাংস থেকে আমরা ২০ শতাংশ প্রোটিন পাই, অপরদিকে এমন অনেক পোকামাকড় আছে যেগুলো ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে। মূলত এই ফ্যাক্টরটি পোকামাকড়কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে, যদিওবা এরা রুচিকর কোন খাবারের উৎস নয়। তবে সে সমস্ত পোকামাকড় এড়িয়ে চলা ভালো যেগুলো হুল ফুটায়, কামড়ে দেয়, লোমযুক্ত বা উজ্জ্বল রঙের। শুয়ো পোকা অথবা তীব্র গন্ধযুক্ত অন্যান্য পোকামাকড়ও এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া মাকড়সা এবং অন্যান্য যেসব কীটপতঙ্গ রোগের বাহক যেমন মশা, মাছি ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা। 

বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ যেমন পিঁপড়া, উইপোকা, গুবরেপোকা, শুঁয়োপোকা অথবা বিভিন্ন পোকার লার্ভা খোঁজার জন্য চমৎকার জায়গা হল মাটির উপর থাকা পচনশীল গুড়ি। মাটি অথবা পোকামাকড়ের ঘাঁটিগুলো কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা। ঘাসযুক্ত এলাকা পোকা অনুসন্ধানের জন্য ভাল জায়গা, কারণ সবুজ ঘাসে পোকামাকড় সহজেই চোখে পড়ে। মাটিতে পড়ে থাকা পাথর, পাটাতন অথবা অন্যান্য উপকরণ কীটপতঙ্গের একটি ভালো আবাস হতে পারে, সুতরাং এগুলোকেও বাদ দেয়া যাবেনা। পোকার লার্ভাও কিন্তু খাওয়ার যোগ্য। যেসব কীটপতঙ্গের বাইরের অংশে শক্ত আবরণ থাকে যেমন শুঁয়োপোকা, ফড়িং, এদের পরজীবী থাকতে পারে তাই খাওয়ার আগে এগুলো রান্না করে নেয়া ভালো এবং অবশ্যই রান্নার আগে পাখা এবং পা ফেলে দিতে হবে। আপনি নরম আবরণযুক্ত পোকা কাঁচা খেতে পারেন, প্রজাতিভেদে এদের স্বাদ ভিন্ন হয়। শূককীটগুলি নমনীয়, তবে কিছু প্রজাতির পিঁপড়া তাদের দেহে মধু সঞ্চয় করে রাখে যা এদের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় বহুলাংশে। আপনি চাইলে যে কোন পোকার পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন তারপর তা ভোজ্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দিতে পারেন বহুগুণে।

ওয়র্ম বা কীট (Worms)

ওয়র্ম (Annelidea) প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। স্যাঁতস্যাঁতে, জীবদেহ মিশে যাওয়া মাটি, পচে যাওয়া মূল বা ঘাস কিংবা বৃষ্টির পর ভেজা মাটিতে এদের খুঁজে পাওয়া সহজ। সংগ্রহ করার পর প্রায় ১৫ মিনিট এদের পরিষ্কার, পানযোগ্য পানিতে রেখে দিন। এরপর ওয়র্ম স্বাভাবিকভাবেই পরিষ্কার হয়ে গেলে আপনি এদের কাঁচা খেতে পারেন।

খোলসযুক্ত প্রাণী (Crustacean)

মিঠা পানির চিংড়ির সাইজ সাধারণত .২৫ সেন্টিমিটার (১/১৬ ইঞ্চি) থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার (১ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। তারা ভাসমান শ্যাওলার চারিধারে অথবা পুকুরের কাদামাটির নিচে এবং হ্রদে বিস্তৃত আবাস তৈরি করে। 

বাগদাচিংড়ি, ঠিক যেন সামুদ্রিক গলদা চিংড়ি এবং কাঁকড়ার অনুরূপ। বাইরের শক্ত আবরণ এবং পাঁচ জোড়া পা দেখে খুব সহজে এদের চিনতে পারবেন কেননা এদের সামনের পা জোড়ার সাড়াশি বেশ বড়। বাগদাচিংড়ি রাতে বেশি সচল থাকলেও পানির প্রবাহের নিচে, পাথরের আশে পাশে খোঁজ করলে দিনের বেলায় এদের সনাক্ত করা সম্ভব। বায়ু প্রবাহের জন্য মাটিতে চিমনির মতো ছোট ছোট ছিদ্র করে নরম কাদা মাটিতেও এদের বসবাস করতে দেখা যায়। এই ছিদ্রগুলোতে খোঁজ করেও এদের পেতে পারেন। সুতোর মাথায় আবর্জনা বা মাছের খাদ্য বেঁধে টোপ ফেলে এদের ধরা যায়, তবে চিংড়ি ফাঁদে ধরা দেবার সাথে সাথেই সুতো টেনে তীরে আনতে হবে নতুবা ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

আপনি সমুদ্রের প্রান্তদেশ থেকে ১০ মিটার(৩৩ ফুট)গভীর পানি পর্যন্ত লোনা পানির গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া এবং চিংড়ি খুঁজে পেতে পারেন। চিংড়ি রাতে আলোতে আকৃষ্ট হয় বলে আলো জ্বেলে তীরের কাছাকাছি এনে আপনি জাল দিয়ে তাদের ধরতে পারেন। প্রলুব্ধ কারী ফাঁদ বা বড়শি ফেলেও এদের ধরতে পারেন। এরা সমুদ্র ফেনার তীরবর্তী জায়গায় ঘুরাফেরা করে, যেখানে আপনি সহজেই ফাঁদ পাততে পারবেন। তবে এরা নিশাচর এবং এদের ধরার জন্য রাত হল উপযুক্ত সময়।

বিঃদ্রঃ মিঠা পানির যে কোন মাছ, কাঁকড়া জাতীয় (crustaceans) এবং শামুক জাতীয় (mollusks) প্রাণী রান্না করে খেতে হবে, কেননা নদী নালা বা পুকুরের পানিতে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, জীবজন্তু বা মনুষ্য বর্জ্য, এমনকি রাসায়নিক সার বা বিভিন্ন কল কারখানার দূষিত পদার্থ থাকতে পারে। 

মলাস্কা (Mollusca)

অক্টোপাস, মিঠা এবং লোনা পানির খোলসযুক্ত প্রাণী যেমন শামুক, ঝিনুক, গুগলি-শামুক ইত্যাদি এই পর্বের অন্তর্গত। আমাদের মিঠাপানির বা স্থলজ ঝিনুকের মতো দেখতে দুই পাটি বিশিষ্ট ঝিনুক এবং জলজ শামুক পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের জলাশয়ে খুঁজে পাবেন। 

নদী, জলপ্রপাত এবং উত্তর মেরুর কাছাকাছি তুন্দ্রা অঞ্চলের (আলাস্কা) সরলরৈখিক বনভূমির (গাছগুলো সরল রেখার মতো এবং ডালপালা কম থাকে বলে এমন নামকরণ) হ্রদে প্রচুর পরিমাণে জলজ শামুক এবং ঝিনুক পাওয়া যায়। এরা আকৃতিতে পেন্সিলের মতো যেমন হতে পারে তেমনি গোলাকারও হতে পারে।
নদী নালার পানিতে শামুক খুঁজার উপযুক্ত জায়গা হল অগভীর, বালুপূর্ন অথবা কাদাযুক্ত এলাকা। অনুসরণ করতে পারেন কাদা মাটিতে রেখে যাওয়া পদচারণার সঙ্কীর্ণ ছাপ অথবা এদের মুখগহ্বর থেকে নিঃসৃত গাঢ় রঙের রাসায়নিক তরলের রেখা। 
জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরবর্তী ভেজা বালিতে নজর রাখুন, কারণ সামুদ্রিক পাথর অথবা গভীর পানিতে বিস্তৃত প্রবাল সংলগ্ন শামুক জোয়ারের স্রোতে তীরে উঠে আসে। বড় শামুকগুলো, যাদের কে কাইটন (chiton) বলা হয় তারা পাথরের গায়ে জোরালো ভেবে লেগে থাকে।
ঝিনুক সচরাচর ঘন উপনিবেশ তৈরি করে পাথর, নুড়ি বা গাছের গুড়ির কাছাকাছি এলাকায়।

সতর্কতাঃ গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় গরমকালে শামুক হতে পারে বিষাক্ত। যদি কোন এলাকায় উল্লেখযোগ্য লাল জোয়ার (Red Tide, সামুদ্রিক শ্যাওলা এবং প্লাঙ্কটনের পরিমাণের অস্বাভাবিক হ্রাস বৃদ্ধির কারণে জলাশয়ের পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়াকে রেড টাইড লাল জোয়ার বলে; পানির রঙ এ সময় সাধারণত লাল বা ধূসর রঙের হয়ে উঠে) হয়ে থাকে তবে ৭২ ঘণ্টা অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত ওই পানির উৎস থেকে কোন মাছ বা শামুক ঝিনুক খাওয়া উচিত নয়। 

ঝিনুক ভাপ দিয়ে, সিদ্ধ করে অথবা সেঁকে খেতে পারেন। শাক সবজি বা লতা পাতার সাথে এর সমন্বয়ে অসাধারণ স্বাদ পাবেন। 

সতর্কতাঃ সেই শামুক খাওয়া উচিত না যা তীব্র জোয়ারের সময়ও পানি দিয়ে আচ্ছাদিত থাকেনা।

মাছ (Fish)

মাছ প্রোটিন এবং চর্বির একটি চমৎকার উৎস। সার্ভাইভারদের জন্য মাছ কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকে। এরা সাধারণত স্তন্যপায়ী বা বন্য জীবের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে বিরাজমান এবং এদের ধরা খুব সহজ। মাছ ধরার ক্ষেত্রে সফল হতে হলে আপনাকে তাদের অভ্যাসগুলি অবশ্যই জানতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ঝড়ের আগে মাছ প্রচুর পরিমাণে খেতে থাকে। ঝড়ের পর কাদা মাখা পানি থাকা অবস্থায় এরা খেতে পছন্দ করে না। রাতের অন্ধকারে এরা আলো দেখলে আকৃষ্ট হয়। যখন স্রোতের প্রবাহ বেশি থাকে, এরা ঘূর্ণিজলের কাছাকাছি, যেমন; পাথরের কাছে কোন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে থাকে। তারা সেসব জায়গাতেও একত্রিত হয় যেখানে জলের গভীরতা বেশি, আছে নিমজ্জিত গাছ, গাছের গুড়ি অথবা এমন যেকোনো কিছু যা তাদের আশ্রয় উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। 

মিঠা পানিতে কোন বিষাক্ত মাছ না থাকলেও কমন বারবেল (common barbel) নামক এক প্রকার মাছের ডিম বিষাক্ত হয়ে থাকে। মাগুরমাছ প্রজাতির পৃষ্ঠদেশে কিছু তীক্ষ্ণ, ধারালো কাঁটা থাকে, এই কাঁটার আঘাত কোথাও লাগলে সেই জায়গায় ব্যথা বা যন্ত্রণা করবে এবং এটা খুব সহজেই ইনফেকশন তৈরি করতে পারে।

পরজীবী দূর করতে মাছ রান্না করে খাওয়া ভালো। সতর্কতা হিসেবে লোনা পানির মাছ যেগুলো খাঁড়ির মধ্য থেকে ধরা হয় সেগুলোও রান্না করে খেতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ কাঁচা খেতে পারেন কারণ সমুদ্রের লবনাক্ততার কারণে সামুদ্রিক মাছে পরজীবী থাকেনা।

অধিকাংশ মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য। কিছু প্রজাতির মাছ মানুষের জন্য ক্ষতিকারক; তবে অন্যান্য প্রজাতির মাছও বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে তাদের গ্রহণ করা খাদ্য উপাদানের জন্য। যেমন; সিগুয়েটেরা (ciguatera) একধরনের বিষক্রিয়া-জনিত অবস্থা যা হয়ে থাকে মূলত প্রায়-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার কারণে। এইসব মাছ তাদের খাদ্য উপাদানের সাথে প্রাকৃতিক-ভাবে সৃষ্ট কিছু বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ করে যা তাদের শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে জমা হয়। বিষাক্ত পদার্থগুলি বিভিন্ন প্রজাতির শ্যাওলা থেকে উৎপন্ন হয় এবং এই শ্যাওলা গুলো জন্মে থাকে মূলত নিম্ন অক্ষাংশের (শূন্য থেকে ত্রিশ ডিগ্রী অক্ষাংশ পর্যন্ত অঞ্চল সমূহ নিম্ন অক্ষাংশের অন্তর্ভুক্ত) সমুদ্র সীমায়। আপনি এই মাছ রান্না করা, শুকিয়ে ফেলা বা মেরিনেট করে রাখা - যাই করেন না কেন; বিষাক্ত পদার্থ দূর করা যাবেনা। বিষক্রিয়া হতে পারে এমন সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে বারকোডাস, জ্যাকস, ম্যাকেরল, ট্রিগারফিশ, স্ন্যাপ্পার এবং গ্রুপারস। এছাড়াও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার পানিতে অন্যান্য প্রজাতির মাছও তাদের শরীরে সিগুয়েটেরা টক্সিন ধারণ করতে পারে। মাছের বিষক্রিয়া জনিত এই ব্যাপারটি পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত। কোন নির্দিষ্ট প্রজাতি বা জলাশয়ের কোন নির্দিষ্ট স্থানের সব মাছ বিষাক্ত হতে পারে না। ফ্লোরিডা এবং পূর্ব উপকূলের আশেপাশে লাল স্ন্যাপার এবং গ্রুপার জনপ্রিয় মাছ। রেস্টুরেন্ট অথবা জেলেদের প্রিয়; মাছের বাজারে পছন্দের শীর্ষ তালিকায় থাকা সত্ত্বেও ১৯৮৮ এর মে মাসে ফ্লোরিডার পাম বিচ এলাকায় ১০০টি বিষক্রিয়াজনিত ঘটনার সাথে এই মাছের নাম যুক্ত হয়। শুকনো টর্টুগা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে বিষাক্ত মাছ, যেমন; হগফিশ, গ্রুপার, লাল স্ন্যাপার,বারকুডা ইত্যাদি ধরা এবং খাওয়ার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১৯৮১ এর এপ্রিল ও জুনের মধ্যবর্তী সময়ে পুয়ের্তোরিকোতে সিগুয়েটেরা বিষক্রিয়ার বিশেষ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় যার ফলে বারকুডা, আম্বারজ্যাক এবং ব্ল্যাকজ্যাক বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিষাক্ত সামুদ্রিক মাছের অন্যান্য উদাহরণ হল শজারু মাছ, কাঁটা মাছ, পটকা মাছ ইত্যাদি।

উভচর প্রাণী (Amphibian)

ব্যাঙ সহজেই নদী-নালার পানির আশেপাশে পাওয়া যায়। ব্যাঙ কদাচিৎ জলের কিনারার নিরাপদ আশ্রয় থেকে দূরে সরে যায়। বিপদের আশঙ্কা করলে প্রথমে তারা পানিতে ডুব দেয় এবং মাটি বা আবর্জনার স্তূপের নিচে চলে যায়। ব্যাঙের ত্বক মসৃণ এবং আর্দ্র হয়। কিছু বিষাক্ত প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। যেকোনো উজ্জ্বল রঙের ব্যাঙ বা যাদের পিছনে একটি আলাদা "এক্স" চিহ্ন আছে, এমনকি যেকোনো গেছো ব্যাঙ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। বড় ব্যাঙের সঙ্গে বাচ্চা ব্যাঙ(টোড) গুলিয়ে ফেলবেন না। আপনি ছোটো ব্যাঙ চিনতে পারবেন এদের শুকনো এবং অমসৃণ ত্বক দেখে। শুকনো আবহাওয়ায় এদের মাঠে ঘাটে খুঁজে পেতে পারেন। আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু প্রজাতির ব্যাঙ তাদের ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে। অতএব বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে এদের ধরা বা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

বাকী অংশ পরবর্তী পর্বে...
* লেখাটি সার্ভাইভাল গাইড ফিচারের অন্তর্ভূক্ত।


প্রাসঙ্গিক লেখা